আপিল বিভাগে বিচারপতি কম, বাড়ছে মামলাজট, ভোগান্তিতে জনসাধারণ

গত বছর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে দু’জন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে একজন অবসরে গেছেন। বর্তমানে আপিল বিভাগে ছয়জন বিচারপতি কর্মরত রয়েছেন। প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারপতির অভাবে তিনটির মধ্যে একটিমাত্র বেঞ্চ (ভার্চুয়াল) দিয়ে মামলাও নিষ্পত্তি করা হচ্ছে সর্বোচ্চ আদালতে।

বিচারপতি সেভাবে না বাড়ায় আপিল বিভাগে বিচারাধীন মামলাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলা এবং রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি হচ্ছে না। আইনজ্ঞরা মনে করেন, এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে দ্রুত বিচারপতি নিয়োগ হওয়া প্রয়োজন। অন্যথায়, মামলার জট পর্যায়ক্রমে বাড়তেই থাকবে।

সুপ্রিম কোর্টের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে আপিল বিভাগে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। এসবের মধ্যে দেওয়ানি, ফৌজদারি ও অন্যান্য মামলা রয়েছে। করোনার কারণে গত বছর জুলাই থেকে একটি ভার্চুয়াল বেঞ্চে মামলা পরিচালনা করা হচ্ছে। গত এক বছরে আপিল বিভাগে প্রায় ১১ হাজার মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে।

বর্তমানে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের অন্য পাঁচ সদস্য হলেন বিচারপতি ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী, বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। এর মধ্যে বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী গত ২৮ জুলাই অবসরে গেছেন। আর ৩০ ডিসেম্বর অবসরে যাবেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।

গত বছর ২ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগে দু’জন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা হলেন বিচারপতি তারিক-উল হাকিম ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। সংবিধান অনুযায়ী ৬৭ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ায় ওই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর বিচারপতি তারিক-উল হাকিম অবসরে যান। মাত্র ১৭ দিন তিনি আপিল বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন।

এর আগে ২৮ ফেব্রুয়ারি আরেক বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার অবসরে যান। এর পর থেকে আর বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়নি। সংবিধানে আপিল বিভাগের বিচারপতির কোনো সংখ্যা নির্ধারণ নেই। সংবিধান অনুযায়ী, প্রধান বিচারপতির পরামর্শ ও প্রয়োজন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, আপিল বিভাগে বিচারক নিয়োগের বিষয়টি সরকার গুরুত্বসহকারে ভাবছে। অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন সমকালকে বলেন, আপিল বিভাগে আরও বিচারক নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। দুটি বেঞ্চ থাকলে তো ভালোই হয়, মামলাও দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে শিগগিরই বিচারক নিয়োগ দেবেন বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।

সুপ্রিম কোর্টের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর ৯ জনকে এবং ২০১৮সালে ৩০ মে ১৮ জনকে হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগ দেয় সরকার। এরপর হাইকোর্ট বিভাগে কোনো বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সমকালকে বলেন, আপিল বিভাগ হচ্ছে অ্যাপেক্স কোর্ট (সর্বোচ্চ আদালত)। এখানে গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর মামলা চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদালতে বিচারক সংকট রাখা যাবে না। মামলার জট কমাতে প্রয়োজন অনুসারে পর্যাপ্ত বিচারক থাকতে হবে। তাহলে আপিল বিভাগে মামলা নিষ্পত্তির হার বেড়ে যাবে। বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তিও কমে আসবে।

আপিল বিভাগে জমে থাকা মামলাগুলো নিষ্পত্তিতে দ্রুত বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। তিনি বলেন, আপিল বিভাগে অনেক মামলা এখনও নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। বিচারক সংকটের কারণে এই বিভাগের দুটি বেঞ্চ বন্ধ রয়েছে। ২০০৯ সালেও এই বিভাগে বিচারপতি ১১ জন ছিলেন। তখন তিনটি বেঞ্চে বিচারকাজ চলত। আর এখন বিচারক সংকটের কারণে একটি বেঞ্চে বিচারকাজ চলছে।

আরো পড়ুন :
প্রস্তুতিতে পিছিয়ে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
পুলিশ কর্মকর্তা সোহেলের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল সমকালকে বলেন, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে বিচারক নিয়োগ করা অবশ্যই প্রয়োজন। কারণ বেঞ্চ বাড়লে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। তবে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে আপিল বিভাগে যেন কোনো বিচারক নিয়োগ না হয়, এমন প্রত্যাশা করেন তিনি।

সেপ্টেম্বর  ০৯.২০২১ at ১০:১৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/সম/রারি