দেশে ১৪ বছরের অর্জন লোডশেডিংয়ে বিসর্জন

ছবি- সংগৃহীত।

দেশের বিদ্যুৎ খাতে গত ১৪ বছরে অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। এ সরকারের আমলে বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। শতভাগ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর সফলতাও দাবি করা হচ্ছে।

২০০৯ সালের তুলনায় বর্তমানে দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা এবং উৎপাদন সক্ষমতা বেড়েছে সাড়ে পাঁচ গুণ। ২০০৯ সালে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ছিল চার হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। ১৩ বছরের ব্যবধানে ২০২২ সালে ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৮২৬ মেগাওয়াট।

রোস্টারভিত্তিক লোডশেডিং

করোনা-পরবর্তীতে এবং ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে সারাবিশ্বের ন্যায় দেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং শুরু হয়। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে ডিজেলভিত্তিক বিদুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়ায় প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি হতে থাকে। ফলে গত ১৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জ্বালানিবিষয়ক এক বৈঠকে এক ঘণ্টা করে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী।

আরো পড়ুন :
>গুঞ্জন সত্যি, সৃজিতের ‌‌সিনেমায় ‘মৃণাল’ চরিত্রে চঞ্চল
>শীতে অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে থাকবে যেভাবে

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি 

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে সমন্বয়, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) লোকসান কমানোসহ নানা কারণে গত ৫ আগস্ট জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করে সরকার। সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়ানোয় জীবনযাত্রা অসহনীয় হয়ে পড়ে।

মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় জানায়, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি। সে কারণে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি), ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডে (ইআরএল) পরিশোধিত এবং আমদানি/ক্রয়কৃত ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন ও পেট্রোলের মূল্য সমন্বয় করে ভোক্তাপর্যায়ে এই দাম পুনর্নির্ধারণ করা হলো।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত জ্বালানি তেল বিক্রিতে (সব পণ্য) ৮০১৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা লোকসান দেয় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন। জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ওই সময় বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতির কারণে বিপিসির আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে জ্বালানি তেলের যৌক্তিক মূল্য সমন্বয় অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল।

আরো পড়ুন :
>গুঞ্জন সত্যি, সৃজিতের ‌‌সিনেমায় ‘মৃণাল’ চরিত্রে চঞ্চল
>শীতে অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে থাকবে যেভাবে

রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানির পরিকল্পনা 

দেশে জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় কম দামে রাশিয়া থেকে তেল আনা যায় কি না—গত আগস্টে এমন একটি প্রস্তাবনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ভারত যদি রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করতে পারে, তাহলে আমরা নয় কেন? এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে তেল আমদানিতে উদ্যোগ নেন সংশ্লিষ্টরা।

বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কাছে তেল বিক্রির প্রস্তাবনা দেয় রাশিয়া। কিন্তু এতে কয়েকটি বাধা লক্ষ্য করা যায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রাজনৈতিক বাধা। ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞায় পড়ে রাশিয়া। ফলে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হলে ইউরোপে বাংলাদেশের যে বিশাল রপ্তানি বাণিজ্য রয়েছে, তা হুমকির মুখে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।

জ্বালানি তেলের দাম পাঁচ টাকা কমানো

গত ২৯ আগস্ট আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ মওকুফ করে জ্বালানি তেলের দাম লিটারে পাঁচ টাকা কমায় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। নতুন এই সিদ্ধান্তের পর ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১০৯ টাকা, পেট্রোল ১২৫ এবং অকটেনের দাম দাঁড়ায় ১৩০ টাকা।

পাইকারি বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি

চলমান সংকটে সব মহলের আপত্তি সত্ত্বেও গত ২৩ নভেম্বর পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ায় সরকার। বিদ্যুতের দাম পাঁচ টাকা ১৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ছয় টাকা ২০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। বৃদ্ধির হার ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। যা চলতি ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে।

আরো পড়ুন :
>গুঞ্জন সত্যি, সৃজিতের ‌‌সিনেমায় ‘মৃণাল’ চরিত্রে চঞ্চল
>শীতে অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে থাকবে যেভাবে

এর আগে মে মাসে গণশুনানিতে বিদ্যুতের দাম পাইকারিভাবে তিন টাকা ৩৯ পয়সা বাড়িয়ে আট টাকা ৫৬ পয়সা করার প্রস্তাব দেয় বিদ্যুতের একক পাইকারি ক্রেতা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)।

ডিসেম্বর ৩০.২০২২ at ১৫:৫৩:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এসআর