ইবির আবাসিক হলে খাবারের দাম বাড়লেও বাড়েনি মান

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলগুলোতে খাবারের মান খুবই নিম্নমানের। দামের তুলনায় দিন দিন যেন তা কমেই চলেছে। এমন বেহাল অবস্থায় মুদ্রাস্ফীতির দোহাই দিয়ে আবারো বাড়ানো হয়েছে খাবারের দাম। অন্যদিকে আবাসিকতার খরচ এক লাফে ২১৪০ টাকা থেকে ৩১৮০ টাকা। পরিবহন ব্যবহার না করলেও দিতে হচ্ছে ফি। কিন্তু সবকিছুর বিনিময়েও দৃশ্যমান কোন উন্নতির দেখা মিলছে না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কোন উপায়ন্তর হচ্ছে না।

এবিষয়ে আবাসিক শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হল প্রশাসন মুদ্রাস্ফীতির দোহাই দিয়ে খাবারের মূল্যসহ অন্যান্য খরচ বাড়িয়েছে, শুধু আবাসিক শিক্ষার্থীদের সেবার মান ব্যতীত। অভিযোগ রয়েছে হলের ইন্টারনেট সেবা খুবই ধীরগতির, শৌচাগার অপরিচ্ছন্ন, ওয়াশরুমের দরজাগুলো ভাঙা, ওয়াসরুমে সারাক্ষণ নোংরা পানি জমে থাকে, ভেসিন অপরিচ্ছন্ন। এছাড়াও হলের প্রশাসনিক কার্যক্রমে রয়েছে ব্যাপক ধীরগতি।

খাবার নতুন তালিকা ও মূল্য নির্ধারণ হিসেবে সকালে খিচুরী এক প্লেট ও ভর্তা ১২ টাকার বদলে এখন ১৫ টাকা, খিচুরী, ডিম ও ভর্তা ২২ টাকার স্থানে ২৫ টাকা। দুপুরে ভাত, ছোট মাছ সবজি বা মুরগি, ডাউল ও ভাজিসহ ২৮ টাকার বদলে ৩০ টাকা ও ভাত, বড় মাছ সবজি বা মুরগি, ডাউল ও ভাজিসহ ৩৮ টাকার বদলে ৪০ টাকা। রাতে ভাত,ছোট মাছ সবজি বা মুরগি, ডাউল ও ভাজিসহ ২৮ টাকার বদলে ৩০ টাকা ও ভাত, বড় মাছ সবজি বা মুরগি, ডাউল ও ভাজিসহ ৩৮ টাকার বদলে ৪০ টাকা।

কয়েকটি সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের আগে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের আবাসিক ফি ছিল ৭১৮ টাকা। ওই বছরের ডিসেম্বর মাসে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিসহ আনুষঙ্গিক ফি বাড়িয়ে প্রায় কয়েক গুণ করা হয়। আবার অন্যদিকে শিক্ষাবর্ষের আবাসিক ফি বৃদ্ধি করে ১৮৭২ টাকা করা হয়। এছাড়া ২০২১ সালের ডিসেম্বরে আরেক ধাপে বৃদ্ধি করা হয় আবাসিক ফি। দ্বিতীয় ধাপে বৃদ্ধির পর ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের আবাসিক ফি এখন ৩১৮০ টাকা। যা ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ফি থেকে ২৪৬২ টাকা বেশি অর্থাৎ প্রায় সাড়ে ৩ গুণ।

এই বিষয়ে সাদ্দাম হোসেন হলের আবাসিক একাধিক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘হল প্রশাসনের একঘেয়ে সিদ্ধান্তে আবাসিক শিক্ষার্থীদের উপর আসছে বিরূপ প্রভাব। অধিকাংশ আবাসিক শিক্ষার্থীরা নামমাত্র খরচ বাড়ি থেকে সংগ্রহ করেন। তবে বারবার খাবারের মূল্যবৃদ্ধি, আবাসিকতার খরচ বাড়তে থাকায় কষাঘাত চলছে শিক্ষার্থীদের। বর্তমান মুদ্রাস্ফীতির প্রভাবে বেড়েছে শিক্ষা দ্রব্যমূল্য এমনিতেই হিমসিম খাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তার উপর হল প্রশাসন ভর্তুকি না বাড়িয়ে কেন আবাসিক শিক্ষার্থীদের খরচ বাড়িয়েছেন তা অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাকতালীয় কোন কল্প কাহিনি জানা আছে শিক্ষার্থীদের কাছে কি টাকার গাছ আছে।’

সাদ্দাম হোসেন হলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আবাসিক শিক্ষার্থীরা বলেন, খাবারের মান খুব খারাপ হলেও হল প্রশাসন নিজেদের ইচ্ছেমতো ডাইনিং ম্যানেজার নিয়োগ করেন, তারপর আর খাবারের মান নিয়মিত যাচাই করেন না। হল প্রশাসন শিক্ষার্থীদের থেকে কোন মতামত গ্রহণ না করে তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী হল পরিচালনা করেন। হল প্রশাসনের এ ধরনের একঘেয়ে সিদ্ধান্তে আবাসিক শিক্ষার্থীদের ঘি দিয়ে পান্তা ভাত খাওয়ার মতো অবস্থা হতে পারে।

এ বিষয়ে সাদ্দাম হোসেন হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ প্রভোস্ট কাউন্সিলের মিটিং হয়েছে। মিটিংয়ে খাবারের মূল বৃদ্ধির জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অক্টোবরের প্রথম থেকেই এটা কার্যকর হয়েছে। ‘যেহেতু খাবারের দাম বাড়ানো হয়েছে তাই খাবারের মানও ভলো করতে বলা হয়েছে হল ডাইনিং ম্যানাজারকে। তাছাড়া আগের চেয়ে আমরা সাবসিডিও বাড়িয়ে দিয়েছি। আশাকরি খাবারের মান ভলো হবে।’

দেশদর্পণ/সুশা/ইপ্র/ইর