দিনে ২৯ ঘণ্টা কাজের বেতন নেন চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্মীরা!

চট্টগ্রাম ওয়াসার কিছু কর্মীরা দিনে ২৯ ঘণ্টা কাজের বেতন নেন বলে অভিযোগ উঠেছে।এরকম ওভারটাইম ডিউটির নমুনা পৃথিবীর আর কোথাও আছে কিনা, তা দেখার বিষয় বটে।এমনটি ঘটেছে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় অবস্থিত শেখ হাসিনা পানি শোধনাগারে।

দেখা গেছে, একজন কর্মচারী প্রতি রাতে ২০ দশমিক ৮৬ ঘণ্টা কাজ করেছেন।এর বাইরে তাঁর নিয়মিত দায়িত্বের আট ঘণ্টা রয়েছে। সে হিসাবে এক দিনে নিয়মিত ও ওভারটাইম মিলে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন ২৯ ঘণ্টা। সহকারী (হেলপার) পদে কর্মরত আবু জাফর। চট্টগ্রাম ওয়াসার এই স্থায়ী কর্মচারী ২০১৯ সালের জুলাই মাসে মূল বেতন হিসেবে উত্তোলন করেছেন ১১ হাজার ৯০ টাকা।

একই সময়ে ওভারটাইম (অধিকাল ভাতা) হিসেবে তুলেছেন ১৫ হাজার ৬০৩ টাকা, যা মূল বেতনের চেয়ে প্রায় ৪১ শতাংশ বেশি। ওভারটাইম হিসেবে এই পরিমাণ অর্থ পেতে তাঁকে মাত্র সাত রাতে ১৪৬ ঘণ্টা বাড়তি কাজ করতে হয়েছে। প্রতি রাতে তিনি ২০ দশমিক ৮৬ ঘণ্টা কাজ কিংবা দিনে ২৯ ঘণ্টা কাজের হিসেবটা তারই।

আরও পড়ুন:
সব টেবিলে ভাগ হয় সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসের ঘুষের টাকা!
আট গোল, দুই লাল কার্ডের ম্যাচে শেষ হল চেলসি-আয়াক্সর খেলা

এছাড়া্ও চট্টগ্রাম ওয়াসার বুস্টার স্টেশনের ইলেকট্রিশিয়ান আলী আক্কাসের ক্ষেত্রেও ঘটেছে একই ঘটনা।২০১৮ সালের জুলাই মাসে ওভারটাইম করেন ২০০ ঘণ্টা। সে হিসাবে মূল বেতন ১৯ হাজার ৮১০ টাকার সঙ্গে ওভারটাইম হিসেবে নেন ৩৮ হাজার ২৫১ টাকা। মূল বেতনের দ্বিগুণ ওভারটাইম পেতে তিনি জুলাই মাসের প্রতিদিনই ছুটি না কাটিয়ে নির্ধারিত কাজের অতিরিক্ত ডিউটি করেছেন। ২০১৭ সালের জুলাই মাসেও বন্ধের দিন শুক্র-শনিসহ ৩১ দিনে ২০০ ঘণ্টা ওটি করে মূল বেতনের দ্বিগুণ ওভারটাইম ভাতা তুলেছেন আক্কাস। এটা শুধু ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালের জুলাই মাসের চিত্র। বাস্তবে বছরের প্রতি মাসেই কমবেশি এ হারে ওভারটাইম ভাতা তুলেছেন আক্কাস।

আক্কাসের মতো চলতি বছরের জুলাই মাসে চট্টগ্রাম ওয়াসার ২২৯ জন কর্মচারী দৈনিক আট ঘণ্টা নিয়মিত কাজের জন্য মূল বেতন হিসেবে ৩৪ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪১ টাকার বিপরীতে অতিরিক্ত ২৩ হাজার ৯৯০ ঘণ্টা ওভারটাইম বাবদ আরো ৩৪ লাখ ৬৮ হাজার ৫৯৫ টাকা উত্তোলন করেছেন।

চট্টগ্রাম ওয়াসা থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, গত অর্থবছরে ওভারটাইম বাবদ ওয়াসার চাকরিজীবীরা পাঁচ কোটি ১৯ লাখ ৬৭ হাজার ৫৯৪ টাকা উত্তোলন করেছেন। আগের অর্থবছরে অঙ্কটা ছিল পাঁচ কোটি ১৮ লাখ ৭৪ হাজার ২৫৯ টাকা। জনবল সংকট ও কাজের চাপ বাড়ায় ওভারটাইম করাতে হয় বলে জানান, চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাকসুদুল আলম। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি শোধনাগার কিংবা পাম্প ২৪ ঘণ্টা চালু রাখতে হয়।

শুক্র-শনিবার কিংবা সরকারি ছুটির দিনেও এসব প্রকল্প বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। স্ট্যান্ডবাই পাম্পগুলোও যেকোনো মুহূর্তে চালু করার প্রয়োজন বিবেচনায় রেখে ওয়াসাকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। ফলে অনেককেই ওভারটাইম করতে হয়। আর মূল ডিউটির বাইরে কে কতক্ষণ ডিউটি করবে তা নির্বাহী প্রকৌশলী রোস্টার করে দেন।

মড-৩-এর নির্বাহী প্রকৌশলী রানা চৌধুরীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মূলত পাম্প অপারেটর, টেকনিশিয়ান ও ফিল্ড পর্যায়ের স্থায়ী কর্মচারীরা কাজ অনুযায়ী ওভারটাইম পান। তবে এ জন্য লগবই মেইনটেন করা হয়। কেউ চাইলেই কম বা বেশি কাজ করার সুযোগ নেই।

নভেম্বর ৬, ২০১৯ at ১০:৪০:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/কাক/এআই