বছরের পর বছর একই পদে, পদোন্নতি পেলেও বাড়ছে না বেতন

ছবি- সংগৃহীত।

কনস্টেবল থেকে এটিএসআই (সহকারী টাউন সাব ইন্সপেক্টর) পদে পদোন্নতি পেয়েছি ২০০০ সালে। ২০১০ থেকে চারবার টিএসআই (টাউন সাব ইন্সপেক্টর) পদে পদোন্নতির জন্য পরীক্ষা দিই। প্রত্যেকবার পরীক্ষায় পাশ করি। কিন্তু পদ খালি না থাকায় আমার পদোন্নতি হয়নি। তাই একই পদে ১৭ বছর দায়িত্ব পালন করছি। কাজ করছি রাজধানীর ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে। এখন পদোন্নতির আশা ছেড়ে দিয়েছি। কারণ, অবসরের সময় ঘনিয়ে আসছে। কিছুদিনের মধ্যেই অবসরে চলে যাব।’ মনঃকষ্ট নিয়ে হতাশার কথা জানালেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এটিএসআই।

কেবল ওই টিএসআই একা নন, তার মতো অনেকেই ১০ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত একই পদে (এটিএসআই) পদে কাজ করছেন। ওই এটিএসআই জানান, শুধু পদোন্নতির ক্ষেত্রেই নয়; নানাভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। বছরের পর বছর অনেকেই একই পদে চাকরি করছেন। আবার পদোন্নতি পেলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে গ্রেডের পরিবর্তন হচ্ছে না।

আরো পড়ুন :

> বিদেশে ভালো চাকরির লোভ দেখিয়ে চলতো অনৈতিক কাজ
> শ্যালিকাকে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে ২ শিশুকে কুপিয়ে হত্যা

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এসআই (সাব ইন্সপেক্টর), এএসআই (সহকারী সাব ইন্সপেক্টর) ও কনস্টেবলরা ঝুঁকিভাতা পান। তারা পুলিশ পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পেলে এ ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে পদোন্নতির পর তাদের বেতন অনেকাংশে কমে যায়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ডিএমপি সদর দপ্তরে কর্মরত একজন এসআই বলেন, প্রায় ১০ বছর ধরে এ পদে কর্মরত। আমরা দশম গ্রেডের কর্মকর্তা হিসাবে চাকরিতে যোগদান করি। ইনক্রিমেন্ট হতে হতে আমরা এখন সপ্তম গ্রেডের কর্মকর্তাদের সমান বেতন পাই। কিন্তু যখন পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পাব, আমাদের গ্রেড হবে নবম। পদোন্নতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঝুঁকিভাতা বন্ধ হয়ে যাবে। তখন অটোমেটিক্যাললি আমাদের বেতন প্রত্যাশার চেয়ে কমে যাবে।

পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তারা জানান, আমরা নবম গ্রেডের কর্মকর্তা। সরকারি অন্য চাকরিজীবীরা এই গ্রেড থেকে পদোন্নতি পেলে তাদের গ্রেড পরিবর্তন হয়ে ষষ্ঠ হয়। অথচ আমাদের এএসপি পদে পদোন্নতি হলে গ্রেডের কোনো পরিবর্তন হয় না। কারণ, এএসপিরাও নবম গ্রেডের কর্মকর্তা। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, কোনো কর্মকর্তা একই পদে ১০ বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় কর্মরত থাকলে তার গ্রেড পরিবর্তন হয়। কিন্তু পুলিশের ক্ষেত্রে সাধারণত তা হয় না। গ্রেড পরির্তন করতে হলে আবেদনের পাশাপাশি ব্যাপক তদবির করতে হয়। তারা জানান, পরিদর্শক থেকে এএসপি হিসাবে পদোন্নতি পাওয়া দুরূহ ব্যাপার। তাদের জন্য ৩৩ ভাগ কোটা থাকলেও তা কখনো পূর্ণ করা হয় না। পুলিশ পরিদর্শকদের অভিযোগ, একেকটি সার্কুলারে সরাসরি এএসপি পদে ২০০-২৫০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু পরিদর্শক থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি হয় খুবই নগণ্য, যা ১-২ ভাগের বেশি হয় না।

বঞ্চিত পুলিশ কর্মকর্তাদের একজন পুলিশ পরিদর্শক আবদুর রউফ মন্ডল। সম্প্রতি পুলিশের আইজির (মহাপরিদর্শক) কাছে দেওয়া এক আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, গত বছর ৬ এপ্রিল বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে বিশেষ কল্যাণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় প্রস্তাব করি, পুলিশ পরিদর্শকরা নবম গ্রেড থেকে পদোন্নতি পাওয়ার পরও নবম গ্রেডে থেকে যাচ্ছেন। অথচ বিধি অনুযায়ী পদোন্নতির পর তাদের ষষ্ঠ গ্রেডে যাওয়ার কথা। কল্যাণ শাখার সভাপতি বিভিন্ন অফিসের কাগজপত্র সংগ্রহ করে পুলিশ সদর দপ্তরে অবেদন করতে বলেন।

আইজিপির কাছে দেওয়া আবেদনে আব্দুর রউফ মন্ডল বলেন, পুলিশ পরিদর্শক ছিল দ্বিতীয় শ্রেণির পদ। ২০১২ সালে সরকার এটিকে প্রথম শ্রেণির নন-ক্যাডার পদে উন্নীত করে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে কর্মরত নন-ক্যাডার (নবম গ্রেড) কর্মকর্তারা ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি পান। কিন্তু পুলিশের ক্ষেত্রে নবম গ্রেডের কর্মকর্তারা পদোন্নতির পরও নবম গ্রেডে থেকে যান। উদাহরণ হিসাবে ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়রি ৩৫ পুলিশ পরিদর্শকের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন সংযুক্ত করা হয় আবেদনে। এছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের নবম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতিসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন তুলে ধরা হয়। বলা হয়, পুলিশ পরিদর্শকদের নবম গ্রেড থেকে নবম গ্রেডে পদোন্নতি দেওয়ায় তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অন্যান্য মন্ত্রণালয় বা বিভাগের নন-ক্যাডার কর্মকর্তার তুলনায় বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (এরই মধ্যে মৌলভীবাজারের এসপি হিসেবে যোগদান করেছেন) মনজুর হোসেন বলেন, নিচের পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের বঞ্চিত থাকার বিষয়গুলো পুলিশ সদর দপ্তর অবগত আছে। এগুলো সমাধানের লক্ষ্যে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত একাধিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই এসব সমস্যার সমাধান হবে।
সূত্র ; দৈনিক যুগান্তর

আগস্ট ০৪, ২০২৩ at ১৬:২৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দৈযু/ইর