মানচিত্রে নেই, জনশ্রুতিতে জীবন্ত ভূতুড়ে গ্রাম

ছবি- সংগৃহীত।

গ্রামটি নিয়ে প্রায়শই লেখালিখি হয় পত্রপত্রিকার পাতায়। কিন্তু, সেই গ্রামটিকে খুঁজে পাওয়া দুরূহ। কারণ দেশের মানচিত্রে কোথাও সেই গ্রামটিকে দেখতে পাওয়া যায় না। গ্রামটির বাতাসে নাকি সব সময় ভেসে বেড়ায় কারো আর্তনাদ। কেউ যদি ভুল করেও সেই গ্রামে ঢুকে পড়ে, তা হলে তার বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা খুবই কম।

জাপানের ইনুনাকি নামের গ্রামটিকে তাই ‘ভূতুড়ে গ্রাম’ বলে ডাকেন অনেকে। কিন্তু অতিপ্রাকৃত বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গ্রামটি নিজেই একটা প্রহেলিকা। সে নিজেই যেন এক ‘প্রেত’।

আরো পড়ুন :

> মার্কিন সাবমেরিন আসার পর ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল উত্তর কোরিয়া
> পাঁচবিবিতে জাতীয় মৎস সপ্তাহ-২৩ উদ্বোধন

জানা যায়, ১৯৭০ দশকের শুরুর দিকে হিসায়ামা শহরে যাওয়ার পথে এক তরুণ যুগলের গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। এরপর তারা ঘুরতে ঘুরতে এক জঙ্গলে ঢুকে পড়েন। সেখানে তারা একটি পরিত্যক্ত গ্রাম দেখতে পান। এ সময় হঠাৎ তাদের ওপর কাস্তে হাতে এক বৃদ্ধ ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং তাদের হত্যা করেন।

জনশ্রুতি থেকে আরও জানা যায়, প্রতি রাতে ইনুনাকি সেতুর কাছের একটি টেলিফোন বুথ থেকে ইনুনাকি গ্রামে ফোন আসে। আর এই ফোন যে ধরে তার জীবনে অভিশাপ নেমে আসে। এমনকি সে ব্যক্তি বাস্তব পৃথিবী থেকে উধাও হয়ে যায়।

জনশ্রুতি আরো জানায় যে, ইনুনাকি সেতুর কাছে জনবিরল এক জায়গায় একটি টেলিফোন বুথ রয়েছে। আপাত ভাবে অদৃশ্য ইনুনাকি গ্রাম থেকে প্রতি রাতে সেখানে একটা ফোন আসে। কেউ যদি উত্তর দেওয়ার জন্য বুথ থেকে ফোনটি তোলেন, তা হলে তার ওপর নেমে আসে মারাত্মক অভিশাপ। তিনি বাস্তব পৃথিবী থেকে উধাও হয়ে যান এবং অদৃশ্য গ্রাম ইনুনাকির বাসিন্দা হয়ে পড়েন। অভিশপ্ত মানুষটির নাকি নিজের দেহ বা মনের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণই থাকে না।

এই সব কাহিনি শুনলে মনে হতেই পারে, এ সব নেহাতই ছেলেভোলানো গল্প। কিন্তু জাপানের এক বড় অংশের মানুষ ইনুনাকি গ্রামটিকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেছেন এবং আজও করে চলেছেন। পুরনো দস্তাবেজ ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, তোকুগাওয়া জমানায় (১৬০৩-১৮৬৭) ওই অঞ্চলে ইনুনাকিদানি নামে সত্যিই এক গ্রাম ছিল। গ্রামের মানুষের প্রধান জীবিকা ছিল চিনামাটির সামগ্রী তৈরি করা। ১৮৮৯ সালে এই গ্রামটিকে ইয়োশিকাওয়া নামের আর একটি গ্রামের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। আরো পরে অন্যান্য এলাকা যুক্ত হতে থাকলে ইনুনাকিদানি তার অস্তিত্ব হারায়।

বাস্তবে ইনুনাকি গ্রামের অস্তিত্ব আছে কিনা, এ তথ্য জানতেও কম চেষ্টা হয়নি। আজও মানুষজন এ গ্রাম খুঁজে বের করতে চেষ্টা করে চলেছেন। পুরোনো দলিলপত্র থেকে জানা যায়, তোকুগাওয়া আমলে ইনুনাকিদানি নামে সত্যিই একটি গ্রাম ছিল। চিনামাটির জিনিসপত্র তৈরি করাই ছিল এ গ্রামের মানুষের প্রধান কাজ।

কয়েক যুগ পর এই গ্রামটিকে ইয়োশিকাওয়া নামের আর একটি গ্রামের সঙ্গে একীভূত করা হয়। আরও পরে এই গ্রামের সঙ্গে আরও এলাকা যুক্ত হতে থাকলে এক সময় ইনুনাকিদানি গ্রামের অস্তিত্ব হারিয়ে যায়।

ইনুনাকি গ্রামকে নিয়ে বিভিন্ন ‘ভূতুড়ে’ কিংবদন্তির মূলে নাকি রয়েছে একটি সুড়ঙ্গ। আসলে ইনুনাকি টানেল নামে দু’টি সুড়ঙ্গ রয়েছে। প্রথমটি তৈরি হয় ১৯৪৯ সালে, দ্বিতীয়টি ১৯৭৫-এর আশপাশে। পুরনো সুড়ঙ্গটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকে। তাকে ঘিরে ছড়াতে থাকে বিচিত্র সব কাহিনি।

১৯৮৮ সালে পাঁচ জন তরুণ এক কারখানা শ্রমিককে অপহরণ করে পুরনো সুড়ঙ্গে নিয়ে এসে অত্যাচার করে হত্যা করে। এই পাঁচ জন ওই শ্রমিকের গাড়ি চুরি করার চেষ্টা করেছিল। খুন করার পরে ওই সুড়ঙ্গের ভেতরেই তারা শ্রমিকের দেহ পুড়িয়ে দেয়। পরে ওই পাঁচ জন ধরা পড়ে এবং তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।

ওই শ্রমিকের আত্মা নাকি সুড়ঙ্গে বাস করে এবং সে ভয়ানক প্রতিশোধপ্রবণ। ২০০০ সালে ইনুনাকিগাওয়া নদীর বাঁধের কাছে এক ব্যক্তির মৃতদেহ পাওয়া যাওয়ার পর থেকে এই কাহিনি আরো বেশি করে ছড়াতে শুরু করে।

জুলাই ২৫, ২০২৩ at ১৩:৫২:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর