দিনাজপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪০ ঘরে ব্যাপক ফাটল, ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা

ছবি- সংগৃহীত।

মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে ভূমিহীন ও গৃহহীনরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো বরাদ্দ পেয়েছেন মাত্র দুই বছর আগে। এরই মধ্যে ঘরগুলোর দেয়ালে বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। খসে পড়ছে প্লাস্টার। যে কোনো সময় ভেঙে পড়ার শঙ্কায় দিন কাটছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের।

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার ভিয়াইল ইউনিয়নের ধুরইল গ্রামের বোচাপুকুর আশ্রয়ণপাড়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে এমন অবস্থা দেখা গেছে। এখানে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ৪৭টি পরিবারকে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয় উপজেলা প্রশাসন থেকে। বর্তমানে ৪৭টি ঘরের মধ্যে ৪০টি ঘরে ফাটল দেখা গেছে।

আরো পড়ুন :

> বাগবাড়ী- জীবগাঁও ব্রিজ যেন মরণ ফাঁদ!
> মনিহার ক্যান্টিন মালিকের হামলায় গেটম্যান আহত

উপকারভোগীরা বলেন, ধুরইল বোচাপুকুর আশ্রয়ণপাড়ায় ২০২১ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদেরকে পাকা ঘর উপহার দেন। ঘরগুলোর যখন নির্মাণকাজ শুরু হয় তখনই নির্মাণ শ্রমিকরা বলেছিলো যে এত কম সিমেন্ট-বালু দিয়ে ঘরের কাজ করলে পরে ফাটল ধরে ধসে পড়তে পারে। পারলে আপনারা কিছু সিমেন্ট বালু কিনে দেন। আমরা প্রায় সকলেই মিস্ত্রিদের কথা শুনে বালু-সিমেন্ট দিয়েছিলাম, যাতে ঘরগুলো না ফাটে। ঘরগুলো ভালোভাবে তৈরি হয়। কিন্তু কাজগুলো এত নিম্নমানের করলো যে নির্মাণকাজ শেষের দিকে কিছু ঘরে ফাটল দেখা দেয়।

তখন বিষয়টি জানাজানি হলে তৎকালীন ইউএনও আয়েশা সিদ্দীকা ঘরগুলো পরিদর্শনে আসেন এবং আমাদের অনুরোধ করেন আমরা যেন কাউকে কিছু না বলি। ইউএনও আয়েশা সিদ্দীকা সেসময় যেসব ঘরে ফাটল ধরেছে সেগুলো মেরামত করে দেন। মেরামতের কিছু দিন পরে আবার নতুন করে ফাটল শুরু হয়। এখন এই আশ্রয়ণের প্রায় সবকটি ঘরে ফাটল ধরছে। ঘরের ফাটল দিয়ে ভেতর থেকে বাহিরের দৃশ্য দেখা যায়। ভেঙে পড়ার ভয়ে ঘরগুলোতে থাকছেন না কেউ কেউ।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, ওই প্রকল্পে ঘরপ্রতি নির্মাণ ব্যয় ভ্যাট ট্যাক্স বাদে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা ধরা হয়। প্রকল্পের পরিপত্রে উল্লেখ আছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) হতদরিদ্রের ঘর বরাদ্দের তালিকা প্রস্তুত করবেন। প্রাক্কলন অনুযায়ী ২২ ফুট ৬ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য ও ১৯ ফুট ৬ ইঞ্চি প্রস্থের ঘরের ভেতরে থাকবে দুটি কক্ষ, থাকবে রান্নাঘর ও শৌচাগার। নকশা অনুযায়ী ঘর নির্মাণে ৬ হাজার ইট, ৫০ বস্তা সিমেন্ট, ২০০ ঘনফুট বালু এবং ভিটা নির্মাণে ৫০ ফুট বালু ব্যবহার করার কথা।

উপকারভোগী মজ্জিনা খাতুন বলেন, আমরা গরিব মানুষ, আমাদের থাকার জায়গা ছিল না । প্রধানমন্ত্রী আমাদের একটি বাড়ি করে দিছে। আমরা তো মহাখুশিতে ছিলাম। আগে থাকার জায়গা ছিল না এখন দালান বাড়িতে থাকব। নতুন ঘরে উঠার দুই বছর পার হতেই এখন সেই খুশি আতঙ্কে রূপ নিয়েছে। ঘরগুলোতে বড় বড় ফাটল ধরেছে। কখন যেন ভেঙে পড়ে। ঝড় বৃষ্টি হলে ভয়ে ঘরে থাকি না। আমরা গরিব মানুষ সরকার যদি আবার ঘরগুলো ভালোভাবে মেরামত করে দিত তাহলে ভালো হত।

উপকারভোগী রবিউল ইসলাম বলেন, আমাদের থাকার জায়গা ছিল না, ঘর ছিল না। আমাদের মতো ভূমিহীনদের একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু যাদের ঘাড়ে দায়িত্ব ছিল তারা এমন নিম্নমানের কাজ করেছে বলেই দুই বছর পার হতেই ঘরগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

আরেক উকারভোগী ফজলুর রহমান বলেন, আগে মাটির ভাঙা বাড়ি ছিল। সরকার গরিব অসহায় মানুষদের থাকার ঘর দিল, যাতে ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষেরা ভালোভাবে একটু শান্তিতে থাকতে পারে। কিন্তু যারা এই ঘরগুলো তৈরির দায়িত্বে ছিল তারা জানালো সিমেন্ট, বালু ও কিছু রড দিতে হবে, না হলে ঘরের কাজ ভালো হবে না। পরে ১১ বস্তা সিমেন্ট, এক টলি বালু, কিছু রড কিনে দিলাম। তার পরও এমন নিম্নমানের করে তৈরি করল যে দুই বছর যেতে না যেতে ঘরে আর বসবাস করা সম্ভব হচ্ছে না। এখন ভেঙে পড়ার ভয়ে ঘরগুলোতে ঘুমাই না।

আশ্রয়ণের বাসিন্দা মুক্তা পারভীন বলেন, আমরা ভূমিহীন ও গৃহহীনরা এখানে থাকি। আগে থাকার জায়গা ছিল না। ধুরইল পুকুর পাড়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পে আমাদের থাকার জায়গা করে দিয়েছে সরকার। এখন ঘরগুলোতে থাকতে পারি না। ঘরগুলোর দেয়াল ফেটে গেছে, ঘরের মেঝে ফেটে গেছে দরজা লাগাতে পারি না। বাথরুম ব্যবহার করা যায় না। যদি ভূমিকম্প বা ঝড় হয় তাহলে মনে হয় ঘর ভেঙে পড়বে। এখানে শুধু আমার একার বাড়ি ফেটে যায়নি, কমবেশি সবার বাড়ি ফেটে গেছে কারও কম ফেটেছে কারও বেশি।

এ বিষয়ে চিরিরবন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম শরীফুল হক বলেন, আমি এখানে সবেমাত্র যোগদান করেছি। বিষয়টি জানা ছিল না। এ নিয়ে কোনো অভিযোগ এখনো পাইনি। এই ঘরগুলো আমার আগে যারা দায়িত্ব ছিল তারাই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করেছে। আশ্রয়ণের ঘর পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আগস্ট ২৪, ২০২৩ at ২১:৩০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর