বৃদ্ধাকে গলাধাক্কা দিয়ে দাঁত ভাঙ্গার অপরাধে চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রী গ্রেফতার

গ্রেফতার হলেন লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আলী ও তার স্ত্রী। অভাবের তাড়নায় ত্রাণের স্লিপ চাওয়ায় শতবর্ষী বৃদ্ধাকে গলাধাক্কা দিয়ে দাঁত ভেঙে গুরুতর জখম করার মামলায় তাদেরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বুধবার (২৮ জুলাই) সকালে আদিতমারী এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে সোমবার (১৯ জুলাই) রাতে আহত বৃদ্ধা আলেমা বেওয়ার ছেলে নুরুজ্জামান বাদী হয়ে চেয়ারম্যান শওকত আলী, তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৪৫) ও মেয়ে সুহিন আক্তারের(১৯) বিরুদ্ধে আদিতমারী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। আলেমা বেওয়া উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের নামুড়ি মদনপুর গ্রামের মৃত ছপির উদ্দিনের স্ত্রী ও রিকশাচালক নুরুজ্জামানের মা।

জানাগেছে, সম্প্রতি করোনার ভয়াবহতায় দেশে লকডাউনে রিকশাচালক ছেলের আয় রোজগার কমে যাওয়ায় নিদারুন অর্থ কষ্টে পড়ে পলাশী ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে ত্রাণের স্লিপ চায় শতবছর বয়সী বৃদ্ধা আলেমা বেওয়া। ঈদের কয়েকদিন আগে ত্রাণ দেওয়ার কথা বলে বৃদ্ধা আলেমার কাছ থেকে জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি গ্রহণ করেন ওই চেয়ারম্যান।

সেই ত্রাণ নিতে গত সোমবার (১৯ জুলাই) সকালে ইউনিয়ন পরিষদে ডাকেন। ত্রাণের জন্য বৃদ্ধা ইউনিয়ন পরিষদে গেলে চেয়ারম্যান তার বাড়িতে রাখা স্লিপ নিয়ে আসতে বলে।

ফলে বৃদ্ধা পরিষদের পাশে চেয়ারম্যানের বাড়িতে যান। সেখানে দুপুর পর্যন্ত স্লিপের জন্য অপেক্ষা করেন ক্ষুধার্ত বৃদ্ধা। এরই মধ্যে ত্রাণ বিতরণ শেষ করে চেয়ারম্যান বাড়িতে চলে আসলে স্লিপ দাবি করেন বৃদ্ধা। এ সময় চেয়ারম্যানের নির্দেশে তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৪৫) ও মেয়ে সুহিন আক্তার (১৯) বৃদ্ধা আলেমাকে গলা ধাক্কা দিলে ক্ষুধার্ত বৃদ্ধা মেঝেতে পড়ে যান। এসময় তার দাঁত ভেঙে রক্ত ঝরতে থাকে এবং হাত, পা ও বুকে প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। বিপদ দেখে দ্রুত পল্লী চিকিৎসক নিয়ে নিজ বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন চেয়ারম্যান।

মায়ের অসুস্থতার খবর শুনে রিকশাচালক ছেলে নুরুজ্জামান ছুটে এসে স্থানীয়দের সহায়তায় বৃদ্ধা আলেমা বেওয়াকে আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

এ ঘটনায় আহত বৃদ্ধার ছেলে নুরুজ্জামান বাদী হয়ে ঐদিন রাতে চেয়ারম্যান শওকত আলীকে প্রধান অভিযুক্ত করে চেয়ারম্যানের স্ত্রী ও মেয়ের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

এ ঘটনায় জেলা জুড়ে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। ফলে এ নিয়ে বেশ কিছু গণমাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে খবর প্রকাশিত হলে আহত বৃদ্ধার পাশে দাঁড়ান আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন। বৃদ্ধাকে অর্থ সহায়তাসহ ন্যায় বিচার পাইয়ের দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

আরো পড়ুন:
রামেক হাসপাতালে আরও ১৭ জনের মৃত্যু
নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবির হতে ৯৫৮০ ইয়াবা একটি ডাম্পারসহ আটক-২
পাইকগাছায় কপোতাক্ষ নদীতে অজ্ঞাত যুবকের বস্তাবন্দি ভাসমান লাশ উদ্ধার
রানীগঞ্জ ব্রিজ এখন মরণ ফাঁদ ঝুঁকি পথচারীর
আমার বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বৃক্ষ রোপন

অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে নিয়মিত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে থানা পুলিশ। সেই মামলায় বুধবার সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে স্ত্রী আনোয়ারা বেগমসহ চেয়ারম্যান শওকত আলীকে আদিতমারী থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

আদিতমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ মামলায় চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করে আজ দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

জুলাই ২৮.২০২১ at ০৭:৩০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/কাআখ/এসকে