প্রতি হাটে দেড় কোটি টাকার পাট বেচাকেনা হয় যেখানে

ছবি- সংগৃহীত।

মুন্সীগঞ্জের টংগিবাড়ী উপজেলার দিঘীরপাড় বাজারের পাশে পদ্মা নদীতে বসে বিশাল পাটের হাট। প্রতি শুক্রবার ও সোমবার বসে এই হাট। ট্রলারের মধ্যে পদ্মা নদীতে পাট রেখে বেচাকেনা করেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। ভোরের আলো ফোটার পর থেকে চাষি ও ব্যবসায়ীরা পাটভর্তি ট্রলার নিয়ে হাজির হন পদ্মা নদীর পাড়ে। প্রতি হাটে ৭ থেকে ৮ হাজার মণ পাট বেচাকেনা হয়। যার মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা।

দিঘীরপাড় বাজার সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী ভাসমান এ পাটের হাট ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসছে। জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে এই হাট শুরু হয়। তিন মাস ভাসমান ট্রলারে পাটের হাট বসে। প্রতি হাটে ৭ থেকে ৮ হাজার মণ পাট বিক্রি হয় এই হাটে। মুন্সীগঞ্জ ছাড়াও পাশের ফরিদপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর এলাকার চাষিরা এ হাটে পাট বিক্রি করতে আসেন।

আরো পড়ুন :

> বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর
> রাজশাহীতে বিপুল পরিমাণ চোলাই মদসহ ২জন মাদক কারবারী গ্রেফতার

সরেজমিনে দেখা যায়, দিঘীরপাড় বাজারের পাশ দিয়ে প্রবাহমান পদ্মা নদীতে পাটভর্তি শতাধিক ট্রলার। এর মধ্যে কিছু ট্রলার পাড়ে ভিড়ানো । কিছু আবার নদীর মধ্যে নোঙর করা। বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষক ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা এসব ট্রলার নিয়ে এসেছেন। দরদাম করে কেউ পছন্দের পাট কিনছেন,কেউবা কাঙ্ক্ষিত দামে পাট বিক্রি করছেন।

শুক্রবার গড়ে ১০০০-২০০০ টাকা মণ দরে পাট বিক্রি হয়। তবে দিন দিন কমছে পাটের দাম। এ বছর শুরুতে ২৫০০-৩০০০ হাজার টাকা মণ পাট বিক্রি হয়েছে। এখন বিক্রি হচ্ছে ১০০০-২০০০ টাকায়। তবে এই হাটে যে সমস্ত পাট উঠেছে তার অধিকাংশই বিক্রি হয়েছে ১০০০ হতে ১৪০০ টাকায়। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চাষিরা।

তারা জানান, ১ মণ পাট উৎপাদন করতে খরচ হয় ১৪০০-১৫০০ টাকা । অথচ বর্তমানে তারা ১০০০-১২০০ টাকায় পাট বিক্রি করছেন।

বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা জানান, মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা এবং পার্শ্ববর্তী জেলা চাঁদপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, মাদারীপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষক ও খুচরা ব্যবসায়ীরা পাট নিয়ে আসেন এই হাটে। এখান থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা পাট কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানের পাটকলে বিক্রি করেন। এ হাটে প্রচুর পাট বেচাকেনা হয়। প্রতি মৌসুমে ৩০-৩৫ কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। ট্রলারে পাট বেচাকেনা হওয়ায় বাড়তি শ্রমিক ও পরিবহন খরচ হয় না। এতে ব্যবসায়ী ও কৃষক উভয় পক্ষ লাভবান হন।

মুন্সীগঞ্জের বাহেরচর এলাকার পাটচাষি দুলাল মিয়া বলেন, ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে আসতাম এই হাটে পাট বিক্রি করতে। এখন নিজেই আসি। এ বছর ১২ গন্ডা (৮৪ শতাংশ) জমিতে পাট চাষ করছিলাম। এই পাট চাষ করতে আমার ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ২৫ মণ পাট হইবো। এখন পাটের যা দাম তাতে ২৫ হাজার টাকায় পাট বিক্রি করতে পারব । আমার কমপক্ষে ৫ হাজার টাকা লোকসান হবে। তারপর নিজের শ্রমতো রয়েছেই।

শরীয়তপুরের বানিয়াল এলাকার পাটচাষি জাকির হোসেন বলেন, পাট বিক্রি করতে আনছিলাম কিন্তু এখন পাট বেচতে পারতেছি না। পাট ১১০০ টাকা মণ বলে। আমরা এক হাজার টাকা করে শ্রমিক নিয়ে পাট কাটছি। নিজেদের শ্রমতো রয়েছেই। আমাদের পাট চাষ করতে কষ্টের শেষ নেই। অথচ আমরা পাট বিক্রি করতে পারছি না।

অপর পাটচাষি আলাউদ্দিন বলেন, সরকার গরিবের দিকে চায় না। দিন দিন পাটের দাম কমছে। সব জায়গায় সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের কারণে পাটের দাম কমে গেছে। এখন ১১০০ টাকা মণ পাট বলে। এক মণ পাট উৎপাদন করতে আমাদের ১৪০০ টাকা খরচ। তারপরে নিজেদের শ্রম তো রয়েছেই।

পাট ব্যবসায়ী কামাল হোসেন বলেন, এ বছর শুরুর দিকে পাটের দাম ২৫০০ টাকা ছিল। এখন ১৫০০ টাকার নিচে হয়ে গেছে। দিন দিন কমছে। এতে আমাদের লোকসান হচ্ছে। আগে বেশি টাকায় পাট কিনে ঘরে রাখছিলাম। এখন দাম কমে যাওয়ায় লোকসানে বেচতে হবে।

দিঘীরপাড় বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মফিজল মোল্লা বলেন, দিঘীরপাড় বাজারে ব্রিটিশ আমল থেকে এই পাটের হাট হয়ে আসছে। সোমবার ও শুক্রবার হাট হয় এখানে। প্রতিহাটে ৭ থেকে ৮ হাজার মণ পাট কেনাবেচা হয়। যার দাম দেড় কোটি টাকার অধিক।

তিনি আরও বলেন, পদ্মা নদীর মধ্যে ১ কিলোমিটারের অধিক জায়গাজুড়ে এই হাট বসে। মুন্সীগঞ্জ ছাড়াও ফরিদপুর শরীয়তপুর, মাদারীপুর চাদঁপুর জেলার পাটচাষিরা এই হাটে পাট নিয়ে আসেন। এই বাজার থেকে নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্নস্থানের পাইকাররা পাট কিনে নিয়ে পাটকলে পাট বিক্রি করেন।

আগস্ট ১৭, ২০২৩ at ১৮:২৪:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর