এবার যশোর শিক্ষা বোর্ডের ব্যাংক হিসেবে আড়াই কোটি টাকার গরমিল !

এবার যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ব্যাংক হিসেবে আড়াই কোটি টাকার গরমিল পাওয়া গেছে। ৯টি চেকের বিপরীতে দুইটি প্রতিষ্ঠানের হিসেবে এ পর্যপ্ত পরিমান টাকা অনলাইনে ট্রান্সফার নেয়া হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থ বছরের আয়-ব্যয় বোর্ডের সকল ব্যাংক একাউন্টের স্টেটমেন্টের সাথে মিলকরণের করার সময় এ অমিল ধরা পড়ে।

সোনালী ব্যাংকের বিআইএসই যশোর শাখায় বোর্ডের এসটিডি একাউন্ট নম্বর ২৩২৩২৪০০০০০২৪ থেকে এ টাকা ভেনাস প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং ও শাহী লাল স্টোরের নামের দুই একাউন্টে ২ কোটি ৫০ লক্ষ ৪৪ হাজার দশ টাকা উত্তোলন হয়েছে। তবে যে চেক ব্যবহার করে ২ কোটি ৫০ লক্ষ ৪৪ হাজার দশ টাকা সরানো হয়েছে শিক্ষা বোর্ডে গচ্ছিত মুড়ি বইতে ওই ৯ চেকের বিপরীতে ৯ হাজার ৩ শ ৮৬ টাকা খরচ দেখানো আছে।

বোর্ড কর্তৃপক্ষের দাবি এটা জালিয়াতি। যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের প্রফেসর এ. এম. এইচ. আলী আর রেজা এ প্রতিবেদককে বলেন, ৯টা চেকে আয় কর ও ভ্যাট বাবদ আমাদের মুড়ি বইতে ৯ হাজার ৩ শ ৮৬ টাকা খরচ দেখানো আছে। কিন্তু ভেনাস প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং ও শাহী লাল স্টোর উক্ত ৯ টি চেকেই ২ কোটি ৫০ লক্ষ ৪৪ হাজার দশ টাকা উত্তলেন করেছে। এর মধ্যে ভেনাস প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং ৭ চেকের বিপরীতে ১ কোটি উনানব্বই লাখ বারো হাজার দশ টাকা ও শাহী লাল স্টোরের নামে ৬১ লাখ ৩২ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে যশোর বোর্ডের উপপরিচালক (হিওনি) মো. এমদাদুল হক, অডিট অফিসার মো. আব্দুস ছলাম, অডিটর মো. আয়ুব হোসেন ও জুনিয়র অডিটর শেখ আব্দুর রফিক সচিব বরাবর ঘটনা বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিত করেছেন।

সচিব বরাবর প্রেরিত পত্রের লিখিত বিষয়টি হুবহু তুলে ধরা হলো : প্রতি আর্থিক বছর শেষে বোর্ডের আয়-ব্যয় যাচায়ের লক্ষ্যে ব্যাংক হিসাব মিলকরণ করা হয়। সে মোতাবেক বোর্ডের ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের অয়-ব্যয় বোর্ডের সকল ব্যাংক একাউন্টের স্টেটমেন্টের সাথে মিলকনণ করার সময় দেখা যায় যে, বোর্ডের ব্যয় একাউন্ট ঝঞউ -২৩২৩২৪০০০০০২৪ হিসাব খাতে ৯ (নয়)টি চেক পরিশোধিত হয়েছে, যা বোর্ডে সংরক্ষিত মুড়ি বইয়ের চেক উল্লেখিত টাকার পরিমাণের সাথে ব্যাংক কতৃক টাকার মিল নেই।

এধরনের অমিল পরিলক্ষিত হওয়ায় হিসাব প্রধান শাখার হিসাব রেজিস্ট্রার এর সাথে মিলিয়ে দেখা হয়। এক্ষেত্রে দেখা যায় যে, বোর্ডে সংরক্ষিত মুড়ি বইয়ের উল্লেখিত ৯ (নয়) টি চেকের তারিখ অনুযায়ী হিসাব শাখার ব্যয়, রেজিস্ট্রারের ব্যয় বিবরণীতে ভ্যাট ও আয়কর বাবদ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার জন্য চেকগুলো ইস্যু করা হয়।

ইস্যুকৃত চেকগুলোর বিপরীতে ভ্যাট ও আয়কর বাবদ সরকারি কোষাগারে অর্থ পরিশোধিত হয়নি, অথচ উক্ত চেকের মুড়ির বিপরীতে চেক জালিয়াতি করে দুইটি প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে ২,৫০,৪৪,০১০/- (দুই কোটি পঞ্চাশ লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার দশ) টাকা উত্তলন করে নিয়েছে।

এমতাবস্থায়, ব্যাংক হতে পরিশোধিত চেক/অর্থের বিপরীতে প্রতিষ্ঠান দুইটি বোর্ডের কোন মালামাল বা সেবা সরবারহ করেছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার লক্ষ্যে বোর্ডের স্টোর কিপারকে মালামাল এন্ট্রি রেজিস্ট্রার আনতে বলা হয়।

রেজিস্ট্রার নিরীক্ষা করে দেখা যায় প্রতিষ্ঠান দুইটি উক্ত টাকার বিপরীতে বোর্ড স্টোরে কোন মালামাল /সেবা সরবরাহ করেননি এবং বিল ভাউচার দাখিল করেননি নিয়মানুযায়ী কোন প্রতিষ্ঠান বোর্ডে মালামাল/সেবা সরবরাহের লক্ষ্যে বোর্ডের সচিব কর্তৃক স্বাক্ষরিত কার্যাদেশ প্রাপ্তির পর কার্যাদেশে উল্লেখিত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্টোরে মালামাল সরবরাহ পূর্বক বোর্ডের সচিবের নিকট মালামালের চালান ও বিল ভাউচার দাখিল করে।

আরো পড়ুন:
ঘোড়াঘাটে মদ তৈরির ৭ কারখানায় অভিযান, বিপুল পরিমান কাঁচামাল ধ্বংস
ঢাবিতে সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু ১৭ অক্টোবর

অতঃপর বোর্ডের সচিব মালামাল বুঝে নেওয়ার জন্য চালান ও বিলের উপর স্টোর কিপারকে মার্ক করে স্টোরে প্রেরণ করেন। স্টোর কিপার উক্ত চালান এবং বিল ভাউচার সচিব কর্তৃক স্বাক্ষরিত স্মারকের কার্যাদেশ অনুযায়ী মালামাল বুঝে নিয়ে বিল প্রদানের লক্ষ্যে রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে বিল ভাউচার হিসাব প্রদান শাখায় প্রেরণ করেন।

কিন্তু এক্ষেত্রে হিসাব প্রদান শাখার কার্যাদেশের মাধ্যমে বিল প্রধান নথি নিরীক্ষা করে দেখা যায় ব্যাংক হতে পরিশোধিত অর্থের বিপরীতে কোন বিল ভাউচার নথিতে উপস্থাপন করা হয়নি। অথচ জালিয়াতি চক্র/ প্রতিষ্ঠান দুইটি সুকৌশলে অন্য বিল হতে ভ্যাট ও আয়কর সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার লক্ষ্যে ইস্যুকৃত চেকগুলোর মুড়ির নম্বরের এবং তারিখের সাথে মিল রেখে চেক জালিয়াতি করে বোর্ড তহবিল হতে অর্থ উত্তলোন করে নিয়েছে, যা বোর্ডের আয়-ব্যয়ের সাথে ব্যাংক হিসাব মিলকরণ করার সময় ধরা পড়েছে।

নিম্ন বর্ণিত চেক ছাড়াও আরো জালিয়াতি আছে কিনা যাচাই/বাছাই করা হচ্ছে।

অক্টোবর ০৬.২০২১ at ১৯:১৩:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/আক/জআ