রাঙ্গুনিয়ার দুই ইউপির কার্যক্রম চলে ভাড়া কক্ষে, ভোগান্তির যেন শেষ নেই

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ভবন সংকটের কারণে ২ ইউপির কার্যক্রম চলে কমিউনিটি সেন্টার ও পাবলিক লাইব্রেরিতে। ভোগান্তির যেন শেষ নেই সেবা দাতা ও গ্রহীতাদের। উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন মধ্যে ১৩টি ইউপির নিজস্ব ইউনিয়ন পরিষদ ভবন থাকলেও ১৫ নং লালানগর ইউনিয়ন ও ১৪ নং দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের নিজস্ব কোন ভবন নেই। ফলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে দুই ইউনিয়নের জনসাধারণকে। এই দুই ইউনিয়নের মধ্যে ১৫ নং লালানগর ইউনিয়নের কার্যক্রম চলে কমিউনিটি সেন্টারের ভাড়া কক্ষে এবং ধামাইরহাট পাবলিক লাইব্রেরিতে চলে দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের সার্বিক কর্মকাণ্ড। এতে সাধারণ মানুষ ও দায়িত্বরতদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯৫০ সালে উপজেলার তৎকালীন অবিভক্ত বৃহত্তর রাজানগর ইউনিয়নের ধামাইরহাট এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় ভি-এইড (ভিলেজ এইড ডেভেলপমেন্ট) লাইব্রেরি। এলাকার শিক্ষিত যুবকদের নিয়ে লাইব্রেরিটির কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। লাইব্রেরিতে দেশ বিদেশের দুর্লভ বইও রয়েছে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর দক্ষিণ রাজা নগর ইউপির সকল কার্যক্রম এই ভি এইড পাবলিক লাইব্রেরির দুটি কক্ষে। এর আগে ২০১১ সাথে থেকে সাবেক চেয়ারম্যান এনামুল হক মিয়া তার নিজ বাড়িতে ইউপির কার্যক্রম চালিয়েছেন।

অন্যদিকে ২০০৩ সালে বৃহত্তর হোছনাবাদ থেকে আলাদা ইউনিয়ন হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর লালানগর ইউপির কার্যক্রম শুরু হয় উত্তর রাঙ্গুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে। তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম তালুকদারের মেয়াদকালে ২০০৪ সালে ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ ব্রিজের পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় লালানগর ইউপি ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিলেও পরে তা আর হয়ে উঠেনি।

এই লক্ষ্যে ওই পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় ইউপি ভবন নির্মাণের ফলকও উম্মোচন করা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে জাহাঙ্গীর আলম দায়িত্ব নেন। তিনিও ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম চালানোর জন্য ইউনিয়নের আলমশাহ পাড়াস্থ নুরে মদিনা কমিউনিটি সেন্টারের দুটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করেন। সেখান থেকে চতজ্যাপাড়া আবদুল মোনাফ ভবনের তিনটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে ইউপির কার্যক্রম পরিচালনা করেন পরবর্তী চেয়ারম্যান এম.শাহ আলম তালুকদার। সেখানে একবার চুরির ঘটনা ঘটলে তিনি পরবর্তীতে আবারও আলমশাহ পাড়াস্থ নুরে মদিনা কমিউনিটি সেন্টারে চলে আসেন। সেই থেকে আজ অবধি কমিউনিটি সেন্টারের দুটি কক্ষ নিয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম। এরমধ্যে একটি কক্ষে বসেন চেয়ারম্যান নিজে। অন্যকক্ষে গাদাগাদি করে সচিব, গ্রাম্য আদালত, উদ্যোক্তাসহ ইউনিয়ন পরিষদের যাবতীয় কার্যক্রম চলে আসছে। এছাড়াও এই ভবনেই বিভিন্ন দোকানপাট ও বিয়ের অনুষ্ঠান হওয়ায় ইউপির সার্বিক কার্যক্রমে চরম ব্যাঘাত সৃষ্টি হয় বলে জানা যায়। এছাড়াও এক কক্ষ থেকে যাবতীয় সেবা প্রদান করতে গিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয় সেবা দাতা ও গ্রহীতা উভয়কেই।

আরো পড়ুন:
থানচিতে ২টি সেতুতে ফাটলে চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ
সরকারে নারীর অংশগ্রহণ চায় তালেবান

জানতে চাইলে দক্ষিণ রাজানগর ইউপি চেয়ারম্যান আহামদ ছৈয়দ তালুকদার বলেন, নিজেই এই লাইব্রেরি পরিচালনা কমিটির সভাপতি। তাই এখানে পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করি। পরিষদের কার্যক্রমে লাইব্রেরির ব্যাঘাত হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কক্ষের আলাদা জায়গায় সারি করে আলমিরাতে বই রাখা আছে। পরিষদের কার্যক্রমে লাইব্রেরির কোনো ব্যাঘাত হয়না। নিজস্ব ভবনের জন্য জায়গা ক্রয় করা হয়েছে। ভবন নির্মাণের জন্য বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু হবে।

একই প্রশ্নে লালানগর ইউপির চেয়ারম্যান মীর তৌহিদুল ইসলাম কাঞ্চন বলেন,‘একটি ইউপি ভবনের কার্যক্রম চালাতে যে পরিমাণ জায়গা কিংবা কক্ষ প্রয়োজন তা এই ভাড়া কক্ষে নেই। এই জন্য গ্রাম্য আদালত পরিচালনাসহ যাবতীয় কার্যক্রম চালাতে অনেক কষ্ট পোহাতে হয়। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগে ইউপি ভবন নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। এই লক্ষ্যে রাঙ্গুনিয়ার সাংসদ মাননীয় তথ্যমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে আমি নিয়মিত যোগাযোগ করে চলেছি। মন্ত্রী মহোদয় নতুন ইউপির ভবন নির্মাণের জন্য জায়গা দেখতে তাগিদও দিয়েছেন। জায়গা পেলে নতুন ভবন নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হবে।’

আগষ্ট ১৮.২০২১ at ১৩:৪৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এম/জআ