নিয়োগ একজনের দ্বায়িত্ব পালন করেন অন্যজন

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আয়া জাহানারা আক্তার বিউটি দেড় দশকের বেশি সময় ধরে কর্মস্থলে নিজে কাজ না করে অন্যকে দিয়ে করিয়ে নিয়মিত বেতন তুলে যাচ্ছেন।

এভাবেই নিজের চাকরি অন্য নারীদের দিয়ে করিয়ে যাচ্ছেন আয়া পদে নিয়োগপ্রাপ্ত বিউটি আক্তার। বিষয়টি কর্তৃপক্ষ অবগত থেকেও অদৃশ্য কারণে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।

আরো পড়ুন :

তালায় অনলাইন জুয়া বাল্যবিবাহ ইভটিজিং চুরি মাদক ও কিশোর অপরাধ দমনে নানা উদ্যোগ গ্রহন
> ৮ দফা দাবিতে পাবনায় মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের অবস্থান  ধর্মঘট পালন

বিউটির পরিবর্তে কর্মরত খালেদা আক্তারের বাড়ি উপজেলার বিরামপুর গ্রামে। তার স্বামী বিল্লাল মিয়া পেশায় একজন মোটরসাইকেল চালক।

বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানাগেছে, জাহানারা আক্তার বিউটি আয়া পদে থেকে ২৫ হাজার টাকা বেতন তুলেন। কিন্তু তিন হাজার টাকায় খালেদা নামে ওই হতদরিদ্র খালেদা আক্তারকে দিয়ে আয়ার কাজ করাচ্ছেন।

আরও জানাযায়, এরআগে একই বেতনে ইয়াসমিন নামে এক নারী দুই বছর কাজ করেছেন। বেতন বাড়ানোর চাপ দিতেই তাকে বাদ দেওয়া হয়। এভাবে দেড় দশকের বেশি সময় ধরে অন্য নারীদের দিয়ে আয়ার কাজ করাচ্ছেন বিউটি।

নাম প্রকাশ না করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফ জানান, বিউটি আয়ার চাকরি নিলেও সে ধনী পরিবারের। তার আত্মীয়-স্বজনরাও বিভিন্ন বড় বড় পদে সরকারি চাকরি করে। তাই আয়ার কাজ করতে তার আত্মসম্মানে লাগে। সে কারণেই তার চাকরির শুরু থেকে টাকা দিয়ে লোক রেখে তার জায়গায় অন্যকে কাজ করান। তার প্রভাবশালী আত্মীয়দের কারণে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের অধিকাংশই আয়া বিউটিকে চিনেন না।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ২৮ অক্টোবর মোহনগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আয়া পদে যোগদান করেন জাহানারা আক্তার বিউটি। বর্তমানে তার বেতন ২৫ হাজার টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিউটির বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুরে। তার স্বামী শাহ জালাল কিবরিয়ার বাড়ি ময়মনসিংহে। গত রমজানে তার স্বামী মারা যায়। কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন থেকেই বিউটি মোহনগঞ্জের কলেজ রোডে বসবাস করেন।

খালেদা আক্তার বলেন, আমি গরীব মানুষ। তাই তিন হাজার টাকায় আয়ার কাজে রাজি হয়েছি। তিনি আমাকে বলেছেন, তুমি এই টাকায় কাজ না করলে অন্যজনকে নিয়ে আসবো। আরও অনেকে এ কাজ করতে আগ্রহী।

অভিযুক্ত আয়া জাহানারা আক্তার বিউটি অন্যদের দিয়ে কাজ করানোর বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, চাকরির শুরুতে নিজেই কাজ করেছি। ৩-৪ বছর ধরে কোমরের হাড়ে ব্যথার কারণে উপুড় হয়ে কাজ করতে পারি না। তাই অন্যজনকে দিয়ে কাজ করাচ্ছি। তবে আমি নিজেও উপস্থিত থাকি। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি এতদিন মানবিকভাবে দেখেছেন বলেই এটি সম্ভব হয়েছে।

আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. পার্থ সরকার বলেন, বিষয়টি আগে আমার জানা ছিল না। দুই-তিন আগে সাংবাদিকদের মাধ্যমে জেনে বিউটিকে বলা হয়েছে নিজের কাজ নিজে করার জন্য। আগে বিউটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসতোই না। এখন অন্য একজন থাকলেও বিউটি উপস্থিত থাকেন। মাঝে মাঝে টুকটাক কাজও করেন।

তিনি আরও বলেন, বিষয়টি সিভিল সার্জনকে অবহিত করা হয়েছে। এদিকে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাও বিউটিকে ডেকে নিজের কাজ নিজে করতে হবে বলেছেন। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষে সঙ্গে কথা বলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর দুই-তিন দিন ধরে বিউটি নিজেও কর্মস্থলে উপস্থিত থাকছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. রেহানা পারভীন বলেন, আয়া বিউটির বিষয়ে অবগত হয়েছি। সিভিল সার্জন মহোদয়কে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। আমি ঢাকা ট্রেনিংয়ে আছি। এসে স্যারের সঙ্গে পরামর্শ করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিষয়টি অবহিত করলে জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেলিম মিঞা বলেন, এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও)সহ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কেউ কিছু আমাকে জানায়নি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।

জুলাই ১৯, ২০২৩ at ১৯:৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর