নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকাকে আটকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। তবে অভিযুক্তরা দাবি করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষিকা এ টাকা তাদের ‘মিষ্টি’ খাওয়ার জন্য দিয়েছেন। পরে ক্ষমা চেয়ে সেই টাকা বিকাশের মাধ্যমে ফেরত দিয়েছেন তারা।
এর আগে গত শুক্রবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট অভিযুক্ত শিক্ষার্থী জয় পাল ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আরো পড়ুন :
> নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক চুক্তিতে আগ্রহী নয় বাংলাদেশ
> অভয়নগরে কথিত সাংবাদিক পরিচয়ে মাদক বিক্রেতাকে গণধোলাই
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষিকা নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নাহিদ সুলতানা।
অভিযুক্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের জয় পাল এবং বাংলা বিভাগের মারুফুল হাসান মারুফ। তারা উভয়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী।
জয় পাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক এবং মারুফ ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে পরিচিত। তারা উভয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-বেরুনী হলের আবাসিক ছাত্র।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম এলাকায় বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে আসেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষিকা। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী এসে তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নিজেকে নোবিপ্রবির সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পরিচয় দেন এবং ব্যাগ থেকে নিজের আইডি কার্ড বের করে দেখান। এরপরও তাদের বহিরাগত আখ্যায়িত করে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় গোপনে অভিযুক্তদের ছবি তুলে রাখেন ভুক্তভোগী শিক্ষক।
পরবর্তীতে ভুক্তভোগীরা জাবির বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুমতাহানা মৌকে ঘটনাটি জানান। মুমতাহানা মৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. রাসেল মিয়া স্বাধীনের সহায়তায় অভিযুক্তদের শনাক্ত করলে অভিযুক্তরা বাংলা বিভাগে এসে ক্ষমা চান এবং বিকাশের মাধ্যমে আদায়কৃত টাকা ফেরত দেন।
এ বিষয়ে বাংলা বিভাগের শিক্ষক মুমতাহানা মৌ বলেন, ওই শিক্ষিকা আমার পূর্বপরিচিত নয়। তবে ঘটনাক্রমে বিষয়টি জানতে পেরে সহকর্মী হিসেবে আমি সেখানে যাই। মুঠোফোনে ধারণকৃত ছবি দেখে অভিযুক্তদের শনাক্ত করতে সক্ষম হই। তারা দুজনই ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী। পরে বিষয়টি প্রক্টরকে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত জয় পাল ঢাকা পোস্টকে জানান, বিকেলে আমরা ফুটবল খেলা শেষে হলে ফিরছিলাম। তখন আমরা জিমনেসিয়াম এলাকাতে দেখি উনারা দুজন আপত্তিকর অবস্থায় বসে আছে। এ সময় দেখি মহিলা স্মোকিং করছে। আমরা তাদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করি যে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী কিনা। তখন তারা তাদের পরিচয় দেয় ক্যাম্পাসের ৪২ ব্যাচ বলে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসিন হলের শিক্ষার্থী বলেও পরিচয় দেন। তাদের অসংলগ্ন কথাবার্তাতে আমরা তাদেরকে আরও বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে থাকি। এসময় তারা আমাদেরকে বিভ্রান্তিকর উত্তর দিতে থাকেন। যদি মহিলাটা তখনি আমাদের বলতেন যে তিনি নোয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। এই পরিচয় যদি আগেই দিতো তাহলে আমরা তাদেরকে এভাবে কিছু জিজ্ঞেস করতাম না।
তিনি আরও বলেন, উনাদের অসংলগ্ন কথাবার্তার জন্য তখন আমরা নিরাপত্তা শাখায় যোগাযোগ করতে চাইলে তারা পরিচয় গোপন রাখার শর্তে মিষ্টি খাওয়ার জন্য আমাদের ২ হাজার টাকা দেন। এখানে জোরপূর্বক টাকা আদায়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তারপরও আমরা ভুল বুঝতে পেরে বিকাশের মাধ্যমে টাকা ফেরত দিয়েছি এবং বিভাগের শিক্ষকের কাছে ক্ষমা চেয়েছি।
তবে এ ঘটনা অস্বীকার করে অভিযুক্ত মারুফুল হাসান বলেন, ঘটনাটি মিথ্যা ও বানোয়াট। এই ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই। এদিকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ভুক্তভোগী শিক্ষক ড. নাহিদ সুলতানাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ঘটনাটি জানার পর ওই শিক্ষিকার সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু তিনি লিখিত অভিযোগ করতে চাননি। তারপরও বিশ্ববিদ্যালয় স্বপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা নেবে। বিষয়টি সম্পর্কে উপাচার্য স্যার অবগত আছেন। আগামী দুই-একদিনের মধ্যে আমরা কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠাব।
আগস্ট ১০, ২০২৩ at ২১:২৯:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর