সারাদেশে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, চলবে আরও ২ দিন

মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় থাকায় আরও ২ দিন সারাদেশে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। সেইসঙ্গে বরিশাল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলেছে, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে নদীর পানি বেড়ে যে বন্যা পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে, তার মূল কারণ অতিবর্ষণ, ফারাক্কা বাঁধ নয়।

দেশের বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও কোথাও ভারি বর্ষণ হতে পারে।

আবহাওয়াবিদ আফতাব উদ্দিন জানান, আগামী ৩ অক্টোবর থেকে সারাদেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমতে পারে। বর্তমানে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত কমে আসছে। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা হ্রাস পেতে পারে।

আরও পড়ুন :
জুয়া খেলার সরঞ্জাম ও নগদ টাকাসহ ৬ জুয়াড়ী আটক
শারদীয় দূর্গা পূজার প্রস্তুতি পর্ব শেষ

মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বগুড়া, ময়মনসিংহ, পাবনা, ঢাকা, টাংগাইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এছাড়া সারাদেশে দিনের ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, মৌসুমী বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ অতিক্রম করে বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।

এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় বিরাজমান রয়েছে।

আশ্বিনের মাঝামাঝিতে এসে মৌসুমি বায়ু বিদায়বেলায় প্রায় প্রতিদিনই সারা দেশে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১৯০ সেন্টিমিটার, মহেশখোলায় ১২০ সেন্টিমিটার ও দিনাজপুরে ১১৭.৫ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

টানা কয়েক দিনের বৃষ্টি এবং উজানে পানি বাড়ায় দেশের পশ্চিমাঞ্চলে, বিশেষ করে পদ্মা অববাহিকার রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া ও নাটোর অঞ্চলে স্বল্পকালীন বন্যা হতে পারে বলে আভাস দিয়েছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা।

এর মধ্যে ভারতের উত্তর প্রদেশ ও বিহার রাজ্যে প্রবল বর্ষণের কারণে বন্যা দেখা দেওয়ায় গঙ্গায় ফারাক্কা বাঁধের ১১৯টি গেইটের সবগুলোই সোমবার খুলে দেয় ভারত। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ভারতের পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে এবং ফারাক্কা খুলে দেওয়ায় বাংলাদেশেও বন্যা দেখা দিতে পারে।

গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকার নদীগুলোর পানি বৃদ্ধির এই প্রবণতা আগামী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে এবং হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও ভাগ্যকুল পয়েন্টে পদ্মার পানি সমতল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে আভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, এই যে বন্যা পরিস্থিতি, এই পরিস্থিতিতে আসলে ভারতীয় অংশের ফারাক্কা বাঁধের কোনো প্রভাব নেই। এই মৌসুমে ভারত অংশের ফারাক্কা বাঁধের গেইটগুলো খোলাই থাকে। এই সময় নদী যে আচরণ করে তা খুবই স্বাভাবিক আচরণ।

তিনি আরও বলেন, গত জুলাই মাসের বন্যাও হয়েছিল ভারী বৃষ্টির কারণে। মৌসুমী বৃষ্টিপাতের কারণে এখন একই ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বাঁধের একাংশ ওইখানে আগে থেকেই খোলা ছিল। এখন আমাদের দেশে যে পানিটা আসছে সেটা বৃষ্টিপাতের কারণে।

দেশ দর্পণে আরও পড়ুন :
চবি প্রশাসন হয়ে পড়েছে ভারপ্রাপ্ত ভারাক্রান্ত
দুমকিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু!

ভারী বৃষ্টির কারণে ভারতের বিহারের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের কিছু এলাকাতেও বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।“ভাটির দেশ হওয়ায় সেই পানিটা অবশ্যই আমাদের অংশের নদ-নদী দিয়ে প্রবাহিত হবে।

ফারাক্কা নিয়ে এক প্রশ্নে আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, নদ-নদীর স্বাভাবিক প্রবাহটাই এখন বজায় থাকছে। জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত সময়টায় পানির স্বল্পতা থাকে। তখন সেই পানিটা ধরে রাখার জন্য এই বাঁধ সৃষ্টি করা হয়েছিল। নদ-নদীতে যখন পানি বাড়ে তখন আর বাঁধের গেইট বন্ধ রাখা যায় না, খুলে দিতে হয়।

ভারত কর্তৃক ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেওয়া এবং সেজন্য বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। এমন একটি সংবাদ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে।

গত কয়েকদিন ধরে গঙ্গা, পদ্মা অববাহিকার উভয় অংশে ‘নিম্নচাপজনিত অতিবৃষ্টির’ ফলে নতুন করে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সে কারণেই উজানে ভারতের বিভিন্ন জেলায় ও ভাটিতে বাংলাদেশে বন্যার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানানো হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

এবার ভরা বর্ষায় জুলাই মাসে টানা কয়েক দিনের বৃষ্টি এবং উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেট, সুনামগঞ্জ, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও মুন্সীগঞ্জসহ ২৮টি জেলা প্লাবিত হয়। বন্যায় শতাধিকের মৃত্যুর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৩০ লাখের বেশি মানুষ।

অক্টোবর ০১, ২০১৯ at ১৫:৩৪:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/যুত/আজা