বিআরটিএ ৬ মাসে সাড়ে ১২ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স দেবে

ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে গ্রাহকদের অভিযোগের শেষ নেই। আবেদন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে লাইসেন্স হাতে পাওয়া পর্যন্ত পদে পদে পোহাতে হয় ভোগান্তি। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, দালালদের দৌরাত্ম্য ও স্মার্টকার্ড না থাকার মতো সমস্যাগুলো তো রয়েছেই। এমনই অজস্র সমস্যার ভিড়ে লাইসেন্সপ্রত্যাশীদের প্রায় সাড়ে ১২ লাখ আবেদন ফাইলবন্দি পড়ে আছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এর কার্ডের অপ্রতুলতায় সরবরাহেও বিলম্ব হচ্ছে। ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় প্রতিদিন সড়কে পুলিশের হয়রানির মানসিক তাড়া নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে আবেদনকারীদের। সব মিলিয়ে লাইসেন্স পাওয়া নিয়ে একটা হ-য-ব-র-ল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্যালয়ে দালালদের দৌরাত্ম্য কমাতে এরইমধ্যে সারাদেশে বিআরটিএ দালালদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব)। এসময় বিভিন্নজনকে আটকসহ নানা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। যে কারণে বিআরটিএ কার্যালয়ে কিছুটা কাজের পরিবেশ ফিরলেও এখন আবার তথৈবচ। দালালদের আনাগোনাও বেড়েছে আগের মতোই। সম্প্রতি বিআরটিএ ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

১২ লাখ ৪৫ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স পেন্ডিং আছে। এটা দ্রুত করার জন্য ডিপিএম পদ্ধতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গাজীপুর মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিকে ওয়ার্ক অর্ডার দিয়েছি। চুক্তিও হয়েছে। অক্টোবর থেকে প্রিন্টিং শুরু হবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্যালয়গুলো যেন দালালদের স্বর্গরাজ্য। শুরুতে দালালদের কথা শুনে যেকোনো গ্রাহকের এমন মনে হতে পারে যে, ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া জটিল কোনো বিষয়ই নয়। হাজার দশেক টাকা গুনলেই ঝামেলাহীন বেরিয়ে আসবে লাইসেন্স। স্মার্টকার্ডও মিলে যেতে পারে তিন-চার মাসের মধ্যে। কিন্তু ভাবনাটা যত সহজ বাস্তবতা ঠিক ততটাই কঠিন। কারণ, এখানেই আসল ফাঁদ পেতে রেখেছে দালালরা। আর সে ফাঁদে পা দিচ্ছেন সাধারণ গ্রাহক।

কার্যালয়ে দালালদের দৌরাত্ম্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএ মিরপুর শাখার উপ-পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) শফিকুজ্জামান ভূঁইয়া নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। তিনি বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, দালালরা এখানে সক্রিয়। অনেকেই প্রতারিত হচ্ছেন। মাঝেমধ্যে অভিযান চালাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আমরাও গ্রাহকদের সচেতন করছি। আমাদের তথ্যকেন্দ্র সবসময় খোলা। যেকোনো প্রয়োজনে গ্রাহকরা আমাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারেন। দালালদের কাছে গিয়ে যেন তারা প্রতারিত না হোন।

তৌহিদ নামের একজন আবেদনকারী বলেন, প্রায় দেড় বছর হয়েছে আমি ‘হালকা’ ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছি। এখনও আমাকে স্মার্টকার্ড (ড্রাইভিং লাইসেন্স) দেওয়া হয়নি। গাড়ি চালানোর জন্য সাময়িক যে কাগজটি দেওয়া হয়, সেটার মেয়াদ তিন মাস। প্রতি তিন মাস পর পর বিআরটিএ’তে গিয়ে এটা নবায়ন করতে হয়। শত শত মানুষের সিরিয়াল ডিঙিয়ে সিল স্বাক্ষর করিয়ে আনলেও রাস্তায় পুলিশের হয়রানির শিকার হতে হয়।

আরো পড়ুন :
সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসা-যাওয়ার পথে চাঁদাবাজি বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা
‘মাগে হিতে’র শিল্পী বাংলাদেশে এসে গান গাইতে চান

কারণ, ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরিবর্তে যে কাগজটি দেওয়া হয়, সেটি একেবারেই পাতলা। অনেক সময় ছিঁড়ে যায়, লেখা উঠে যায়। আবার কোনো সমস্যা না হলেও পুলিশ মামলা দিয়ে বসে, এতদিনেও স্মার্ট কার্ড নেইনি বলে। কিন্তু তারাও বুঝতে চায় না, স্মার্টকার্ড ডেলিভারি দিচ্ছে না বিআরটিএ। আমাদের মতো লাখ লাখ গ্রাহক প্রতিদিন সড়কে ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছে।

তবে স্বস্তির খবর হচ্ছে, নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য যারা আবেদন করছেন, নির্ধারিত তারিখেই তাদের লাইসেন্স সরবরাহ করছে বিআরটিএ। পাশাপাশি দীর্ঘদিন আটকে থাকা সাড়ে ১২ লাখের মতো লাইসেন্সও আগামী ছয় মাসের মধ্যে গ্রাহকদের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলছে সরকারি সংস্থাটি। আগামী অক্টোবর মাস থেকেই লাইসেন্স প্রদানের এ প্রক্রিয়া শুরু করবে বিআরটিএ।

স্বস্তির খবর হচ্ছে, নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য যারা আবেদন করছেন, নির্ধারিত তারিখেই তাদের লাইসেন্স সরবরাহ করছে বিআরটিএ। পাশাপাশি দীর্ঘদিন আটকে থাকা সাড়ে ১২ লাখের মতো লাইসেন্সও আগামী ছয় মাসের মধ্যে গ্রাহকদের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলছে সরকারি সংস্থাটি।

বিআরটিএর একজন পরিচালক জানান, ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য নতুন যারা বায়োমেট্রিক দিচ্ছে, তাদের যথাসময়ে স্মার্টকার্ড সরবরাহ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কোনো দেরি হচ্ছে না। পুরোনো ১২ লাখেরও বেশি আবেদন আটকে আছে। সেগুলো সরবরাহ বা কার্ড প্রিন্টের ব্যাপারে আমাদের মেশিন টুলস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে এ মাসের প্রথম দিকে। তারা ১৫/২০ দিনের মধ্যে কাজ শুরু করবে। কাজ শুরু হলে ৫/৬ মাসের মধ্যে সব লাইসেন্স সরবরাহ করতে পারবো।

জানা গেছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্টকার্ড সরবরাহকারী হিসেবে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটি ২০১৯ সাল থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেয়। এরপর বেশ ভালোই বিপাকে পড়ে বিআরটিএ। তবে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, এ সংকট আর থাকছে না। নতুন আবেদনকারীরা যথাসময়েই স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স পাচ্ছেন। মাদ্রাজ নামক একটি প্রতিষ্ঠান চুক্তি অনুসারে সেটি সরবরাহ করছে।

এ বিষয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার জাগো নিউজকে বলেন, ১২ লাখ ৪৫ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স পেন্ডিং আছে। এটা দ্রুত করার জন্য ডিপিএম পদ্ধতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গাজীপুর মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিকে ওয়ার্ক অর্ডার দিয়েছি। চুক্তিও হয়েছে। অক্টোবর থেকে প্রিন্টিং শুরু হবে। আশা করি, ছয় মাসের মধ্যে সব লাইসেন্স সরবরাহ করতে পারবো।

সেপ্টেম্বর  ১৯.২০২১ at ১২:৩৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/জানি/রারি