‘খোয়াব ভবন’ এক দুঃস্বপ্নের নাম

চারদিকে ১২ ফুট উঁচু দেয়াল। তার উপর আড়াই ফুট উঁচু গ্রিলের মাথায় ত্রিশূলের মতো চোখা। নিচ্ছিদ্র প্রধান ফটক। দেয়ালের সঙ্গে বেড়ে ওঠা উঁচু দেবদারু গাছের ফাঁকে তেঁতুলবাড়ি। খালি চোখেই বোঝা যায় বাড়িটি আশপাশের অন্য বাড়ি থেকে আলাদা। বিশেষ কারো বাসভবন।

এটি জয়দেবপুর শহরের দক্ষিণ ছায়াবীথি এলাকার সি ব্লকের ১৫৫ নম্বরে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের স্ত্রী শাহিনা ইয়াসমিনের বাড়ি। খোয়াব ভবন নামে খ্যাত। বন্ধু তারেক রহমান প্রায়ই এখানে আসতেন। আবার ভোরের সূর্য ওঠার আগেই চলে যেতেন। ২০০১ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত তারেক রহমান নিয়মিতই বন্ধু মামুনের সঙ্গে এখানে আসতেন বলে প্রতিবেশীদের ভাষ্য। তবে এখন আর নেই সেই জৌলুস কিংবা মানুষের আনাগোনা। এলাকাবাসীর কাছে খোয়াব ভবন এখন এক দুঃস্বপ্নের ঠিকানা। এ খোয়াব ভবনে বসেই শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যার পরিকল্পনা হয়েছিল বলে মনে করেন এলাকাবাসী।

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য এডভোকেট আব্দুল হাদী শামিম জানান, হাওয়া ভবনের মতো খোয়াব ভবনও বিএনপির ষড়যন্ত্রের আখড়া ছিল। ওই সময় গভীর রাতে প্রায়ই পতাকাবাহী গাড়ি খোয়াব ভবনে আসা-যাওয়া করেছে। তারেক ও মামুন গং-এর প্রমোদ ভবন হিসেবে খোয়াব ভবন ব্যবহৃত হয়েছে বলে এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে।

ভাওয়াল বীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যাকাণ্ডের কিছু দিন আগে এ খোয়াব ভবনে কুচক্রীরা ষড়যন্ত্রের জাল বুনেছে বলে তিনি মনে করেন। তার জের ধরে ২০০৪ সালের ৭ মে আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে সেদিন বিক্ষুব্ধ জনতা খোয়াব ভবনে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনার জেরে এলাকার ২০-২৫ জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়। যে মামলা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, বিএনপি ক্ষমতায় থাকা পর্যন্ত খোয়াব ভবন কঠোর প্রশাসনিক নিরাপত্তা বলয়ে ছিল।

যখন মামুন বা তারেক রহমান এসেছেন, তখন আশপাশের এলাকায় পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা মোতায়েন দেখা গেছে। তবে ২০০৪ সালে আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যাকাণ্ডের পর থেকে তারেক-মামুন গংকে আর খোয়াব ভবনে আসতে দেখা যায়নি। সরেজমিন দেখা গেছে, খোয়াব ভবনে কৌশলে সাবেক পৌরসভা নির্ধারিত হোল্ডিং প্লেট, ঠিকানা ও বাড়ির মালিকের নাম মুছে দেয়া হয়েছে। বাইরে থেকে দেখা যায় বাড়ির দেয়ালে শেওলা পড়েছে। অনেক দিন চুনকাম করা হয়নি। গাছগুলো ছাঁটা হয় না নিয়মিত। দূর থেকে অনেকটা জঙ্গল বাড়ি মনে হয়।

কয়েকবার কলিংবেল চাপতে একজন নারী নিরাপত্তা কক্ষের ছোট্ট জানালা দিয়ে কথা বলেন। তিনি জানান, তার স্বামী জালাল উদ্দিনের কেয়ারটেকার চাকরির সূত্রে তারা এখানে তিন বছর ধরে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। ভবনের ডুপ্লেক্স অংশ খালি। তবে তিনতলার ইউনিটে একজন ভাড়াটে আছেন।

তিনি আরো জানান, শাহিনা ম্যাডাম ছেলেমেয়ে নিয়ে মাঝে মাঝে আসেন। তবে আগে মামুন স্যারের সঙ্গে তারেক রহমান আসতেন বলে তিনি শুনেছেন। এর বেশি কিছু তিনি জানেন না বলে জানান।

ref: bhorerkagoj