পাইকগাছায় আকষ্মিক সংক্রমণ বেড়েছে করোনার, পৌরসভাসহ ৪ ইউনিয়নে আসছে কঠোর লকডাউন

পাইকগাছায় আকষ্মিক করোনা সংক্রমণ আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কেবলমাত্র জুনের প্রথম সপ্তাহে ২৫ জনের করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। করোনার এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি পাইকগাছা পৌরসভাসহ ৪টি ইউনিয়নে ৭ দিনের জন্য কঠোর লকডাউনের সুপারিশ করে জেলা কমিটিকে প্রেরণ করেছে। সোমবার (৭জুন) বিকেলে উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সরকারিভাবে করোনা প্রতিরোধে সারা দেশের ন্যায় পাইকগাছা উপজেলায় কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হলেও কার্যত তা চলছে একেবারেই ঢিলেঢালাভাবে। উপজেলার কোথাও স¦াস্থ্যবিধির বালাইমাত্র পরিলক্ষিত হচ্ছেনা। সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে উপজেলার প্রতিটি হাট-বাজার, দোকানপাট, রেস্টুরেন্ট, চায়ের দোকানগুলোতে উপচে পড়া ভীঁড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

যাত্রীবাহী বাস, নছিমন, করিমন, ইজিবাইক, ভ্যানের যাত্রীসাধারণের কাউকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যাচ্ছেনা। নির্বাচনী জোয়ারে সকলে যেন গা ভাসাচ্ছেন। স্বাস্থ্যবিধি মানতে ন্যুনতম কেউ মুখে মাস্ক তো দূরের কথা অধিকাংশরাই ঠাসাঠাসির মধ্যে যে যার মত করে চলছেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এদের প্রত্যেকেই যেন একেকজন করোনা বিজয়ী যোদ্ধা। এমন পরিস্থিতিতে করোনা সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা ক্রমশ ভারি হচ্ছে।

জনসচেতনতায় প্রশাসনের পক্ষে মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হলেও জনসমাগম এড়াতে কার্যত তা বিশেষ প্রভাব ফেলছেনা। যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে নানাভাবে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। সেখানে পাইকগাছার চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। সামান্য জনসচেতনতা পরিলক্ষিত হচেছনা কারোর মধ্যে।

সরকারের পক্ষে মোবাইল ফোন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে গনসচেতনতায় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণসহ মাস্ক ব্যবহারে ব্যাপক প্রচার-প্রচারনা অবাহত থাকলেও তৃণমূলে তা কোনভাবেই বাস্তবায়ন হচ্ছেনা।

সরেজমিনে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশরাই এখন আর মাস্ক ব্যবহার করছেননা। আবার অনেকে যারা মাস্ক ব্যবহার করছেন, তারা থুতনির নীচে ঝুলিয়ে রাখছেন। আবার অনকের কাছে মাস্কের ব্যাপারে জিজ্ঞসা করলে পকেটে রয়েছে বলে জাানান। আবার কেউবা কানে ঝুলিয়ে রাখছেন। এমনিভাবে নানা অযুহতে মাস্কের বিষয় যাদের মাস্ক নেই তাদের কাছে নথাকার কারঝুণ লিয়ে ;জজ্ঞাসা করলে বলছে মাস্ক আছে পকেটে, আবার কেউ বলছে এটা ব্যবহার করলে তাদের শ্বাসকষ্টসহ নানাবিধ অসুবিধা হচ্ছে। এক কথায় সচেতনার বড় অভাব সকলের মধ্যে।

এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে জানানো হয়েছে, গত বছরের মার্চ থেকে অদ্যবধি উপজেলায় ৮শ’ ৫১ জনের মধ্যে ২শ’ ৫৬ জনের নমুনায় করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ও করোনা মুখপাত্র ডাঃ ইফতেখার বিন রাজ্জাক জানান, সারা দেশে করোনায় মৃত্যু হার যেখানে প্রায় ১.৩%, সেখানে পাইকগাছা উপজেলায় প্রায় ২.৫%। তিনি আরও জানান, চলতি জুন মাসের ১ তারিখ থেকে ৭ তারিখ পর্যন্ত ৬৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৫ জনের নমুনায় করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব ডাঃ নীতিশ চন্দ্র গোলদার জানান, পৌরসভাসহ উপজেলার কপিলমুনি, লস্কর, রাড়–লী ও চাঁদখালী ইউনিয়নে করোনা আক্রান্তের প্রকোপ বেড়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী জানান, উপজেলায় আকষ্মিক করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সোমবার বিকেলে করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভায় পৌরসভাসহ উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে কঠোর লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়ে জেলা কমিটির নিকট সুপারিশ প্রেরণ করা হয়েছে। জেলা কমিটির অনুমোদন পেলে আগামী ৯ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত পৌরসভাসহ উপজেলার কপিলমুনি, লস্কর, রাড়–লী ও চাঁদখালী ইউনিয়নে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হবে।

সভায় দূরপাল্লাসহ সব ধরনের বাস ও যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল বন্ধ, পৌরসভা, চাঁদখালী, কাটাখালী, কপিলমুনি ও বাঁকা বাজার কঠোর লকডাউন করা হবে বলে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। এছাড়া পাইকগাছা এবং কপিলমুনির কাঁচা বাজার বড় মাঠে স্থানান্তর করা হবে।

আরো পড়ুন:
‘খোয়াব ভবন’ এক দুঃস্বপ্নের নাম
কানাডায় মুসলিম পরিবারের ৪ জনকে গাড়িচাপা দিয়ে হত্যা

এছাড়া সীমান্তবর্তী বাঁকা ও বড়দল ব্রীজ দিয়ে অনুপ্রবেশ বন্ধ, সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কাঁচা বাজার, ওষুধ, কৃষিপণ্য, মুদি ও নির্মাণ সামগ্রীর দোকান খোলা রাখা হবে এবং অন্য সব দোকান-পাট বন্ধ থাকবে। হোটেল বিকেল ৪টার পর বন্ধ, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সরকারের সেবা প্রদান ও নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে বলেও জানান তিনি।