চট্টগ্রামের পাঁচলাইশে একই বস্তিতে ফের আগুন

সপ্তাহ পার না হতেই ফের আগুনে পোড়লো চট্টগ্রামের পাঁচলাইশের শুলকবহরের একই বস্তি। তবে আগুন লাগার ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে বস্তির সম্পত্তি দখলের।

জানা যায়, গতকাল ৩০ জানুয়ারি আগুন লাগার পর এক মালিকের বাসায় হামলার ঘটনাও ঘটেছে। আগুন লাগার পেছনে মালিকদের দায়ী করে দুর্বৃত্তরা এ সময় তাদের বাসার দরজা, জানালা, ফ্রিজ, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন আসবাব ভাংচুর চালায়। হামলার জন্য স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলকে দায়ী করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটি।

গতকাল জুমার নামাজ চলাকালীন পাঁচলাইশ থানাধীন শুলকবহরে শাহনেওয়াজ বাবু নামে এক ভাইয়ের বাসায় এই হামলার ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, লাঠিসোঠা ও ইটপাটকেল দিয়ে এই হামলার ঘটনায় অন্তত ৩০/৪০ জনের মতো অংশগ্রহণ করে। ওই বাসায় দুর্বৃত্তদের পাঁচ-সাত মিনিটের তাণ্ডব ঘটিয়ে চলে যাবার পর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটির সদস্যরা বলছেন, ঘরে হামলা চালানোর সময় পরিবারের সব পুরুষ সদস্যরা তখন জুমার নামাজ আদায়ে মসজিদে ছিলেন। তবে এতে পরিবারের কেউ হতাহত হয়নি।

জানা গেছে, পাঁচলাইশ থানার শুলকবহরে ২০ বছর ধরে প্রায় দুই একর জায়গা জুড়ে থাকা একটি পরিবারের ওয়াক্‌ফ সম্পত্তির ওপর সেখানে বস্তিঘরগুলো ধাপে ধাপে গড়ে উঠেছিল। ওয়ারিশনসূত্রে ওই ওয়াক্‌ফ সম্পত্তির বর্তমান ভোগ দখলকারী শাহ নেওয়াজ বাবু ও সেলিম নেওয়াজ। আগুন লাগার ঘটনার তিন ঘণ্টার মাথায় বস্তিঘরের মালিকের বাসায় হামলার ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন: বেলা বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে ভোটারের সংখ্যা

এ ব্যাপারে শাহ নেওয়াজ বাবু বলেন, বস্তিতে আগুন লাগার পেছনে আমাদের দোষারোপ করে বাইরে একটি গুজব ছড়ানো হয়েছে। বস্তি উচ্ছেদ করার জন্য নাকি পূর্বপরিকল্পিতভাবে এই আগুন লাগানো হয়েছে। এখানকার বস্তি উচ্ছেদ করে আমাদের কি লাভ হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি হওয়ায় এখানকার জায়গা বিক্রয়যোগ্য নয়। ঘরবাড়ি তুললেও বহুতল ভবন গড়ে তোলা বা কোনো ডেভেলপারকে দিয়ে জায়গার উন্নয়ন করার সুযোগ নেই। জায়গাটি শুধুমাত্র ভোগ দখল করা যাবে। সেটার জন্য কিছু ঘর তুলে এখানে ভাড়া দিয়ে আসছি। গত ২০ বছর ধরে বিভিন্ন সময় এখানে বস্তিঘরগুলো গড়ে তোলা হয়েছে। এতে কেনইবা বস্তি উচ্ছেদের জন্য আগুন লাগানোর মতো এমন ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হব।

তিনি বলেন, আমাদের অনেক ভাড়াটিয়া রয়েছেন যারা কয়েকমাস বাসা ভাড়া না দিয়েই এখানে বসবাস করছে। আমাদের যদি বস্তি উচ্ছেদের উদ্দেশ্য থাকত তাহলে ওইসব ভাড়াটিয়াদের ঘরেও আগুন লাগিয়ে দেয়া হত। কিন্তু আগুনে তো তাদের ঘরসহ বস্তির আরও অনেক ঘর অক্ষত ছিল বলে জানান শাহ নেওয়াজ। তিনি আরো বলেন, গত সপ্তাহে আমার বস্তিতে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে একই জায়গার পাশে আরেকটি বস্তি ঘরে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এটা আমার ভাইয়ের মালিকানার বস্তি ঘর। পরপর দুই ঘটনাটি আমাদের কাছে রহস্যজনক মনে হচ্ছে। এটা পূর্ব পরিকল্পিত হতে পারে।

তিনি ধারণা করছেন, একটি প্রভাবশালী মহল আমাদের ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করছেন। ওই প্রভাবশালী মহল বস্তিবাসীদের উত্তেজিত করে আমাদের বাসাতেও হামলা চালিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি। এই ঘটনায় তদন্তপূর্বক প্রকৃত ঘটনা খুঁজে বের করে নিয়ে আসার দাবি করেন তিনি।

এদিকে দুই ভাইয়ের মধ্যে জায়গাটি নিয়ে বিরোধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুই ভাইয়ের মধ্যে জায়গা নিয়ে কোনো বিরোধ নেই। এমনকি বাইরের কারোর সাথেও আমাদের বিরোধ নেই। এ সময় শাহ নেওয়াজের পাশে তার ভাইকেও একই বক্তব্য দিতে দেখা যায়।

এর আগে মিসেস সেলিনা নেওয়াজ বলেন, বাসার ভেতর আমরা চারজন ছিলাম। আমি, আমার পুত্রবধূ ও তার দুই সন্তান। ঠিক জুমার নামাজ শুরুর পরপরই ৩০/৪০ জন লাঠিসোঠা নিয়ে হঠাৎ কোনো কথাবার্তা ছাড়াই আমাদের বাসার দরজা, জানালা ভাঙা শুরু করে দেয়। বাইরে থেকে ইট-পাটকেল ছোঁড়া হয় ঘরের ভেতরে। পরে তারা বাসার মূল দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ঘরের বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙা শুরু করে। বাসায় তখন কোনো পুরুষ সদস্য না থাকায় প্রাণে বাঁচতে আমরা দৌড়ে গিয়ে একটি কক্ষে প্রবেশ করে ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে অবস্থান দিই।
আরও পড়ুন: ইভিএমে পো‌লিং এজেন্ট না থাক‌লেও চলে

সরেজমিন জানা গেছে, দুর্বৃত্তদের তাণ্ডবে বাসার প্রায় সব দরজা, জানালাসহ ঘরের ভেতর বিভিন্ন আসবাবপত্রের বেশিরভাগই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরের ভেতর ভাঙা কাঁচ ও ইট-পাটকেলের বিভিন্ন টুকরো তখনও পড়ে ছিল। কাঠের দরজাগুলো ভাঙা অবস্থায় ছিল। বাইরে থাকা দুইটি প্রাইভেট কার সামনে-পেছনে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

পাঁচলাইশ থানার ওসি আবুল কাশেম ভুঁইয়া বলেন, হামলায় কারা জড়িত ছিল, সে ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ঘটনাস্থলের আশপাশের ভিডিও ফুটেজ দেখে কয়েকজনকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এব্যাপারে উত্তর জোনের উপ কমিশনার বিজয় বসাক বলেন, এই হামলার ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন অবস্থায় রয়েছে। এই মুহূর্তে কিছু বলা ঠিক হবে না। এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি বিজয় বসাক বলেন, বস্তি ঘরগুলো যে জায়গার ওপর গড়ে উঠেছে তা নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে বিরোধের কথা এলাকাবাসী বলছে। এসব যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে।

দেশদর্পণ/এমএম/এসজে