ফারাক্কার গেট খুলে দেয়ায় নতুন এলাকা প্লাবিত, পদ্মার পানি বিপদসীমার ওপরে

ভারত সরকার ফারাক্কার সবগুলো গেট খুলে দেয়ায় এর প্রভাবে বন্যা কবলিত কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পদ্মা নদীর পানি এখন বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চলের বহু মানুষ নতুন করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে জমির ফসল।

দৌলতপুর উপজেলার পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি তীব্র শ্রোতে রাইটা-মহিষকুণ্ডি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও স্লুইচ গেটের দরজা ভেঙে হু হু করে পানি ঢুকছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড হাইড্রোলজি বিভাগের একটি সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি বেড়েছে ১৪ সেন্টিমিটার। আর মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বিপদসীমা ১৪ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার অতিক্রম করেছে।

এর আগে সকাল ৯টার পরিমাপ অনুযায়ী, বিপদসীমার এক সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল।পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় আবাদি জমির ফসল তলিয়ে গেছে। ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এসব এলাকার কৃষকরা। কৃষকরা জানান, আর দুয়েকদিন এভাবে পানি বাড়তে থাকলে পদ্মার চরে আবাদ করা বাকি জমির ফসলও তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সপ্তাহখানিক আগে সর্বপ্রথম দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকা আকস্মিক পানি বৃদ্ধিতে তলিয়ে যায়। অব্যাহতভাবে পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারি ইউনিয়নের পর ফিলিপনগর ও মরিচা ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বেশ কিছু ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।

ফারাক্কা বাঁধের ১০৯টি গেটের সবগুলোই খুলে দেয়ায় বন্যা কবলিত এ উপজেলার চার ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়ে বহু মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে গত দুদিন ধরে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষ তাদের গরু-ছাগল নিয়ে চরম মানবেতর জীবন যাবন করছে। অন্যদিকে বন্যায় ধান, মাসকলাই, পেঁপে ও মরিচের ক্ষেতসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

সর্বশেষ পরিস্থিতি অনুযায়ী উপজেলার চিলমারী, রামকৃষ্ণপুর, ফিলিপনগর ও মরিচা ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশত গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। তলিয়ে গেছে প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল।

আরো পড়ুন:
ফেসবুকে পোস্ট, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ছাত্রী হলে অ্যাকশন
ফেন্সিডিলসহ মাদকব্যবসায়ী লিটন আটক

এদিকে মঙ্গলবার দুর্গত এলাকায় দ্বিতীয় দফায় সরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য আ. ক. ম. সারওয়ার জাহান বাদশাহ্ ও জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন।

এ সময় দৌলতপুর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাড. এজাজ আহমেদ মামুন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাইদুর রহমান, দৌলতপুর থানার ওসি এস এম আরিফুর রহমানসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এদিন প্রায় এক হাজার পরিবারের মাঝে চালসহ চিড়া, ডাল, চিনি, তেল ও শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পীযুষ কৃষ্ণ কুণ্ডু সাংবাদিকদের জানান, পদ্মার পানি এই মুহূর্তে বিপদসীমার কয়েক সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে দৌলতপুর উপজেলার চারটি ইউনিয়নের বিপুল সংখ্যক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রভাব পড়েছে পার্শ্ববর্তী ভেড়ামারা উপজেলাতেও।

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, নদীর পানির উচ্চতা বাড়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে প্রতিনিয়ত রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে প্রতি ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতি মনিটরিং করা হচ্ছে। আমাদের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে আছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ প্রস্তুত রয়েছে। প্রয়োজন হলে আরো ত্রাণ আসবে।

দৌলতপুর আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. সারওয়ার জাহান বাদশাহ জানান, পদ্মায় হঠাৎ পানি বেড়ে যাওয়ায় চার ইউনিয়নের মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বহু মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ায় তারা চরম দুর্ভোগে রয়েছে। নিয়মিত তাদের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, কুষ্টিয়ায় দীর্ঘ ১৬ বছর পর এ বছর পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করলো। এর আগে ২০০৩ সালে সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক ২৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পানির উচ্চতা বেড়েছিল। বানভাসী মানুষের দুর্ভোগ-দুর্দশা লাঘবে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগেও সাহায্য-সহযোগিতা জরুরি হয়ে পড়েছে।

অক্টোবর ০২, ২০১৯ at ০০:৪৩:২৯ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/এসআরএস/এএএম