অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে ফের জোর

ছবি- সংগৃহীত।

হালনাগাদে তথ্য নেই দেড় লাখ বৈধ অস্ত্রের, পুলিশ ও বিজিবির বিশেষ অভিযানপ্রচুর অবৈধ অস্ত্র দেশে ঢুকেছে বলে গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছে সরকার। অনেকে অস্ত্র রাখার জাল লাইসেন্স বানিয়ে অস্ত্র বহন করছেন। এমন পরিস্থিতিতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বড় আকারে অভিযান চালাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

রাজধানীসহ সারাদেশে উঠতি মাস্তান, পেশাদার সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী এমনকি কিশোর গ্যাংয়ের হাতে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্রের মজুদ রয়েছে। বিভিন্ন সীমান্তপথে আসছে এসব অস্ত্র। নানা কৌশলে এর চালান হাতবদল করছে একাধিক চক্র। চক্রগুলো অস্ত্রের ভুয়া লাইসেন্সও তৈরি করছে। যশোর, খুলনা, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ কেন্দ্রিক ভারতীয় অস্ত্র চোরাচালান চক্র তৎপর রয়েছে।

আর বান্দরবান ভিত্তিক গ্রুপগুলো অস্ত্র আনছে মিয়ানমার থেকে। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার গোপন প্রতিবেদনে ভিত্তিতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযানে জোর দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তাগিদে পুলিশ সদর দপ্তর এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে। র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবির অভিযানে ধরা পড়ছে অস্ত্রের চালান।

এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন্স) হায়দার আলী খান ভোরের কাগজকে জানান, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্রধারীদের ধরতে বিশেষ অভিযান চলছে। বিশেষ দিবস বা দিনকে সামনে রেখেও বিশেষ অভিযান চালানো হয়। অস্ত্র উদ্ধার অভিযানকে চলমান প্রক্রিয়া উল্লেখ করে তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হচ্ছে।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মুখপাত্র, আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, অস্ত্র উদ্ধার অভিযান একটি চলমান প্রক্রিয়া। অভিযান জোরদার করতে সম্প্রতি সবকটি ব্যাটালিয়ানে তাগিদ দেয়া হয়েছে।

এদিকে গত রবিবার রাতে র‌্যাব-২ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চা?লি?য়ে অবৈধ অস্ত্র কারবারি চক্রের চক্রের ৬ গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- চক্রের মূলহোতা মো. পলাশ শেখ (৩৮), তার সহযোগী মো. মনোয়ার হোসেন (৩২), রশিদুল ইসলাম (৪০), নাজীম মোল্লা (৩৫), মারুফ হোসেন (২৪) ও মো. নাইমুল ইসলাম (২২)। তা?দে?র কাছ থে?কে বিপুল পরিমান দেশি-বিদেশি অস্ত্র, গোলাবারুদ ও ভুয়া লাইসেন্স উদ্ধার করা হ?য়। এই চক্রটির মূল কাজ ছিল পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ এবং ভুয়া লাইসেন্স তৈরী করে বিভিন্ন বেসরকারী সিকিউরিটি কোম্পানিতে চাকরি দেয়ার প্রলোভনের মাধ্যমে বিভিন্ন বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে অবৈধ অস্ত্র বিক্রয় করা।

জানা গেছে, সীমান্ত পাহারার দায়িত্ব বিজিবির। তবে বিশাল এলাকার অনেক অংশ এখনো অরক্ষিত। এই সুযোগে চলছে চোরাচালান। এর মধ্যে ভারতীয় অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের বড় বাজার তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে। আর ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশে পাচারের জন্য অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র কারখানা আছে। ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকার গাবতলী থেকে একটি প্রাইভেটকারসহ পাঁচজনকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের কাছ থেকে ম্যাগজিন ও গুলিসহ আটটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে ভারতীয় অবৈধ অস্ত্রের বাংলাদেশে চোরাচালান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পায় পুলিশ।

তারা গোয়েন্দাদের জানায়, যত প্রয়োজন তত অস্ত্র দেয়া যাবে। ভারত থেকে যেসব অস্ত্র আসে তা ওয়েল ফার্নিসড বলে জানান পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা। এসব আগ্নেয়াস্ত্র বাংলাদেশে সর্বনিম্ন ৮০-৯০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। চক্রটি ২০১৪ সাল থেকে ভারত থেকে অস্ত্র আনছে। ওইসময় আটকদের একজন আকুল হোসেন যশোরের ছাত্রলীগ নেতা। যশোর সীমান্ত দিয়েই প্রধানত ভারতীয় অস্ত্র আসে।

বেনাপোল সীমান্তের কাছে পুটখালী নামে একটি গ্রাম আছে। তার অপরদিকে ভারত। ভারতের ওই এলাকায় কমপক্ষে তিনজন অস্ত্র ব্যবসায়ী আছে যারা বাংলাদেশে অস্ত্র পাঠায়। ভারতে পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারে অবৈধ অস্ত্রের কারখানা আছে। সূত্রমতে, সীমান্তের ওপারে ভারতীয় গ্রামগুলোতে খড়ের গাদা, মাটির গর্ত, পুকুরের মধ্যে পলিথিন নিয়ে সুরক্ষিত করে অস্ত্র জমিয়ে রাখা হয়। এরপর সুযোগ বুঝে সীমান্তের গ্রামগুলোতে যারা ফসলের ক্ষেতে কাজ করেন তাদের মাধ্যমে কাঁটাতারের বেড়ার এপাশে একটি একটি করে অস্ত্র পাঠানো হয়।

আরো পড়ুন:
>বর্নিল আয়োজনে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ও নবীন বরণ অনুষ্ঠান পালিত
>এনআইডি’র ভুল সংশোধনে কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নিতে হবে

মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ, অবৈধভাবে জমি দখলকারী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা এসব অস্ত্রের মূল ক্রেতা। নির্বাচনের সময়ও এই অস্ত্রের চাহিদা বাড়ে। বাংলাদেশে ভারতীয় অস্ত্র চোরাচালানের যশোর ও খুলনা ভিত্তিক অন্ততঃ পাঁচ-ছয়টি চক্র আছে। এই চক্রগুলো আবার পারস্পরিক যোগাযোগ রাখে। তবে স্বার্থের দ্ব›দ্ব হলে একটি চক্র আরেকটি চক্রের তথ্য ফাঁস করে দেয়। ধৃত চক্রটি ২০১৪ সাল থেকে দুইশরও বেশি অস্ত্র ভারত থেকে আনার কথা স্বীকার করেছে। তারা শুধু পিস্তল নয়, রিভলবার ও বন্দুকও আনে। গুলিও ভারত থেকে আসে।

অন্যদিকে পুলিশ বলছে, সারা দেশে প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার ৩১২টি অস্ত্রের লাইসেন্স আছে। তবে মাত্র ৪৩ হাজার ৩১২টি অস্ত্রের হালনাগাদ তথ্য পুলিশ সদর দপ্তর, পুলিশের বিশেষ শাখা এসবি এবং সিআইডির কাছে রয়েছে। বাকিগুলোর কোনো হালনাগাদ তথ্য নেই। সেগুলো কী লাইসেন্সধারী ব্যক্তির হাতে রয়েছে না অবৈধভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে তা নিয়ে সংশয়ে আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দীর্ঘদিন সেই অস্ত্রগুলোর হালনাগাদ তথ্য না থাকায় হাতবদলের আশঙ্কা রয়েছে।

ফেব্রুয়ারি ২৩.২০২৩ at ০৯:৫৩:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মেইস/এসআর