কোটি টাকা ফেরত ও ৭ দফা প্রস্তাব-হলমার্ক

সরকারের সঙ্গে সমঝোতার পথে ব্যাংক জালিয়াতির হোতা হলমার্ক গ্রুপ। ঋণ পরিশোধের বিনিময়ে গ্রুপটি বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে জব্দ থাকা প্রায় ৬শত কোটি টাকা ফেরত ও নতুন করে ব্যাংকিং সুবিধাসহ ৭ দফা প্রস্তাব দিয়েছে।

সম্প্রতি হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর মাহমুদের ক্ষমতাপ্রাপ্ত আইনি কর্মকর্তা অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামালকে লিখিত এ প্রস্তাব দেন।

এর আগে ৪ সেপ্টেম্বর হলমার্কের কাছে ব্যাংকের বিপুল অঙ্কের পাওনা আদালতের বাইরে সমঝোতার ভিত্তিতে আদায়ের কৌশল খুঁজতে উচ্চপর্যায়ের আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বলে জানা গেছে।

অর্থমন্ত্রীকে দেয়া হলমার্ক গ্রুপের সাত দফা দাবির প্রস্তাবে বলা হয়েছে- সোনালী ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করা হবে। এর বিনিময়ে প্রথম শর্ত হচ্ছে, হলমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম ও এমডি তানভীর মাহমুদকে জামিনে মুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

দ্বিতীয় প্রস্তাবে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও এমডি জেলহাজতে থাকার সময় হলমার্কের অ্যাকাউন্টে ৪৬৫ কোটি টাকা জমা দেয়া হয়েছে। ওই টাকা থেকে কমপক্ষে ৩শত কোটি টাকা ব্যবসা পরিচালনার জন্য গ্রুপকে ফেরত দিতে হবে।

আরও পড়ুন :
বিএনপির ঘাড়ে দোষ দিয়ে গায়ের গন্ধ দূর করতে চায় সরকার -মির্জা ফখরুল
সংগঠন বহির্ভূত কার্যকলাপের কারণে সাময়িক বরখাস্ত হায়দার আলী তোতা

চেয়ারম্যান ও এমডি অর্থমন্ত্রীর নির্দেশ মোতাবেক ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করবেন। পাশাপাশি জামিনে মুক্ত হওয়ার পর এ প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় সম্পত্তির তালিকা অর্থমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হবে।

তৃতীয় প্রস্তাবে বলা হয়, বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে হলমার্কের ৯০ থেকে ১০০ কোটি টাকা জমা আছে। বিপুল অঙ্কের অর্থ আদালত কর্তৃক অবরুদ্ধ করা আছে। এ গ্রুপ যেন ব্যবসা পরিচালনা করে ঋণ পরিশোধ করতে পারে সেজন্য অবরুদ্ধ অর্থ অবমুক্ত করতে হবে।

চতুর্থ প্রস্তাবে বলা হয়, জনতা ব্যাংকের ম্যাক্স স্পিনিং মিলস ও আনোয়ারা স্পিনিং মিলসের হিসাবে জমাকৃত ৮৩ কোটি টাকা হলমার্কের পাওনা। এ অর্থ হলমার্ক গ্রুপকে ফেরত দিতে হবে।

পঞ্চম প্রস্তাবে বলা হয়, ঋণের টাকা সহজে পরিশোধের জন্য দীর্ঘমেয়াদি কিস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

ষষ্ঠ প্রস্তাবে বলা হয়, গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এমডি জামিনে মুক্তিলাভের পর দ্রুত জমি বিক্রি করে ঋণের টাকা পরিশোধ করবেন।

সপ্তম প্রস্তাবে বলা হয়, হালমার্ক সুন্দরভাবে ব্যবসা পরিচালনা, গ্রাহকদের পূর্ণবিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করতে পারে। এজন্য সব ধরনের ব্যাংকিং সুবিধা প্রদান করতে হবে।

লিখিত প্রস্তাবে তানভীর মাহমুদের আইনি কর্মকর্তা মো. বাবুল ইসলাম বলেন, হলমার্ক গ্রুপের এমডির ক্ষমতা প্রাপ্য হয়ে আপনাকে (অর্থমন্ত্রী) জানাচ্ছি- এ গ্রুপের এমডি বিগত ৭ বছরের বেশি সময় জেলহাজতে আছেন।

চেয়ারম্যান ও এমডির অবর্তমানে গ্রুপের ৪৩টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ। প্রায় ৪০ হাজার কর্মচারী বেকার। মেশিনারিজ কার্যকর না থাকায় প্রায় ধ্বংসের পথে। এখন চেয়ারম্যান ও এমডি জামিনে বের হতে পারলে এ গ্রুপ ঘুরে দাঁড়াতে এবং বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।

মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১২ সালের ৩১ মে পর্যন্ত প্রুপটি সোনালী ব্যাংকের শেরাটন শাখা থেকে জালিয়াতি করে ২ হাজার ৯৬৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।

বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় এ পর্যন্ত ৪৫৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা আদায় করা সম্ভব হয়েছে। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত হলমার্ক গ্রুপের কাছে সোনালী ব্যাংকের পাওনা ২ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা।

ফলে কারখানাগুলোর স্থাপিত প্রায় ২৮২ কোটি টাকা মূল্যের মেশিনারিজ ৬ বছরের অধিককাল ধরে অব্যবহৃত থাকার ফলে তা কার্যক্ষমতা হারিয়ে ক্রমান্বয়ে স্ক্রাপে পরিণত হচ্ছে।

সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৯ at ১০:২৩:২৯ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/যুন/আজা