নিজের উদ্ভাধনকৃত লোহার স্কোয়ার বারের ব্যন্ডিং মেশিনের সামনে টিপলুু বড়ুয়া

একমাসের কাজ হয় ৩ দিনে লোহাকে বিভিন্ন আকৃতি এবং ডিজাইন দেওয়া যাচ্ছে অনায়াশে লোহার স্কোয়ার বারের ব্যন্ডিং মেশিন উদ্ভাধন করলেন রাউজানের যুবক টিপলুু বড়ুয়া তৈয়ব চৌধুরী, রাউজান। প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকলে যে যেকোন কাজে সফল হওয়া যায় তার জলন্ত উদাহরণ টিপলু বড়ুয়া নামের রাউজানের এক যুবক। পেশায় একজন গ্রিলমিস্ত্রী।

এ যুবক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোতে না পারলেও ছোটবেলা থেকে ওয়ার্কসপে হাতে কলমে নেওয়া শিক্ষা এবং নিজের উদ্ভাবনী চিন্তা চেতনার মাধ্যমে যিনি আবিস্কার করতে সক্ষম হয়েছেন এমন এক মেশিন যা দিয়ে লোহাকে বিভিন্ন আকৃতি এবং ডিজাইন দেওয়া যাচ্ছে অনায়াশে। এই মেশিনের সাহায্যে একজন মিস্ত্রির ১ মাসের কাজ ৩দিনে করা সম্ভব বলে দাবি করছেন এর উদ্ভাবক।

বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সাধারণ মিস্ত্রির যে গ্রিল ডিজাইন দিতে সময় লাগছে ঘন্টার পর ঘন্টা একই কাজ মেশিনটির মাধ্যমে সম্ভব হচ্ছে মাত্র কয়েক মিনিটে। এমন লোহার স্কোয়ার বারের ব্যন্ডিং মেশিন দেশের বাইরে পরিলক্ষিত হলেও দেশে এই প্রথম বলে দাবী ঐ যুবকের। তিনি জানান, শ্রমিকদের দ্বারা গ্রিল ওয়ার্কসপে রডের ডিজইনের কাজ করা বেশ ঝামেলার।

এ কারণে শ্রমিকরা তেমন কাজে আসতে চাইতো না। যার দরুণ গ্রাহককে যথাসময়ে কাজ বুঝিয়ে দিতে কষ্ট হতো। তখন তিনি চিন্তা করলেন এমন একটি মেশিন যদি তৈরি করা সম্ভব যাতে কাজটা দ্রুত সম্ভব হবে এবং শ্রমিকরাও কাজে আগ্রহ পাবে। এমন চিন্তা থেকে রাউজানের কাগতিয়া বাজারের নিজের ওয়ার্কসপে মেশিনটি বানানোর কাজ শুরু করেন ২০১৯ সালের শেষের দিকে।

আরো পড়ুন:
>সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী
>দাঁড়িয়ে পানি পান করলে কী হয়?

এর পর ২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে চারদিকে যখন লকডাউন ও কাজে মন্দা ভাব ঠিক ঐ সময়টাকে কাজে লাগিয়ে ভালভাবে নেমে পড়েন মেশিন তৈরির কাজে। বিভিন্ন রকমের প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে বারবার চেষ্ঠার মাধ্যমে ৩বছরের পরিশ্রমে অবশেষে সফল হন। শুরুর দিকে তার এই কাজে সময় ব্যয় করা এলাকাবাসী অপচয় বললেও এখন সকলের চোখে তিনি একজন সফল উদ্ভাবক।

মানুষ ভিড় জমায় তার এই আবিস্কার দেখার জন্য। যুবক টিপলু বড়ুয়া (৩৫) উপজেলার পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের উত্তর গুজরা ডোমখালি বীরমুক্তিযোদ্ধা সুনীল কান্তি বড়ুয়ার বাড়ির প্রয়াত স্নাগ্ধ বড়ুয়ার ছেলে। ছোটবেলা থেকে পরিবারের হাল ধরতে তিনি গ্রিলওয়ার্সপের কাজে নেমে গিয়েছিলেন। দীর্ঘ ২৬ বছরের কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা তার আজকের সফলতার দুয়ার খুলে দিয়েছে। প্রথমত পরীক্ষা নিরিক্ষা এবং যন্ত্র সংগ্রহের কারণে প্রথম মেশিন তৈরিতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৫লক্ষ টাকা।

তবে এখন এই মেশিন সর্বোচ্চ ১লক্ষ ৮০হাজার মধ্যে তৈরি সম্ভব বলে জানান তিনি। শুরুর দিকে কাজের সফলতা আসার আগে কারো কাছে আর্থিক সহযোগিতা চাননি তবে এখন ব্যক্তি বা সরকারি যেকোন প্রতিষ্ঠান যাদি তাকে পৃষ্টপোষকতা করেন তাহলে তার এই মেশিন সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব বলে জানান। প্রযুক্তির এই যুগে নিজেদের দেশের উদ্ভাবনে হাজারো তরুণের কর্মস্থানের সুযোগ সৃষ্টির সম্ভবনা রয়েছে এই খাতে।

আরো পড়ুন:
>সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী
>দাঁড়িয়ে পানি পান করলে কী হয়?

এ বিষয়ে রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুস সামান শিকদার বলেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান লায়ন সাহাবুদ্দিন আরিফ বলেন, তার এ আবিস্কার আমাদের গর্ব। তাকে সহযোগিতা করা গেলে দেশে আরো নতুন উদ্ভাবক সৃষ্টি হবে এবং লাভবান হবে। তবে তাকে সরকারিভাবে কিভাবে সহযোগিতা করা যায়, তা আমরা দেখছি।

জানুয়ারি ০৬.২০২৩ at ১৩:৫৪:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এসআর