দ্বৈতনীতির সুযোগ নিয়েছে মাফিয়াচক্র

জুয়া নিষিদ্ধ তবে আমদানি করা যায় সরঞ্জাম। এজন্য আমদানিকারককে দিতে হবে শুল্ক। বিস্ময়কর এমন দ্বৈতনীতির সুযোগ নিয়েছে মাফিয়াচক্র।

বিভিন্ন দেশ থেকে ক্যাসিনো আর জুয়ার সরঞ্জাম এনেছে ২১টি প্রতিষ্ঠান। এখন আবার তাদের খুঁজছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, এনবিআর। মূলত, গত কয়েক দিন ধরেই বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ক্যাসিনোকে ঘিরে অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

অভিযানে জব্দ করা হচ্ছে রুলেট ট্যাবিল থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের জুয়ার সরঞ্জাম। ক্যাসিনোর এত সরঞ্জাম কখন কোত্থেকে, কিভাবে এসেছে, এনেছেই বা কারা? এমন প্রশ্ন সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞদেরও। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য।

আরও পড়ুন :
বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে-নিহত ২
ঘরের ভেতর স্বামী-স্ত্রীর লাশ

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তালিকা মতে, ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ঘোষণা দিয়ে চীন থেকে যেসব ক্যাসিনোর সরঞ্জাম আমদানি করেছে এর মধ্যে রয়েছে ক্যাসিনো গেম টেবিল, কয়েন, চিপস, রুলেট টেবিলসহ নানা সরঞ্জাম।

বিদেশ থেকে ক্যাসিনো নামেই আমদানি করে এ পণ্যগুলো বাংলাদেশে আনা হয়েছে। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি নীতি আদেশ বলছে, এসব ক্যাসিনো পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ নয়।

এতে মোট ২৭টি নিয়ন্ত্রিত পণ্য আছে। ১২টি নিষিদ্ধ পণ্য। এসব নিষিদ্ধ পণ্যের কোথাও ক্যাসিনো পণ্যের বা সরঞ্জামের নাম নেই। সুতরাং, আমদানি পর্যায়ে কোনো বাধা ছাড়াই একাধিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশে প্রবেশ করেছে ক্যাসিনো চিপস, ক্যাসিনো কয়েন, ক্যাসিনো ওয়ার গেম টেবিল, পোকার গেম চিপস, রুলেট গেম টেবিল, পোকার টেবিল, পোকার সেট রুলেট গেম সেট।

শুল্ক ও গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মোট নয়টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ক্যাসিনো সরঞ্জাম আমদানির তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাথমিক তদন্তে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।

প্রতিষ্ঠানগুলো হলো এ এম ইসলাম এন্ড সন্স, নিনাদ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, পুষ্পিতা এন্টারপ্রাইজ, এ৩ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও একটি বেসরকারি পেপার মিল।

সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাশরুর আরেফিন বলেন, নিষিদ্ধ পণ্যে ঋণপত্র দি সিটি ব্যাংক খোলার কথা না। আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় না থাকার কারণেই ব্যাংক ঋণপত্র খুলেছে।

শুল্ক ও গোয়েন্দা বিভাগ এবং ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, ২০১৫ সালের আগস্ট মাস থেকে ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসের মধ্যে ক্যাসিনো সরঞ্জামগুলো আমদানির তথ্য পাওয়া গেছে।

আর আমদানি নিষেধাজ্ঞা না থাকায় বৈধ পথেই এ পণ্যগুলো কোনো রকম বাধা ছাড়াই বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তবে আগামীতে এ পণ্যগুলো এত সহজে আমদানি করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

দেশ দর্পণে আরও পড়ুন :
শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করলেন বিল গেটস
কোটি টাকা ফেরত ও ৭ দফা প্রস্তাব-হলমার্ক

ক্যাসিনো পণ্যের নির্ধারিত এইসএসকোডগুলো হলো ৬৪০৬৯০০০, ৯৫০৪৯০০০, ৯৪০৩৮৯০০, ৯৫০৫৯০০০। একাধিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পণ্যগুলো আমদানি সহযোগিতায় ছিল সিএন্ডএফ এজেন্ট।

ঘোষণা দিয়েই চীন ও হংকং থেকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম পোর্ট, কমলাপুরের আইসিডি ও বেনাপোলের সীমান্ত দিয়ে নিয়ে আসে।

কাস্টমস ট্যারিফ বুকে দেখা যায়, ক্যাসিনোর সরঞ্জাম আমদানি বৈধ। প্রযোজ্য শুল্ক করও নির্ধারিত। নির্ধারিত এইচএসকোডে প্রায় ৫৮ শতাংশ শুল্ককর পরিশোধ করে অবাধে এসব সরঞ্জাম আমদানি করছেন ঘুরে ফিরে ২০-২১টি প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮-এর ২ ধারা অনুসারে যেকোনো ধরনের জুয়া নিষিদ্ধ। ১৮৬৭ সালে প্রণীত জুয়া আইনেও সব ধরনের জুয়াকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এরপরও ক্যাসিনোর সরঞ্জাম আমদানির সুযোগ থাকা বিভ্রান্তিকর, বলছে আমদানি রপ্তানি দপ্তর। আমদানি করা ক্যাসিনো সরঞ্জাম ক্লাব, হোটেল ছাড়াও আর কোথায়, কিভাবে ব্যবহার হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখার পরার্মশ সংশ্লিষ্টদের।

সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৯ at ১১:৪৩:২৯ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/ভোকা/আজা