করোনার প্রকোপ কমে এলে আমাদের যা করতেই হবে

সারা বিশ্বে করোনা (কোভিড ২০১৯) ভাইরাসের মহামারি চলছে। চীনের উহানে যার শুরু। এখন পৃথিবীর প্রায় সব দেশ এই ভাইরাসে আক্রান্ত। প্রতিদিন বহু মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। মারা যাচ্ছে শ’য়ে শ’য়ে। এমন দুর্যোগ বিশ্ববাসী দেখেনি কখনো। কার্যকর কোন ঔষধ/টিকা এখনো আবিষ্কার না হওয়ায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। হয়তো কোন একদিন এই দুর্যোগের সমাপ্তি ঘটবে। সে আশায় দিন গুণে বিশ্বের সকল মানুষ। করোনা আমাদের জীবনযাপনে এনেছে ব্যাপক পরিবর্তন। বিশেষ করে চলাফেরা,পরিচ্ছন্নতা শিষ্টাচারসহ শৃংখলা আনছে করোনা।

করোনার প্রাদুর্ভাব কমে এলে আমাদের কিছু কাজ অবশ্যই করতে হবে। করতে হবে ইমার্জেন্সি নীতিমালা। এখন দেখা যাচ্ছে, পৃথিবীর দেশগুলো স্বাস্থ্যব্যবস্থাসহ বিভিন্নক্ষেত্রে নিজেদের যতই এগিয়ে রাখার দাবি করুক সামান্য একটি ভাইরাসেই কুপোকাত তারা।

যাক যে বিষয়টি নিয়ে আলোকপাত করছিলাম। করোনার পরে আমাদেরকে অবশ্যই সবকিছু নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। যে নিয়মকানুনগুলো বর্তমানে মেনে চলছি সেগুলোর অনেক কিছুই বাদ দেওয়া যাবেনা। আরো কিছু করতে হবে।
আরও পড়ুন: আতঙ্ক নয়, চাই সতর্কতা

যেমন, সব বিমান বন্দর, সমুদ্র বন্দর, নৌ ও স্থল বন্দরসহ দেশে প্রবেশের সব স্টেশনে থার্মাল স্ক্যানার বসাতে হবে। প্রয়োজনে করোনাসহ সব ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে টেস্ট উপযোগী সরঞ্জামাদির ব্যবস্থা করতে হবে। টিকা/ভ্যাকসিন দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে।

দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, শিল্পকারখানাসহ যেখানেই কাজের স্থান রয়েছে সেগুলোকে জীবানুমুক্ত রাখতে স্প্রে ছিটানো, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া,হ্যান্ড সেনিটাইজারের কার্যকর ব্যবস্থা করতে হবে।পরিবার ও সমাজের পরিবেশকে জীবানুমুক্ত রাখতে সময়ে সময়ে এলাকাভিত্তিক সাময়িক লকডাউনের মাধ্যমে বাধ্যতামূলক পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করতে হবে।

হাসপাতালগুলোতে জীবানু সনাক্তকরণ কীটের পর্যাপ্ত সরবরাহ, চিকিৎকদের উপযুক্ত নিরাপত্তা ও সরঞ্জামের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে তুলতে হবে বিশেষায়িত হাসপাতাল, ক্লিনিক। সব ধরণের দোকান, হোটেল-রেস্তোঁরাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে কঠোর আইন করতে হবে। অন্যথায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। মালিকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের সকল ফার্মেসীতে জীবানুনাশক ট্যাবলেট,মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখতে হবে যাতে সংকটকালীন সময়ে সরবরাহ করা যায়।

সাধারণ মানুষের মাঝে স্বাস্থ্য সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সকল স্থানীয় পরিষদের মাধ্যমে কার্যকর উদ্যোগ বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে হবে।
আরও পড়ুন: নববর্ষের সব অনুষ্ঠান বন্ধ, ছুটি বাড়বে: প্রধানমন্ত্রী

দেশের হাটবাজার, শপিংমলসহ যেখানেই মানুষের সমাগম ঘটে সেসব স্থানকে জীবানুমুক্ত রাখতে সার্বক্ষণিক পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

দেশে অধিকসংখ্যক ডাক্তার, নার্স সৃষ্টির লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রশিক্ষণসহ গবেষণা কাজের জন্য প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্টের ব্যবস্থা করতে হবে।

করোনা জানান দিয়েছে, বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ রাখতে হবে আগের যেকোন সময়ের চেয়ে বহুগুণ।

পরিবেশ দূষণ রোধে কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে এবং তা বাস্তবায়নে কোন ধরণের শৈথিল্য প্রদর্শনের বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে।

পাঠ্যপুস্তকে প্রাণঘাতী এই করোনাভাইরাস সহ রোগজীবানু ও তা থেকে বেঁচে থাকার কার্যকর কৌশল সম্পর্কে অধ্যায় সংযুক্ত করতে হবে।

দুর্যোগকালীন বাজার ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখা ও খেটেখাওয়া মানুষের জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

করোনা ভাইরাস আমাদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির তাগিদ দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের নীতি-নৈতিকতার যে ধ্বস নেমেছে তা থেকে অবশ্যই ফিরে আসতে হবে। গড়তে হবে আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য একটি সুন্দর পৃথিবী। এই হোক সকলের প্রতিজ্ঞা।

লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

দেশদর্পণ/একেনি/এসজে