রাতে মুখোমুখি মেসি-রোনালদো দ্বৈরথের ইতিকথা!

ছবি: সংগৃহীত

ক্লাব পর্যায়ের একটা প্রীতি ম্যাচ নিয়ে এত উত্তেজনা হয়তো আগে কখনো দেখা যায়নি।

বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) কিং ফাহাদ স্টেডিয়ামে সৌদি অলস্টার দলের মুখোমুখি হচ্ছে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি। যে ম্যাচ দিয়ে দীর্ঘ দুই বছর পর মুখোমুখি হবেন সর্বকালের দুই সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। অনেকের মতে, এটিই তাদের শেষবারের মতো মুখোমুখি হওয়া।

কাতার বিশ্বকাপে লিওনেল মেসির বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের বিপরীতে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর একাদশে জায়গা হারানো ও কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাদ পড়াটা রীতিমতো ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ও জমজমাট রাইভালরির সমাপ্তি এঁকে দিয়েছে।

মেসি সর্বকালের সেরার বিতর্কে পেলে-ম্যারাডোনার পাশে জায়গা পাচ্ছেন। অন্যদিকে রোনালদোকে অন্যতম সেরার মর্যাদা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। তবে এর আগের দেড় যুগ যেভাবে দুজন একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেছেন; তা ফুটবল কেন, যেকোনো খেলার ক্ষেত্রেই বিরল। ক্রিকেটে শচীন টেন্ডুলকার-ব্রায়ান লারা বা পন্টিং, কিংবা টেনিসে রোজার ফেদেরার-নাদাল-জোকোভিচরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও, দীর্ঘসময় ধরে এমন একটানা লড়াই কেউই করতে পারেননি। তবে মেঘে মেঘে বেলা গড়িয়েছে অনেক।

আরো পড়ুন:
> রাতে মুখোমুখি মেসি-রোনালদো দ্বৈরথের ইতিকথা!
> ঝালকাঠি হাসপাতালে দুই দফায় বদলেছে নকশা, একই কাজের বরাদ্দ বেড়েছে ৪০ কোটি

মেসি-রোনালদোর ক্যারিয়ারও মধ্যগগন ছেড়ে এখন অস্তাচলে। ৩৭ বছর বয়সি রোনালদো তো ইউরোপের প্রতিযোগিতার মঞ্চ ছেড়ে দিয়ে এই মৌসুমে পা রেখেছেন এশিয়ার বিকাশমান ফুটবলের জগতে। ৩৫ বছর বয়সি মেসি অবশ্য পুরোনো ওয়াইনের মতো আরও জমজমাট! তবে ফুটবল রসিকদের আরও একবার মেসি-রোনালদো দ্বৈরথ দেখার সুযোগ মিলছে বৃহস্পতিবার (আজ)। হয়তো শেষবারের মতোও! কিং ফাহাদ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায় সৌদি অলস্টার দলের অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পরে নামবেন রোনালদো।

ক্লাব আল নাসরের হয়ে এখনও অভিষেক না হলেও সৌদি আরবের মাটিতে প্রথমবার স্বাগতিক ক্লাবের হয়ে নামছেন পাঁচবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী ফুটবলার। ইউরোপের কঠিন যুদ্ধের ময়দানে অজস্র যুদ্ধে বিজয় এনে দেয়া যোদ্ধার চোখের সামনে হয়তো আজ ভাসবে গোটা ক্যারিয়ারটাই।

বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজিতে পাড়ি জমানো মেসিও আজ প্রথমবার রোনালদোর মুখোমুখি ভিন্ন জার্সিতে। রোনালদো রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে য়্যুভেন্তাসে যোগ দেয়ার পরও তারা মুখোমুখি হয়েছিলেন। তবে তখনও মেসির গায়ে ছিল বার্সেলোনার জার্সি। যে জার্সিতে তার আজকের মেসি হয়ে ওঠা।

মেসি-রোনালদো দ্বৈরথের শুরুটা কবে?

প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ফিরে যেতে হবে পনেরো বছর আগে। রোনালদো তখনও খেলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে। ২০০৮ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ইউনাইটেড-বার্সেলোনা। প্রথম লেগের খেলায় ক্যাম্প ন্যুতে গোলশূন্য ড্র করেছিল দুদল। তবে ওল্ড ট্রাফোর্ডে দ্বিতীয় লেগের খেলায় পল স্কোলসের একমাত্র গোলের জয়ে ফাইনালে পা রাখে রেড ডেভিলরা।

এক মৌসুম পর ফাইনালে ফের দেখা হয়েছিল বার্সেলোনা-ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের। সে দেখায় বিজয়ীর হাসি অবশ্য মেসিদের ঠোঁটেই ধরা দিয়েছিল। সেই ফাইনালে গোলও করেছিলেন আর্জেন্টাইন খুদে জাদুকর। হয়েছিলেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ।

এরপর রোনালদো রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেয়ার পর নিয়মিতই দেখা হয়েছে তাদের দুজনের। এল ক্লাসিকো তাতে পায় আলাদা এক মাত্রা। মাদ্রিদ-কাতালান দ্বন্দ্বও যেন পৌঁছে যায় অনন্য মাত্রায়। মেসি-রোনালদো দ্বৈরথে জয়ের পাল্লা ভারী মেসির দিকেই। রোনালদোর দল যেখানে জয় পেয়েছে ১১ ম্যাচ, সেখানে মেসির দলের জয় ১৬ ম্যাচে। গোল করার দিক দিয়েও এগিয়ে মেসি, তবে ব্যবধান মোটে ১ গোলের। রোনালদোর ২১ গোলের বিপরীতে মেসির ঝুলিতে আছে ২২ গোল। তবে অ্যাসিস্ট সংখ্যায় মেসির ধারেকাছেও নেই রোনালদো। মেসি যেখানে ১২টি অ্যাসিস্ট করেছেন, সেখানে রোনালদোর অ্যাসিস্ট সংখ্যা মোটে ১টি।

ফুটবল ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম দ্বৈরথ হয়তো আজই শেষবারের মতো দেখা যেতে পারে। হোক-না প্রীতি ম্যাচ, তারপরও একই মাঠে মেসি-রোনালদো ফের মুখোমুখি। দুই জুজুধন প্রতিপক্ষ শেষবারের মতো দ্বন্দ্বযুদ্ধে। গ্রিক পুরাণ থেকে ফের যেন মর্ত্যে লড়াইয়ে নেমেছেন হেক্টর-অ্যাকিলিস। জয়-পরাজয় ছাপিয়ে যেখানে বড় হয়ে উঠছে গল্পের শেষটার সাক্ষী হওয়া।

জানুয়ারি ১৯, ২০২৩ at ২০:০১:০০(GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ/ইমস