চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর এসপির পত্নী মিতু হত্যার পলাতক আসামি কালু গ্রেফতার

চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর পুলিশের সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত পলাতক আসামি খাইরুল ইসলাম কালুকে ৮ বছর পর গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।শুক্রবার (২ জুন) রাত ২টার দিকে নগরীর আকবর শাহ থানার ৯নং ওয়ার্ডে বেলতলীঘোনা নামক এলাকা থেকে কালুকে গ্রেফতার করা হয়।গ্রেফতারের পর শনিবার (৩ জুন) সকালে তাকে রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাঙ্গুনিয়া থানায় দায়ের করা একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালত পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব মিল্কী।

গ্রেপ্তারকৃত খায়রুল ইসলাম কালু রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বদিউদ্দিন তালুকদার বাড়ির মৃত মতিউর রহমানের ছেলে।পিবিআইয়ের সহকারী পুলিশ সুপার নাঈমা সুলতানা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।তিনি বলেন, আসামি কালু বিভিন্ন ছদ্মবেশ নিয়ে গত ৮ বছর ধরে গ্রেফতার এড়াতে সক্ষম হয়েছিলেন। সর্বশেষশুক্রবার (২ জুন) দিবাগত রাত ২টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর আকবর শাহ এলাকা থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই)। তিনি আকবর শাহ এলাকায় একটি ভবনে নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, আসামি কালু চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর সাবেক এসপি পত্নী মিতু হত্যার কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া আরেক আসামি মুসার সহযোগী ছিলেন। মোটরসাইকেল থেকে মিতুকে লক্ষ্য করে গুলি করেছিলেন সে। পলাতক কালুকে গ্রেফতারে পরোয়ানার পাশাপাশি বিদেশযাত্রা ঠেকাতে তার পাসপোর্ট জব্দের আদেশ দিয়েছিলেন আদালত।রাঙ্গুনিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুব মিল্কী বলেন, কালুর বিরুদ্ধে মিতু হত্যা মামলা ছাড়াও ২০১২ সালে রাঙ্গুনিয়া থানার পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় মামলা রয়েছে। ওই মামলায় পলাতক আসামি ছিলেন কালু।

জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৫ জুন চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। ঘটনার পরদিন জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা দাবি করে বাবুল আক্তার নিজেই বাদী হয়ে নগরীর পাচলাইশ থানায় মামলা করেন।তদন্ত শেষে পিবিআই ২০২১ সালের ১২ মে এ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। একই দিন বাবুলের শ্বশুর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় বাবুলসহ আটজনকে আসামি করা হয়। ওই দিনই মামলাটিতে বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করে পিবিআই।

আরো পড়ুন :
> কেশবপুর উপজেলা প্রেসক্লাবের ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন সম্পন্ন সাঈদ সভাপতি, মিজান সম্পাদক নির্বাচিত
> পত্নীতলায় টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনতাই, থানায় অভিযোগ দায়ের।

এদিকে, প্রথম মামলায় পিবিআইয়ের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর নারাজির আবেদন করেন বাবুলের আইনজীবী। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ৩ নভেম্বর নারাজি ও পিবিআইয়ের প্রতিবেদন খারিজ করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন। এরপর দুটি মামলাই তদন্ত করতে থাকে পিবিআই। তবে পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী গত বছরের ২৫ জানুয়ারি মিতুর বাবার দায়ের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়।

এরপর একই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে মিতু হত্যা মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারসহ ৭ জনকে আসামি করে আদালতে ২ হাজার ৮৪ পৃষ্ঠার চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এই অভিযোগপত্র গত ১০ অক্টোবর গ্রহণ করেন আদালত। অভিযোগপত্রে মিতুর স্বামী বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। আরও যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলা, মো. মোতালেব মিয়া প্রকাশ ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খায়রুল ইসলাম কালু এবং শাহজাহান মিয়া। অভিযোগপত্রের আসামিদের মধ্যে এখন শুধু মুসা পলাতক আছেন। বাকীদের মধ্যে চারজন কারাগারে ও একজন (এহতেশামুল ভোলা) জামিনে রয়েছেন।

তবে, খুনের পর মুসা পলাতক থাকলেও তার স্ত্রী পান্না আক্তার ২০১৬ সালের ৪ জুলাই চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেছিলেন, ওই বছরের ২২ জুন বন্দর থানার তৎকালীন ওসি মহিউদ্দিন সেলিমের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল বন্দর এলাকায় তার এক পরিচিত ব্যক্তির বাসা থেকে মুছাকে ধরে নিয়ে যান। অবশ্যঃ পুলিশের পক্ষ থেকে এ দাবি নাকচ করে দেয়া হয়েছিল।

পরবর্তীতে গত ৯ এপ্রিল প্রথম সাক্ষী হিসেবে মোশাররফ হোসেনের সাক্ষ্যের মধ্য দিয়ে মামলাটির বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। ২ মে আদালতে সাক্ষ্য দেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন।বর্তমানে চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।

জুন ০৩, ২০২৩ at ১৭:৪৯:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এম/মেমহ