আবহাওয়ার বিরূপ আচরণের শঙ্কা

ছবি- সংগৃহীত

লঘুচাপ ও ঘূণিঝড়ের প্রভাব কমে গেলে বাংলাদেশে বৃষ্টি কম হওয়াসহ বঙ্গোপসাগরে প্রাণীদের খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। বেশির ভাগ লঘুচাপ ও ঘূর্ণিঝড় ভারতের দিকে চলে যাওয়ায় প্রাকৃতিক ভারসাম্যে ভয়ংকর বেড়াজালে আটকে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

বর্তমানে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করার সময় ঘূর্ণিঝড়ের নানাবিধ চারিত্রিক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশেষ করে ২০০০ সাল থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা। এছাড়া, ১৯৯১-২০২১ সালের মধ্যে ডিসেম্বরে একবারও কোনো ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানেনি। ডিসেম্বর ঘূর্ণিঝড়প্রবণ হলেও গত ২০ বছরে এ মাসে কোনো ঘূর্ণিঝড়ের দেখা মেলেনি

আবহাওয়াবিদরা জানান, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বাষ্পায়নের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাষ্পায়ন বৃদ্ধি পাওয়ায় সারা পৃথিবীতে এর বিভাজন প্যাটার্নে পরিবর্তন এসেছে। একই সঙ্গে ঊর্ধ্ব আকাশে বায়ুর গতিবেগ ও সমুদ্রপৃষ্ঠের বায়ুর গতিবেগের পার্থক্য বেড়ে যাচ্ছে। এর বাইরেও পূবালী লঘুচাপের বর্ধিতাংশ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে পড়ার প্রবণতা ক্রমাগত কমে যাচ্ছে। ফলে আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে ক্রমাগত লঘুচাপ ও ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির হারও কমে যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, আবহাওয়ার নানাবিধ চারিত্রিক পরিবর্তনের ফলে বিশ্বে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করছে। বর্তমানে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করার সময় ঘূর্ণিঝড়ের নানাবিধ চারিত্রিক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশেষ করে ২০০০ সাল থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা। এছাড়া, ১৯৯১-২০২১ সালের মধ্যে ডিসেম্বরে একবারও কোনো ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানেনি। ডিসেম্বর ঘূর্ণিঝড়প্রবণ হলেও গত ২০ বছরে এ মাসে কোনো ঘূর্ণিঝড়ের দেখা মেলেনি।

আরো পড়ুন :
>ভারতে সেনাবাহিনীর ট্রাক খাদে, ১৬ সেনা নিহত
>সম্মেলনে বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানাল আ. লীগ
>জন্মলগ্ন থেকে আ.লীগের সভাপতি-সম্পাদক ছিলেন যারা

উপকূল অতিক্রম করার সময় কোনো কোনো ঘূর্ণিঝড়ের বডি মুভমেন্ট কমে যাচ্ছে এবং বেড়ে যাচ্ছে। বডি পার্ট অতিক্রম করা ঘূর্ণিঝড় কখনও কখনও স্বতন্ত্র চরিত্র প্রকাশ করছে। এজন্য কোনো কোনো ঘূর্ণিঝড় অতি তীব্র বেগেও উপকূল অতিক্রম করে, আবার কোনো কোনো ঘূর্ণিঝড় দুর্বলভাবে উপকূল অতিক্রম করে। ঘূর্ণিঝড়ের এই রহস্যময় আচরণের জন্য আবহাওয়া ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের বেগ পোহাতে হচ্ছে।

ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ঘূর্ণিঝড় কেন হয়, এটা আমাদের জানতে হবে। আমাদের এই অঞ্চলে সাগরের দুটি পার্ট আছে। একটি আরব সাগর এবং অপরটি বঙ্গোপসাগর। ১৮৯১ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে মোট ৬৬৩টি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে সিজনাল প্যাটার্ন আছে। বছরে দুটি মৌসুমে ঘূর্ণিঝড় হয়। প্রথম মৌসুমটি মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে এবং দ্বিতীয় প্যাটার্ন হচ্ছে অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে।

১৮৯১ থেকে ২০২২ সালে আরব ও বঙ্গোপসাগরে প্রথম প্যাটার্নে অর্থাৎ মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে ঘূর্ণিঝড় হয়েছে ১৩২টি। দ্বিতীয় প্যাটার্নে অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে মোট ঘূর্ণিঝড় হয়েছে ৩২৮টি। এর মধ্যে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে ২৩৮টি।

প্রথম কারণ হচ্ছে, গ্লোবাল ওয়ার্মিং। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বাষ্পায়নের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাষ্পায়ন বৃদ্ধি পেলে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা একটু বৃদ্ধি পায়। এটা বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশনের প্যাটার্নে পরিবর্তন এসেছে। যেমন- ঘূর্ণিঝড় ফরমেশন হতে হলে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা সাড়ে ২৬ ডিগ্রি হতে হবে। সারাবিশ্বেই গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশনে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রার বিভাজনে ব্যত্যয় সৃষ্টি হয়েছে।

আরো পড়ুন :
>ভারতে সেনাবাহিনীর ট্রাক খাদে, ১৬ সেনা নিহত
>সম্মেলনে বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানাল আ. লীগ
>জন্মলগ্ন থেকে আ.লীগের সভাপতি-সম্পাদক ছিলেন যারা

বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা কমে যাওয়ার অনেকগুলো কারণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রথম কারণ হচ্ছে- গ্লোবাল ওয়ার্মিং। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বাষ্পায়নের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাষ্পায়ন বৃদ্ধি পেলে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা একটু বৃদ্ধি পায়। এটা বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশনের প্যাটার্নে পরিবর্তন এসেছে। যেমন- ঘূর্ণিঝড় ফরমেশন হতে হলে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা সাড়ে ২৬ ডিগ্রি হতে হবে। সারাবিশ্বেই গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশনে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রার বিভাজনে ব্যত্যয় সৃষ্টি হয়েছে।

দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে- ঘূর্ণিঝড় তৈরির জন্য আরেকটি নিয়ামক ফ্যাক্টর হলো ঊর্ধ্ব আকাশে বাতাসের গতিবেগ এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের বাতাসের গতিবেগের পার্থক্য কম হওয়া। বাতাসের গতিবেগের পার্থক্য কম হলে ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। ইদানিং পরিলক্ষিত হচ্ছে যে ঊর্ধ্ব আকাশের বাতাসের গতিবেগ এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের বাতাসের গতিবেগ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাতাসের গতিবেগ এরকম বৃদ্ধি পেলে সাগরের লঘুচাপ থেকে অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড় হওয়ার সুযোগ কমে যায়।

আবহাওয়ার স্বাভাবিক আচরণ থাকা ভালো। আবার অতিরিক্ত বেশি হলেও উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং কম হলে সেটাও স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলে। এজন্য যেটা আগে অব্যাহত ছিল সেটাই থাকা ভালো। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সম্প্রতি আবহাওয়ার পরিমণ্ডলে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সাগর যেভাবে উত্তপ্ত থাকার কথা বা বঙ্গোপসাগরে যে উপাদানগুলো ঘূর্ণিঝড়কে ত্বরান্বিত করে সেগুলো কিন্তু থাকতে পারছে না।

আবদুল মান্নান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের পরিমাণ কমে গেলে বোঝা যায় যে সাগরে স্বাভাবিক আচরণ থাকছে না। সাগরে কিন্তু বিভিন্ন প্রসেসের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উৎপাদন হয়। যেগুলো সাগরের প্রাণীদের জন্য উপকারী আবার মানুষের জন্যও। দীর্ঘদিন যদি ঘূর্ণিঝড়ের পরিমাণ কম থাকে, তাহলে পরোক্ষভাবে জলবায়ুর মধ্যেই পরিবর্তন চলে আসবে। বিশেষ করে গত দুই বছর ধরে এটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

যেমন- ভারতে যেসব জায়গায় বৃষ্টির অভাবে ফসল ফলানো যেত না, গত দুই বছর ধরে কিন্তু সেখানে ব্যাপক ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে। বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে না কিন্তু লঘুচাপ সৃষ্টি হচ্ছে। এই লঘুচাপগুলো ভারতীয় উপকূলের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কারণে ভারতের উপকূলবাসী এবং তাদের মধ্যাঞ্চলগুলোতে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তার মানে, বৃষ্টিহীন জায়গাগুলো এখন বৃষ্টিবহুল হয়ে যাচ্ছে এবং বৃষ্টিবহুল জায়গাগুলো বৃষ্টিহীন হয়ে যাচ্ছে। এতে শুধু জনজীবন নয়, অন্যান্য বিষয়গুলোতেও পরিবর্তন চলে আসবে।

আরো পড়ুন :
>ভারতে সেনাবাহিনীর ট্রাক খাদে, ১৬ সেনা নিহত
>সম্মেলনে বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানাল আ. লীগ
>জন্মলগ্ন থেকে আ.লীগের সভাপতি-সম্পাদক ছিলেন যারা

জলবায়ুর এই পরিবর্তনের কারণে দুর্যোগপূর্ণ দেশগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বরফ পড়া ছাড়া আমাদের দেশে সব ধরনের দুর্যোগ আছে। একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের অনুপস্থিতির কারণে আরেকটির প্রভাব বেশি পড়ছে। যেমন- এবার ঘূর্ণিঝড় সেভাবে না হলেও বজ্রপাতের পরিমাণ বেশি ছিল। দুর্যোগ একটি ফর্মে না এসে অন্য ফর্মে আসছে। এজন্য বাংলাদেশের মতো যেসব দেশে জিওগ্রাফি দক্ষিণ ও উত্তর থেকে দুর্যোগ আসে, সেসব দেশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ডিসেম্বর ২৩.২০২২ at ১৬:৫২:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এসআর