কল পেয়ে গভীর রাতে খাবার নিয়ে হাজির ওসি

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সারাদেশে ন্যায় চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায়ও চলছে অঘোষিত লকডাউন। এ লক্ষ্যে উপজেলা জুড়েঁ সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে দিনরাত কাজ করছে থানার পুলিশ সদস্যরাও। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নসহ পাড়া মহল্লায় টহল দেয়া ছাড়াও সচেতনতামূলক মাইকিং করে জনগণকে সতর্ক করছে রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশ।

জানা যায়, গত ২৯ মার্চ রবিবার রাতে রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ সাইফুল ইসলাম নিজের ফেসবুক আইডি থেকে দুটি নাম্বার দিয়ে ‘দেশকে নিরাপদ ও জাতিকে সুস্থ রাখার জন্যে রাঙ্গুনিয়ার যে সকল ভাই বোনেরা খুব কষ্টে দিনযাপন করছেন। যারা কারো কাছে পরিবারের অসহায়ত্বের কথা বলতে পারছেন না, তাদের কলের অপেক্ষায় রাঙ্গুনিয়া মডেল থানা। আপনার কলে অল্প সময়ে পৌঁছে যাবে রাঙ্গুনিয়া থানার নির্ভীক সদস্যরা’ এমন আহবান জানিয়ে একটি ষ্ট্যাটাস দেন। ওসির এই আহবানে সাড়া দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে করোনায় গৃহবন্দী অনেক শ্রমজীবী কর্মহীন অসহায় মানুষের ফোন আসতে থাকে।
আরও পড়ুন: করোনার প্রকোপ কমে এলে আমাদের যা করতেই হবে

ফোন কল পেয়ে ৩০ মার্চ সোমবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উপজেলার পোমরা, দূর্গম জঙ্গল পারুয়া, লালানগর, হোচনাবাদ, চন্দ্রঘোনা বনগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার একাধিক দিনমজুর, দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষদের বাড়িতে খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেট নিয়ে হাজির হন ওসি। প্রতিটি ১০ কেজি ওজনের প্যাকেটে ছিল চাল, পেঁয়াজ, ডাল, তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী।

এদিকে গত কয়েকদিনে করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট অচলাবস্থায় আয় বন্ধ হয়ে পরিবারের ৪ সদস্যকে নিয়ে বিপাকে পড়েন রিক্সা চালক আবুল হাসেম লেদু।

পরে নিরুপায় হয়ে ৩০ মার্চ রাত ১১ টায় ওসির ঘোষিত নম্বরে ফোন করেন এই রিক্সাচালক। রিক্সাচালকের সমস্যা শুনেই গভীর রাতে খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেট নিয়ে তার বাড়িতে হাজির হন ওসি মোঃ সাইফুল ইসলাম।

ওসির এমন মানবিক আচরণে বিস্মিয় প্রকাশ করে ওই রিক্সাচালক বলেন, ‘করোনার কারনে রাস্তায় লোকজন তেমন বের হচ্ছেনা। ফলে রিক্সার কোন যাত্রী না থাকায় ৪-৫ দিন ধরে কর্মহীন হয়ে পড়েছি। এদিকে ঘরে খাবারও ফুরিয়ে গেছে। এতে পরিবারের ৪ সদস্যকে নিয়ে বড় বিপাকে পড়ে গিয়েছিলাম। পরে অনেকটা নিরুপায় হয়ে ওসির ফোন নাম্বারে কল দিই। ফোন দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই খাবার হাতে ওসি স্যার আমার বাসায় চলে আসবেন এমনটা ভাবিনি।’
আরও পড়ুন: নববর্ষের সব অনুষ্ঠান বন্ধ, ছুটি বাড়বে: প্রধানমন্ত্রী

ওসি মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় টহলের পাশাপাশি সচেতনতামূলক মাইকিং করে জনগণকে সতর্ক করার কাজ করছে রাঙ্গুনিয়া মডেল থানা পুলিশ সদস্যরা। বেশির ভাগ মানুষই তা মেনে চলছে। তবে অনেকেই জরুরি প্রয়োজনে রাস্তায় বেরিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আমরা তাদের বল প্রয়োগ না করে ভিন্ন উপায়ে ঘরে ফিরিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন ‘সাধারণ মানুষকে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার ইচ্ছা নিয়েই ফেসবুকে এই স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। অনেকেই তাদের সমস্যা নিয়ে ফোন করেছেন। তৎমধ্যে বেশিরভাগই করোনার কারণে বেকার হয়ে পড়া সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। তাই নিজের সামর্থ অনুযায়ী প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছি। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হবে জানিয়ে তিনি সমাজের বিত্তবানদের প্রতি দিনমজুর ও কর্মহীন মানুষের পাশে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।’

দেশদর্পণ/এমএম/এসজে