প্রশাসনের নাকের ডগায় অভিনব কায়দায় মুক্তিযোদ্ধার ৩০ হাজার টাকা ছিনতাই

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় প্রশাসনের নাকের ডগার ওপর অভিনব কায়দায় আলাউদ্দিন মণ্ডল (৭০) নামে এক মুক্তিযোদ্ধার ৩০ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। রোববার দুপুরে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে এ ঘটনা ঘটলেও পরের দিন সোমবার বিকেলের দিকে তা জানাজানি হয়ে যায়। এর আগেও আরো কয়েকবার উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় একই কায়দায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে, উপজেলার ফিলিপনগর এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন মণ্ডল সোনালী ব্যাংক, দৌলতপুর শাখা থেকে রোববার দুপুরে তার তিন মাসের মুক্তিযোদ্ধা ভাতার ৩০ হাজার টাকা তোলেন। ব্যাংকটি উপজেলা পরিষদের অভ্যন্তরে ইউএনওর নাকের ডগায় অবস্থিত। মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন মণ্ডল টাকা উত্তোলন করে ব্যাংকের বাইরে বেরিয়ে এলে একটি ছিনতাইকারী চক্র কৌশলে তার পোশাকে মল লাগিয়ে দেয়। এ সময় ছিনতাইকারী চক্রের এক সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিনকে মল পরিষ্কার করার জন্য উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরের মসজিদে ডেকে নিয়ে যায়।

সেখানে ছিনতাইকারী চক্রের ওই সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন মণ্ডলকে মসজিদের ট্যাপে গিয়ে পোশাকে লেগে থাকা মল পরিষ্কার করতে বলে। মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন তার মিষ্টি কথায় প্রলুব্ধ হয়ে সরল মনে নিজের হাতে থাকা টাকার ব্যাগটি ধরার জন্য তার হাতে দেন। এরপর তিনি ট্যাপের পানি দিয়ে পোশাকে লাগানো মল পরিষ্কার করতে গেলে ব্যাগটি নিয়ে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারী চক্রের ওই সদস্য।

পরে নোংরা পরিষ্কার করে এসে মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন মণ্ডল দেখতে পান টাকার ব্যাগটি যাকে ধরে রাখতে দিয়েছিলেন সেই ছেলেটি সেখানে নেই। এ সময় তাকে খুঁজে না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। মুক্তিযোদ্ধার কান্না শুনে স্থানীয় লোকজন তার কাছে ছুটে গেলে তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনাটি তাদের জানান।

এ ব্যাপারে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার বলেন, ঘটনাটি জানার পর তাৎক্ষণিকভাবে থানার ওসিকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আশা করি পরবর্তীতে এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না।

পরে মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন মণ্ডলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ছিনতাইয়ের ঘটনাটি জানানো হয়েছে। তিনি টাকা উদ্ধারের আশ্বাস দিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত টাকা উদ্ধারের ব্যাপারে প্রশাসনকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি।

প্রসঙ্গত, এর আগেও এই ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বেরোনোর পর এক মুক্তিযোদ্ধা ও এক শিক্ষকসহ অন্তত ৮-১০ জন ব্যক্তি একই কায়দায় ছিনতাইয়ের শিকার হন। এ নিয়ে উপজেলা পরিষদের আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ছিনতাই নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও তা ঠেকানো যাচ্ছে না। প্রশাসনের নাকের ডগায় বারবার সাধারণ ব্যাংক গ্রাহকরা টাকা ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ার ঘটনায় প্রশাসনের উদাসীনতাকে দুষছেন স্থানীয়রা।

মে ০৫, ২০২০ at ১৬:৫৪:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এআর/এএডি