ভারতীয় আটক চোরাই গরু নিলাম ঘটনায় ইউএনও, পুলিশসহ ৭জনের বিরুদ্ধে মামলা

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার গত শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিত্বে টাংগুয়ার হাওর থেকে ভারতীয় ৩৯টি গরু পাচার করার সময় পুলিশ ও স্থানীয় এলাকাবাসীর সহযোগীতায় আটক করেন তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির হাসান পলাশ। পরে তিনি বিজিবি, কাষ্টটম, পুলিশ ও স্থানীয় এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে আটক গরু গুলো প্রকাশ্যে রাত সাড়ে ৭টায় নিলামে ৫ লাখ ৯৬ হাজার টাকায় বিক্রি করে কাস্টমসে জমা দেন।

এর আগে, সীমান্তের চোরাচালানীদের সহযোগীতায় দুই ব্যবসায়ী ঐ গরু গুলোকে নিজেদের দাবী করলেও কোন কাগজ দেখাতে পারেনি। এরপর তারা কোন সুবিধা করতে না পারায় ভারতীয় চোরাচালানের গবাদিপশু হিসেবে চিহ্নিত করে ৫ লক্ষ টাকায় বিক্রি দেওয়ায় পর সোমবার (২২ অক্টোবর) আদালতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনতাসীর হাসানস পলাশ ও পুলিশসহ ৭জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৭/৮জনের বিরুদ্ধে একটি মামলাটি দায়ের করে ধরমপাশা উপজেলার বৌলাম গ্রামের গরু ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম।

জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাহিরপুরের বিচারক শুভদীপ পাল মামলাটি গ্রহণ করে পিবিআই তদন্তের জন্য পাঠিয়েছেন। মামলা নং সিআর ১৭৪/১৯ তাহিরপুর।

মামলার আসামিরা হলেন, রনচি গ্রামের আরশাদুল, রামসিংপুর গ্রামের সেলিম, মনির, আনসার ক্যাম্পের পিসি কাজল, ট্যাকেরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই মোসা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসীর হাসান, সূর্য্যরে গাঁও গ্রামের স্বপন দাস।

এদিকে ভিত্তিহীন ও মনগড়া সাজানো মামলা দায়ের করায় উপজেলা জুড়ে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। জেলার সচেতন মহল বলেন, সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিনেই ভারত থেকে সীমান্তের চিহ্নিত চোরচালানীরা অবৈধ পথে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাকিঁ দিয়ে গরু এনে জেলার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করছে।

উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা অবৈধ ভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করা গরু গুলো আটক করে নিলামে বিক্রি করেছে এটি একটি ভাল কাজ। এই ভাল কাজ থেকে বিরত রাখতেই এই সাজানো মামলা করেছেন সীমান্তের চোরাচালানী ও তাদের গড ফাদারদের পরামর্শে।

মামলার আইনজীবী এডভোকেট আমিরুল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ৭ জনের নাম উল্লেখসহ ৭-৮জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ করা হয়েছে। আদালত পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
দিপাবলী উপলক্ষে বিএসএফকে বিজিবি’র শুভেচ্ছা
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পদ থেকে কাওছারকে অব্যাহতি
তাহিরপুরে শিশু ধর্ষণের অভিযোগে ধর্ষক আটক

উল্লেখ্য,উপজেলার ট্যাকেরঘাট,বড়ছড়া,চাঁনপুর,বারেকটিলা,জঙ্গলবাড়ী,লামাকাটা,বিরেন্দ্রনগর ও মহেশখলাসহ বেশ কয়েকটি চোরাই পথ দিয়ে প্রতিদিনের মতো চিহ্নিত চোরাচালানীরা সীমান্তের ওপার ভারতীয় থেকে অবৈধ ভাবে আনা ৩৯টি চোরাই গরু নিয়ে সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাচালানীরা শুক্রবার সকালে ট্যাকেরঘাট থেকে একটি ষ্ঠিলের ইঞ্জিন চালিত নৌকা যোগে ধর্মপাশা উপজেলায় যাচ্ছে। এসময় খবর শুনে শুক্রবার সকালে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত)মুনতাসির হাসান পলাশ ট্যাকেরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনর্চায আবু মুসার সহযোগীতার ইঞ্জিন চালিত নৌকা ও গরুসহ একজনকে টাংগুয়ার হাওরের মাঝ দিয়ে যাওয়ার সময় আটক করেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়,মামলার বাদী বৌলাম গ্রামের শফিকুল ও ১ নং স্বাক্ষী সাজল ব্যবসায়ী হিসেবে ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর থানার মহেশখলা বাজার থেকে বিভিন্ন বিক্রেতার থেকে ৪০টি গরু ক্রয় করেন। গরুগুলো নিজ বাড়িতে নেওয়ার সময় টাংগুয়ার হাওরে নৌকাসহ রনচি ও রামসিংপুর গ্রামের আরশাদ মিয়া ও সেলিম নামের দুই ব্যক্তি নৌকাসহ গরুগুলো আটক করে ৫লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাদা না দেওয়ায় ২নং আসামির ভাই মনিরকে ফোনে বিষয়টি জানালে একজন দারোগাসহ ৩জন পুলিশ,আনসার বিডিপির ৬জন সদস্য নৌকা নিয়ে গরুগুলোকে তেঘরিয়া খনিজ প্রকল্পের রেস্ট হাউসে নিয়ে আসে। এখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসীর হাসানের নির্দেশে গরুগুলো নামিয়ে রেস্ট হাউসের মাঠে জড়ো করে রাখে। এসময় বাদী ও ১নং স্বাক্ষী বৈধ কাগজপত্র দেখালেও পুলিশ বিষয়টি উড়িয়ে দেয়। সারাদিন বাদী ও ১নং স্বাক্ষীকে সন্ধ্যার দিকে তাদের তাড়িয়ে দিয়ে গরুগুলো স্থানীয় স্বপন দাসের কাছে ৫লক্ষ টাকায় বিক্রি করে দেয়।

অক্টোবর ২৩, ২০১৯ at ১৭:৩৩:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/জাআভূঁ/তআ/ওআ