এবার আমের ন্যায্য দাম নিয়ে আশঙ্কা করছেন রাজশাহীর আম চাষিরা

করোনাভাইরাসের প্রভাব আমের নায্য মূল্য না পাওয়ার আশঙ্কা করছেন আমচাষিরা। এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে আম কেনা-বেচার জন্য আড়ৎগুলোতে। যেখানে সার্বক্ষণিক কর্মযজ্ঞ চলতো সেখানে এখনো পর্যন্ত কোনো প্রকার প্রস্তুতিই শুরু করা হয়নি।
অথচো রাজশাহী অঞ্চলে আর্টি জাতীয় আম পাকতে হাতেগোনা আর মাত্র কয়েকদিন বাকি।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমপাড়ার জন্য এখনো পর্যন্ত দেয়া হয়নি নির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ। সর্বত্রই এখন অজানা আতঙ্কের আশঙ্কা বিরাজ করছে। স্থানীয় আমচাষি ও ব্যবসায়িরা বলছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটের কোনো পরিবর্তন না হলে এ বছর ব্যাপক লোকসান গুনতে হবে।

আরো পড়ুন :
চৌগাছায় আরো দুই চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত, বন্ধ অপারেশন কার্যক্রম
কেশবপুরে আরো এক স্বাস্থ্যকর্মীর দেহে করোনা শনাক্ত
প্রশাসনের নাকের ডগায় অভিনব কায়দায় মুক্তিযোদ্ধার ৩০ হাজার টাকা ছিনতাই

জেলার সর্ববৃহৎ আমের আড়ৎ বানেশ্বর হাটের ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে জানা গেছে, গত বছরও মে মাসের শুরুতেই জেলা প্রশাসক আম বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেন। সভায় আম ক্রয়-বিক্রয়ে কয়েকটি ধাপে নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে দেন। এতে আমের প্রকার ভেদে ৬টি ধাপে আম কেনা-বেচা করতে বলা হয়।

সে নির্দেশনা মোতাবেক গত বছর ১৫ মে থেকে গুটি জাতীয় আমপাড়া ও কেনাবেচা শুরু করা হয়। তবে চলতি বছর করোনাভাইরাস প্রভাব বিস্তার করায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত আমপাড়ার কোনো দিকনিদের্শনা আসেনি।

অপরদিকে, আমপাড়ার মৌসুম শুরু হওয়ার প্রায় এক মাস আগেই জেলার সর্ববৃহৎ আড়ৎগুলোতে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও রক্ষণা-বেক্ষণ কাজ শুরু হতো। কিন্তু বর্তমানে লকডাউন থাকায় এই আড়ৎগুলো এখনো পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে।

আমচাষি হাবিবুর রহমান বলেন, অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করায় এ বছর সকল আমবাগানে প্রচুর পরিমাণ আম এসেছে। চাষিদের সময়মত সঠিক পরিচর্যা ও এখনো পর্যন্ত প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হওয়ায় প্রায় প্রতিটি গাছে আমে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। মৌসুমের শুরু থেকে চাষিরা আমের বাম্পার ফলনের আশা করছিল। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন না হলে এবার আমে ব্যাপক লোকসানের হতে পারে।

বানেশ্বর বাজারের ইলিয়াস নামের একজন আড়ৎদার বলেন, আড়তের পাশাপাশি আমরা কয়েকজন ব্যবসায়ী মিলে বাগান থেকে আম কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে চাহিদা মোতাবেক সরবরাহ করি। এ বছরের শুরুতে আমাদের প্রায় ৭৫ বিঘা আমবাগান কেনা আছে। করোনার কারণে এবার আমের বাজার কি হবে বলা মুশকিল।

নগরীর বালিযা পুকুর এলাকার মিঠু নামের এক পাইকারী আম ব্যবসায়ী বলেন, সকল সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আম ক্রেতা আনেক কম হবে। আর এ কারনেই তিনি সঠিক দাম না পাওয়া নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেট ওলিউজ্জামান বলেন, করোনার প্রভাবের কারণে এখনো পর্যন্ত আমপাড়ার বিষয়ে কোনো সিন্ধান্ত হয়নি। তবে অচিরেই স্থানীয় আমচাষি ও ব্যবসায়িদের নিয়ে জেলা পর্যায়ে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে কোন আম কখন পাড়তে হবে সে অনুযায়ী একটি দিক নির্দেশনা ক্রেতা-বিক্রেতাদের দেয়া হবে। এছাড়া অসাধু ব্যবসায়ী ও চাষিরা আমে কোনো প্রকার বিষাক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার না করতে পারে সে জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং থাকবে। এ ছাড়া কোথাও কোনো অনিয়মের খবর পেলে তৎক্ষনিক আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত বছর মহামান্য হাইকোর্ট রাজশাহী অঞ্চলের আমবাগান গুলোতে মানব দেহের ক্ষতিকর কোনো প্রকার রাসয়ানিক পদার্থ আমে ব্যবহার না করা হয় সে জন্য বাগানগুলোতে পুলিশ পাহারার নিদের্শনা দিয়ে ছিলেন। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাগণ স্থানীয় আমবাগানগুলোতে সার্বিক অবস্থা ও বাগান মালিকদের নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়া আম বিদেশের বাজারে রপ্তানীর বিষয়ে ফ্লুটব্যাগিং পদ্ধতিরও পরামর্শ দেন। এছাড়া বাগানে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কোনো প্রকার রাসায়নিক পদার্থ ফরমালিন, কার্বাইড মিশ্রণ থেকে বিরত থাকার জন্য নিদের্শনা দিয়ে ছিলেন।

মে ০৫, ২০২০ at ১৯:৩৯:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এমআর/এএডি