বদলগাছীতে শ্রেণিকক্ষ ভেঙ্গে ৭টি দোকানঘর নির্মাণ

করোনা মহামারির কারণে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে প্রায় এক বছর তিন মাস থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এই সুযোগে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষ ভেঙ্গে ৭ টি দোকানঘর নির্মাণ করছেন এক মাদ্রাসার সুপার। ঘটনাটি ঘটেছে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার কোলা ইউনিয়নের কেশাইল নূরানীয়া দাখিল মাদ্রাসায়। মাদ্রাসার শ্রেণি কক্ষ ভেঙ্গে দোকান ঘর নির্মাণ করায় এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বদলগাছী-আক্কেলপুর সড়কের পাশে কেশাইল বাজারে অবস্থিত কেশাইল নূরানীয়া দাখিল মাদ্রসা। এই মাদ্রাসার রাস্তা সংলগ্ন তিনটি শ্রেণিকক্ষ ভেঙ্গে দোকানঘর নির্মাণের কাজ চলছে। তিনটি শ্রেণিকক্ষ ভেঙ্গে ৭টি দোকানঘর নির্মাণ করা হয়েছে। আর সেই ৭টি ঘর বরাদ্দ দিয়ে টাকা নিয়েছেন ঐ মাদ্রাসার সুপার। মাদ্রাসার অফিস ঘর ছিলো বন্ধ। তবে দুজন নির্মাণ শ্রমিক সেই খানে কাজ করছিলেন। নির্মাণ শ্রমিকরা জানায়, সবুজ নামের একজন তাদেরকে এই শ্রেণিকক্ষ ভেঙ্গে দোকানঘর নির্মাণের কাজ দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সবুজ এই মাদ্রাসার কেউ না। সে কীটনাশকের দোকান করার জন্য শ্রেণি কক্ষটি দোকান ঘরের উপযোগী করে তুলছে।

মাদ্রাসার শ্রেণি কক্ষ ভেঙ্গে দোকান ঘর বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীর অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মাঝে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেক অভিভাবক বলছেন যে স্কুল ঘরে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশুনা হতো সেখানে এখন চলবে সাধারণ মানুষের আড্ডা বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই মাদ্রাসাটি ২০০২ সালে এমপিওভুক্ত হয়। ১৬ জন শিক্ষকসহ মোট ২০ জন স্টাফ রয়েছে এখানে। প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১৫০ জন।

মাদ্রাসার আশেপাশের দোকানিরা জানান, শুধু শ্রেণিকক্ষই আছে, ছাত্র-ছাত্রী নেই। সেটাও ভেঙ্গে দোকানঘর নির্মাণ করছে মাদ্রাসার সুপার। দশটা ক্লাসে ছাত্র-ছাত্রী মাত্র ৫০ থেকে ৬০ জন হবে। বিদ্যুৎবিল পরিষোধ করে না। তাই কয়েকদিন আগে বিদ্যুৎ অফিসের লোক এসে লাইন কেটে দিয়ে গেছে।

অপরদিকে,খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রত্যেকটা দোকান ঘর বরাদ্দ দেবার জন্য প্রধান শিক্ষক জামানত বাবদ ৫০ হাজার টাকা করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঐ মাদ্রাসার এক শিক্ষক বলেন, মাদ্রাসার নিয়ম শৃঙ্খলা বলতে কিছু নেই। শ্রেণিকক্ষ ভাঙ্গার ব্যাপারে অনেকবার নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা।

মাদ্রাসার সভাপতি আব্দুল জলিল এর কাছে শ্রেণি কক্ষ ভেঙ্গে দোকান ঘর বরাদ্দের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি শ্রেণি কক্ষ ভেঙ্গে দোকান ঘর বরাদ্দ সম্পর্কে কিছুই জানি না।এ সম্পর্কে মাদ্রাসার সুপার মোহাসিন আলি ভালো জানেন।

মাদ্রাসার সুপার মো. মোহসীন আলী সাথে কথা বলার জন্য একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে একাধিকবার মাদ্রাসায় গিয়েও তাদের পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ.টি.এম জিল্লু রহমানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, মাদ্রাসার সুপার আমাকে বলেছে জমিটি জেলা পরিষদ থেকে লিজ নেওয়া । আর ঐ ভবন টিকে পরিতাক্ত ভবন দেখানো হয়েছে। শ্রেণি কক্ষগুলি পরিতাক্ত নয় বলে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, মাদ্রাসার সুপার আমাকে এই কথায় বলেছে।

আরো পড়ুন:
শিবগঞ্জে প্রবাসীর স্ত্রীকে গোপনে বিয়ে করায় সালিশ বৈঠকে গ্রামছাড়ার নির্দেশ
সোমবার না, বৃহস্পতিবার থেকে সর্বাত্মক লকডাউন

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলপনা ইয়াসমিন বলেন, আমি দ্রুত তদন্ত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

জুন ,২৭.২০২১ at ১৫:৪৫:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসআরএস/এসআর