আরসা’র শীর্ষ সন্ত্রাসী বিদেশী অস্ত্র-কার্তুজ’সহ আটক

আরসা’র শীর্ষ সন্ত্রাসী ও অর্থ সম্পাদক মাওলানা মোহাম্মদ ইউনুসকে কক্সবাজারের উখিয়া থানাধীন পালংখালী ইউনিয়নের তাজনিমার খোলা এলাকা থেকে র‌্যাব-১৫ কর্তৃক গ্রেফতার; বিদেশী অস্ত্র ও কার্তুজ উদ্ধার।

আটক ইউনুস মৃত হাবিবুল্লাহ’র ছেলে। এফসিএন নং-২১২৬০৮, ব্লক-সি/১৩ রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১৯-চেংখালী গ্রামের উখিয়া থানা জেলা-কক্সবাজার।

আরো পড়ুন :

> প্রেসক্লাব চৌগাছা ও রিপোর্টার্স ক্লাবের সাথে নবাগত ওসির মতবিনিময়
> গোড়াগাড়ীতে ১কোটি টাকার হেরোইন ও একটি পিস্তল-সহ দুই চোরাকাররি গ্রেফতার

২৪ আগস্ট,রাত সাড়ে ৯টায় একটি চৌকস আভিযানিক দল উখিয়া থানাধীন পালংখালী ইউনিয়নের ০৪নং ওয়ার্ডের তাজনিমার খোলা এলাকায় অভিযানে সন্ত্রাসী সংগঠন ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’ (আরসা) এর শীর্ষ সন্ত্রাসী ও অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউনুস’কে আটক করে। অভিযানে আটককৃর কাছ থেকে ১টি বিদেশী রিভলবার, ০৬ রাউন্ড তাজা কার্তুজ এবং ০১টি স্মার্ট মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

শরণার্থী শিবির গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়,শরণার্থী শিবির ও এর সংলগ্ন গহীন পার্বত্য এলাকাসমূহে ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’ (আরসা)’সহ বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপ এ সকল খুন,অপহরণ,ডাকাতি,মাদক,চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করছে; যার কারণে শরণার্থী শিবির ও স্থানীয় এলাকাবাসীকে সবসময় ভীত সন্ত্রস্ত থাকে। র‌্যাব-১৫ এ সকল সন্ত্রাসী গ্রুপের শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় আটক করে।

ইউনুস জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমারের নাগরিক মায়ানমারে থাকাবস্থায় মংডু টাউনশীপের মেরুল্লা মাদ্রাসায় শিক্ষকতার আড়ালে আরসার হয়ে কাজ করতো। ২০১৬ সালে সে ‘আরসা’ সদস্য মৌলভী আরিফুল্লাহ এর মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ‘আরসা’ এ যোগ দেয়। সে আরসার আমীর আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনী, ওস্তাদ খালেদ, সমউদ্দিন এর সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আলেম-ওলামা, হেডমাঝি, সাবমাঝি ও সাধারণ রোহিঙ্গাদের সাথে মিটিং করে আরসা সংগঠনে যোগদানে উৎসাহ প্রদান, রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় আরসার অর্থ সম্পাদকের দায়িত্ব এবং আর্থিক তহবিল পরিচালনা করছে বলে জানা যায়।

উদ্ধারকৃত আলামত

২০১৭ সালে অবৈধভাবে বাংলাদেশে শরণার্থী ক্যাম্প-১৯ এ অবস্থান করতে থাকে। আরসার অর্থের উৎস সম্পর্কে ইউনুস জানায় তার এর নিকট প্রতিমাসে সৌদি আরব থেকে আবুল বশর ১ লক্ষ টাকা, মৌলভী ইসমাইল ১ লক্ষ টাকা,পারভেজ ১৫ হাজার টাকা, আমেরিকা থেকে জহুর আলম ১ লক্ষ টাকা, মালয়েশিয়া থেকে হারুন ১লক্ষ টাকা, থাইল্যান্ড হতে হারুন ৬৫ হাজার টাকা এবং সৌদি আরব থেকে মো. ইসলাম প্রতিবছর ১ লক্ষ টাকাসহ সর্বমোট ৫ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা প্রেরণ করে।

এছাড়াও অস্ট্রেলিয়া থেকে অজ্ঞাতরা রোহিঙ্গা টাকা প্রেরণ, মায়ানমারের আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গাদের গ্রাম হাতে চাঁদা, প্রতিমাসে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ১০-১৫ লক্ষ টাকা আরসার ক্যাম্প জিম্মাদারদের নিকট আসে। প্রাপ্ত অর্থসমূহ দিয়ে অস্ত্র কেনা ও দলের সদস্যদের আর্থিক সহযোগিতা/বেতন দিয়ে থাকে। ইউনুস আরসার সংগঠনের জন্য গত এপ্রিল হতে জুন ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত ০৩ মাসে আরসা সমর্থিত বিভিন্ন গ্রুপ,ব্যক্তি ও সংগঠন হতে প্রায় ১৩,৮১,৬৯৫ টাকা প্রাপ্ত হয়েছে। আরসার গ্রুপে ২০০-২৫০ জন সদস্য রয়েছে। সদস্যরা গত ২০১৬ সালে মায়ানমারে তারাশুখ থানায় আক্রমন করে মোট ৭০টি একে-৪৭ অস্ত্র লুট করে এবং এটি তাদের অস্ত্র সরবরাহের মূল উৎস বলে জানা যায়। সে আরো জানায় আরসার অন্য সদস্য সমিউদ্দিন (ক্যাম্প-৬) এবং হোসেন (ক্যাম্প-১৭) অস্ত্র ও এ্যামোনিশনের ব্যাপারে বিস্তারিত জানে। এছাড়া সে জানায় ছোট ছোট অস্ত্র ও এ্যামোনিশন বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা হতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরবরাহ করে থাকে। আরসা সদস্যরা অস্ত্রগুলো ক্যাম্পে নিয়ে আসার পর সমিউদ্দিন ও ইউনুসের নিটক জমা থাকে এবং পরবর্তীতে তাদের অধীনস্থ সকল সদস্যদের অস্ত্র বন্টন করে থাকে। ইউনুস জানায় আরসা সন্ত্রাসী সমিউদ্দিন ও যোবায়ের ককটেল বোমা বা বিস্ফোরক তৈরী করে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দেশীয় তৈরী এলজি অস্ত্রের চাহিদা বেশি। আরসা সদস্যরা অস্ত্র ক্রয় করার পর নগদ অর্থ হাতে হাতে অথবা বিকাশের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করে।

আরসা সদস্যদের জন্য নির্দিষ্ট কোন রাউন্ড এ্যামোনিশন বরাদ্দ নেই তবে বিভিন্ন অপারেশনের পূর্বে বেশি করে এ্যামোনিশন প্রদান করা হয়। এছাড়া মাওলানা ইউনুসের নিকট হতে আরসা সদস্যদের বিভিন্ন সাংকেতিক শব্দ পাওয়া যায়; KRG/KIG – পাহারাদার গ্রুপ – ১৩-১৫ বছর বয়সের আরসা সদস্য, G-4 – মাস্টার রফিক, L/L. Gan – যোবায়ের (আঙ্গুল বাকা) এবং 5.S/5.Star – মাস্টার ইউনুস।) বর্তমানে আরসার নিকট প্রায় ২০টি টাইপ-৭৪ এলজি, জেআরজি অস্ত্রসহ ও বিপুল পরিমানে হাত বোমা (হ্যান্ড গ্রেনেড) রয়েছে বলে জানা যায়। আরসা কমান্ডার সমিউদ্দিনের সাথী রোহিঙ্গা ফরিদ, মোহাম্মদ উল্লাহ এবং ইউসুফসহ অনেকের নিকট অস্ত্র রয়েছে বলে জানা যায়।

আটক মোহাম্মদ ইউনুস এর পিসিপিআর যাচাই করে তার বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় সর্বমোট ০৫টি মামলা রয়েছে। এই ০৫টি মামলাগুলো হলো ১৫ অক্টোবর ২০২২ তারিখ হেডমাঝি আনোয়ার কুপিয়ে হত্যা, ০৩ মার্চ ২০২৩ তারিখ রোহিঙ্গা মোহাম্মদ রফিক গুলি করে হত্যা, ১৩ মার্চ ২০২৩ তারিখ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন লাগনোর নির্দেশদাতা, ১১ এপ্রিল ২০২৩ এবং ০৯ জুন ২০২৩ তারিখ এপিবিএন কর্তৃক আরসা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানে তাদের উপর সশস্ত্র হামলা।

জিজ্ঞাসাবাদে আরো কয়েকটি হত্যাকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ২২ অক্টোবর ২০২১ তারিখ আরসার সস্ত্রাসীরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১৮ এর একটি আবাসিক মাদ্রাসায় অবস্থানরত ০৬জন শিক্ষক ও ছাত্রকে নৃশংসভাবে হত্যা, ০৩ মার্চ ২০২৩ তারিখ ইসলামী মাহাযের নেতা রফিক এবং ১৮ মার্চ ২০২৩ তারিখ ইসলামী মাহাযের নেতা হাফেজ মাহবুবকে হত্যা সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে।

আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।তথ্য নিশ্চিত করেছেন, মো. আবু সালাম চৌধুরী, অতি. পুলিশ সুপার সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল’ এন্ড মিডিয়া)।

আগস্ট ২৪, ২০২৩ at ১৯:১৩:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মোমা/ইর