দুই বছরে ঝরে পড়ল সাড়ে ৫ লাখ শিক্ষার্থী

ছবি- সংগৃহীত।

আগামীকাল শুরু হচ্ছে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা। এতে নিয়মিত হিসেবে অংশ নিচ্ছে ১৭ লাখ ৪০ হাজার ৯৩৭ জন শিক্ষার্থী। তবে তাদের সঙ্গে নবম শ্রেণীতে নিবন্ধন করেছিল ২২ লাখ ৮৭ হাজার ৩২৩ জন। বাকি পাঁচ লাখ ৪৭ হাজার ৩৮৬ জন বিভিন্ন কারণে পরীক্ষা দিচ্ছে না। অর্থাৎ এ পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করা শিক্ষার্থীর ২৪ শতাংশই ঝরে পড়েছে।

এ পরীক্ষা সামনে রেখে বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, এসব শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে বলা যাবে না। সাধারণত টেস্ট পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণদের পরীক্ষা দেয়ার জন্য ফরম পূরণের সুযোগ দেয়া হয় না। হয়তো অনেকে টেস্ট পরীক্ষায় বিভিন্ন বিষয়ে ফেল করেছে।

আরো পড়ুন :

> কক্সবাজারে বন্যায় ক্ষতি ১৪ কোটি টাকা, ২০ জনের মৃত্যু
> ক্ষমা চেয়ে শিক্ষিকাকে টাকা ফেরত দিলেন জাবির ২ ছাত্রলীগ কর্মী

ফেল করা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় পাঠানোর ব্যাপারে এবার দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) অনেক তৎপর ছিল। সব মিলে একটি বড় সংখ্যা ফরম পূরণের পরও পরীক্ষায় বসতে পারেনি। তবে ঠিক কী কারণে এমনটি ঘটল তা খোঁজ নেয়া হবে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষকরা যাতে আরও মনোযোগী হন সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী পরীক্ষাসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য ও পদক্ষেপ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এবার প্রশ্নফাঁসের কোনো সুযোগ নেই। বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ায় গত জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। এ কারণে সেই একই পদক্ষেপ এবারও নেয়া হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রশ্নপত্র পাঠানোর ক্ষেত্রে গতানুগতিক খামের পরিবর্তে এলুমিনিয়াম ফয়েল খাম।

এতে প্রশ্নপত্রের প্যাকেটের নিরাপত্তা আরও বেড়েছে। তিনি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের কোনো সুযোগ নেই। তাই কেউ গুজবের পেছনে ছুটে যেন বিভ্রান্ত না হন। কেননা, গত বছরের আগ পর্যন্ত প্রশ্ন ফাঁসের যে দাবি উঠেছিল, তার ৮০ শতাংশই ছিল গুজব। আর গত বছর থেকে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে না।

শিক্ষামন্ত্রীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এবার সারা দেশে মোট ২১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৩৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। তাদের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার্থী ১৭ লাখ ১০২ জন, দাখিল তিন লাখ ১০ হাজার ১৭২ জন পরীক্ষার্থী এবং এসএসসি ভোকেশনালে এক লাখ ২৫ হাজার ৫৯ জন। মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৭ লাখ ৪০ হাজার ৯৩৭ জন নিয়মিত। বাকিদের কেউ গত বছর এক বিষয়ে, কেউবা দুই ও ততোধিক বিষয়ে ফেল করেছিল।

সবমিলে অনিয়মিত পরীক্ষার্থী তিন লাখ ৯১ হাজার ৫৪ জন আর ফল উন্নয়ন প্রার্থী তিন হাজার ৩৪২ জন। গত বছরের তুলনায় এবার পরীক্ষার্থী বেড়েছে এক লাখ তিন হাজার ৪৩৪ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ৫৬ হাজার ২০৫ জন। বাকি ৪৭ হাজার ২২৯ জন ছাত্র। এবার বিজ্ঞানে পরীক্ষার্থী বেড়েছে। এ বছর পাঁচ লাখ ৪১ হাজার ৩৫৩ জন বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে। গত বছর বিজ্ঞানে পরীক্ষার্থী ছিল পাঁচ লাখ তিন হাজার ৬২৭ জন। মোট তিন হাজার ৪৯৭ কেন্দ্রে হচ্ছে এ পরীক্ষা। ২৮ হাজার ৬৮২ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ২৭ জানুয়ারি থেকে কোচিং সেন্টার বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সরকারি এই নির্দেশ বাস্তবায়নে পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নতুন যেকোনো ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হলে তার কিছু ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক থাকে। তবে সরকার ইতিবাচক ফলাফলের জন্যই নতুন পদ্ধতি প্রবর্তন করে থাকে।

শিক্ষার ব্যাপারে যেসব দিক সংস্কার বা হালনাগাদকরণের দাবি আছে, সেগুলো সম্পর্কে আমরা সচেতন। আগামীতে যা করা হবে, শিক্ষার্থীরা তা থেকে যেন ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উপযোগী হিসেবে গড়ে ওঠে সেটি বিবেচনায় রাখা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক প্রমুখ

নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে এবার ২৪ শতাংশ ঝরে পড়েছে। ঝরে পড়াদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কারিগরি বোর্ডে, ৫৯ শতাংশের বেশি। তবে সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে ঝরে পড়া হারের শীর্ষে কুমিল্লা বোর্ড। এই বোর্ডে এবার দুই লাখ ১৬ হাজার ৮৯০ জন পরীক্ষার জন্য নবম শ্রেণীতে নিবন্ধন করে। অথচ পরীক্ষা দিচ্ছে এক লাখ ৫৪ হাজর ৪২৪ জন। শতাংশ হিসেবে ২৯ শতাংশের বেশি।

ঝরে পড়ার হারে সাধারণ বোর্ডের মধ্যে দ্বিতীয় বোর্ডের মধ্যে রয়েছে সিলেট বোর্ড। ওই বোর্ডে ২৩ দশমিক ৩১ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। আর তৃতীয় স্থানে রয়েছে যশোর বোর্ড। এই বোর্ডে ২৩ দশমিক ০৮ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে।

এসএসসিতে অংশ নেয়া ১৭ লাখ ১০২ শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রী আট লাখ ৭৭ হাজার ৪৪১ জন। বাকি আট লাখ ২২ হাজার ৬৬১ জন ছাত্র। দাখিলে তিন লাখ ১০ হাজার ১৭২ জনের মধ্যে ছাত্রী এক লাখ ৫৮ হাজার ৬৮২ জন। বাকি এক লাখ ৫১ হাজার ৪৯০ জন ছাত্র। এসএসসি ভোকেশনালে এক লাখ ২৫ হাজার ৫৯ জনের মধ্যে ছাত্রী ২৮ হাজার ৭৬৯ জন। বাকি ৯৬ হাজার ২৯০ জন ছাত্র।

সূত্র জানায়, প্রশ্নপত্র বহন ও পরীক্ষাসংক্রান্ত সব ধরনের কাজে জড়িত কেউ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না। কেবল কেন্দ্র সচিব ক্যামেরা ও ইন্টারনেট সংযোগবিহীন একটি সাধারণ মোবাইল ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু তা নিয়ে তিনি পরীক্ষা কক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে সিটে বসতে হবে। শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রে প্রবেশের পাঁচ মিনিট পর বা পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে পরীক্ষার বিষয়ের সেট কোট এসএমএসে জানানো হবে।

আগস্ট ১০, ২০২৩ at ১১:০৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর