অপরিকল্পিতভাবে সেতু নির্মাণ করায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এলাকাবাসী

নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলাধীন নেত্রকোনা-বারহাট্টা সংযোগ সড়কে সাহতা ইউনিয়নের ধনাই নদের উপর অপরিকল্পিতভাবে সেতু নির্মাণ করায় সেটি এখন এলাকাবাসীর চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে কম উচ্চতায় সেতুটি নির্মাণ করায় বর্ষাকালে গার্ডারের নিচ পর্যন্ত পানি ছুঁয়ে যায়। ফলে ব্যাহত হচ্ছে নৌচলাচল। এ বছর জুন মাসে বর্ষার শুরুতে বালুবাহী ট্রলারের ধাক্কায় সেতুর গার্ডার ও তিনটি পিলার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেতুর ওপর দিয়ে ভারী যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ছোট যানবাহনও ঝুঁকি নিয়ে সেতু পারাপার হচ্ছে।

আরো পড়ুন:

> রাঙ্গুনিয়ার সাবেক চেয়ারম্যান শাহ আলম তালুকদারের মৃত্যুতে তথ্যমন্ত্রীর শোক
> জাল জন্ম নিবন্ধনকারী প্রতারক ২রোহিঙ্গা নারীসহ আটক

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নেত্রকোনা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বারহাট্টা উপজেলার সাহতা বাজারসংলগ্ন ধনাই নদের ওপর সেতু নির্মাণের জন্য ২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় এলজিইডি। (৯০ মিটার) দৈর্ঘ্য ও (৩.৭ মিটার) প্রস্থ হিসাবে সেতুটি নির্মাণের জন্য ২০১১ সালের আগস্ট মাসে এনটিটি-এমএআর (জেবি) নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়।

তারা আরও জানান, নির্মাণের সময়কাল দেড় বছর ধরা থাকলেও ২০১৪ সালের জুনে সেতুর কাজ শেষ হয়। পরে তা চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু সেতুটি নিচু হওয়ায় নৌচলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়। গত জুলাই মাসে বর্ষার শুরুতে পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় একটি বালুবাহী ট্রলারের ধাক্কায় সেতুর গার্ডার ও তিনটি পিলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ সেতুকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। এরপর থেকে সেতুর ওপর দিয়েও ভারী যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়।

ভারী যান চলাচল নিষিদ্ধ করার পর থেকে সেতুর ওপর দিয়ে ট্রাক, লরি, কাভার্ড ভ্যান যাতে চলাচল করতে না পারে, সেজন্য ইটের গাঁথুনি দিয়ে পথরোধ করা হয়। বর্তমানে সেতুর ওপর দিয়ে শুধুমাত্র সিএনজি, ইজিবাইক, রিকশা ও মোটর সাইকেল চলাচলা করছে।

সাহতা গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, সঠিক উচ্চতায় সেতুটি নির্মাণ করা হয়নি। নির্মাণের সময় এলাকার লোকজন সেতুটি আরেকটু উঁচু করে নির্মাণের দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু এলজিইডি কর্তৃপক্ষ সেটা উপেক্ষা করে সেতু নির্মাণ করায় এখন আমাদের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এছাড়াও সেতু নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে আট বছর যেতে না যেতেই সেতুর কয়েকটি পিলার ভেঙে অকেজো হয়ে পড়েছে। সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ করে যারা ভুল নকশায় সেতু নির্মাণ করেছে, তাদের শাস্তি হওয়া দরকার। প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি এখন সড়ক ও নদীপথ দুটিই অচল। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাই।

সাহতা বাজারের ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘নেত্রকোনা ইসলামপুর মোড় থেকে সরাসরি বারহাট্টা যাতায়াতের জন্য সাহতা ধনাই নদের উপর সেতু নির্মাণ আমাদের প্রাণের দাবি ছিল। কিন্তু ভুল নকশায় নিচু সেতু নির্মাণ করায় এখন আমাদের মতো ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে। সেতু নির্মাণের শুরু থেকেই আমরা উচ্চতা বাড়িয়ে সেতু নির্মাণের দাবিতে তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি দিলেও এলজিইডি কর্তৃপক্ষ তা মানেননি।’

তখন তারা বলেছিলেন, পানির স্তর বাড়লেও নৌচলাচলে সমস্যা হবে না। কিন্তু এখন সামান্য পানি বাড়লেই ব্রিজ ছুঁয়ে যায়। ট্রলারসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

নেত্রকোনা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুর রহিম শেখ বলেন, সাহতা ধনাই নদের উপর নির্মিত সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সেতুর উপর দিয়ে ৩ টনের বেশি ভারী যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। বিশেষজ্ঞের পরিদর্শন রিপোর্টের ভিত্তিতে সেতুটির সংস্কারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সেপ্টেম্বর ০১,২০২৩ at ২০:৫৪:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/রিকাগু/ইর