ইভিএম প্রকল্পের ব্যয় ১৭১১ কোটি টাকা কমানোর প্রস্তাব

নতুন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনা ও রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পর্যালোচনা করে ব্যয় কমিয়ে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রায় এক হাজার ৭১১ কোটি টাকা ব্যয় কমানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র। এর আগে নির্বাচন কমিশন প্রকল্প প্রস্তাবে ব্যয় ধরেছিল আট হাজার ৭১১ কোটি টাকা। ওই প্রস্তাব পুনরায় পর্যালোচনা করতে পরিকল্পনা কমিশন নির্বাচন কমিশনে ফেরত পাঠিয়েছিল।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে এখন কোন খাতে ব্যয় কত কমেছে তার সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এটুকু নিশ্চিত হওয়া গেছে, সব মিলিয়ে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা। মূলত ইভিএম রাখার গুদাম নির্মাণ ও জনবল খাতে ব্যয় কমানো হয়েছে বলে জানা গেছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে কমপক্ষে ১৫০টি আসনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করতে চায় ইসি। এজন্য নতুন করে ২ লাখ ইভিএম মেশিন কেনাসহ অন্যান্য কার্যক্রম নিয়ে একটি প্রকল্প নিতে চাচ্ছে ইসি। এতে ব্যয় ধরা হয় ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকা।

সে অনুযায়ী প্রকল্পটি অনুমোদনের প্রস্তাব করে এর আগে পরিকল্পনা কমিশনেও পাঠানো হয়। কিন্তু অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে এত বড় ব্যয় ও ইভিএমে ভোটের স্বচ্ছতা নিয়ে বিভিন্ন পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়। এরপর প্রকল্পটি যৌক্তিকভাবে উপস্থাপনের জন্য ইসিকে পরামর্শ দেয় পরিকল্পনা কমিশন। বেশ কিছুদিন ধরে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে গত সপ্তাহে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠালেও প্রকল্পটির মূল্যায়ন সভা হয়নি।
ইভিএম প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ১ হাজার ৩০৩ জন জনবল চাওয়া হয়েছিল। তবে সরকারের জনবল কমিটি এখন পর্যন্ত প্রকল্পের জন্য মাত্র ১৩ জনের অনুমোদন দিয়েছে।

আরো পড়ুন:
>মন্দার মধ্যেও বেড়েছে জনশক্তি রপ্তানি
>জাজিরায় অ্যাম্বুলেন্স-ট্রাক সংঘর্ষ, নিহত ৬

ব্যয় কমার বিষয়ে ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান কালবেলাকে বলেন, জনবল কমানোর কারণে মূল ডিপিপি থেকে ব্যয় কমে যাবে। কারণ জনবলের সঙ্গে সম্পৃক্ত যানবাহন, অফিস স্পেস, আনুষঙ্গিক জনবল, অফিস সরঞ্জামসহ সবকিছু ডিপিপিতে ওই হিসেবে হিসাব করা। সুতরাং জনবল কমিয়ে অনুমোদন দিলে ব্যয় কমে যাবে। তিনি বলেন, ধারণা করা হচ্ছে এক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয় কমতে পারে। আর জনবলের বাইরে অন্যান্য খাতে ব্যয় কমানো হলে মোট ব্যয় আরও কমবে। আর যদি ডিপিপি অনুযায়ী সবক’টির অনুমোদন দেয় তাহলে ব্যয় কমবে না।

এদিকে নির্বাচন কমিশনের এই প্রকল্প অনুমোদন নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। নির্বাচন কমিশনের চলতি জানুয়ারির মধ্যে ইভিএম প্রকল্পের অনেুমোদন চেয়েছিল। তবে আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকের তালিকায় নেই ইভিএম প্রকল্প। যদিও বিশেষ প্রকল্প হিসেবে সরাসরি একনেকের টেবিলে উপস্থাপনের সুযোগ রয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা এবং একনেকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে , সোমবার অফিস সময় শেষ হওয়া পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এমনকি ইভিএম প্রকল্পের প্রকল্প মূল্যায়ণ কমিটির (পিইসি) সভাও অনুষ্ঠিত হয়নি। সেই হিসেবে এই প্রকল্প মঙ্গলবারের একনেকে উপস্থাপনের সম্ভাবনা কম। কালবেলা পত্রিকা অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম তার নিজ দপ্তরে সোমবার বিকেলে কালবেলা বলেন, ইভিএম প্রকল্প আগামীকালের (মঙ্গলবার) একনেকে উপস্থাপন হবে কিনা সেটা তিনি জানেন না। তিনি বলেন, এই প্রকল্পের পিইসি সভাই হয়নি। সাধারণত পিইসি সভা ছাড়া কোনো প্রকল্পে একনেকে উপস্থাপন করা হয় না। তবে অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে সরকার চাইলে সরাসরি একনেকে তোলা হতে পারে বলেও জানান তিনি। ইভিএম প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এই প্রকল্পে বেশ কয়েকটি পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো সংশোধন করে পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

আরো পড়ুন:
>মন্দার মধ্যেও বেড়েছে জনশক্তি রপ্তানি
>জাজিরায় অ্যাম্বুলেন্স-ট্রাক সংঘর্ষ, নিহত ৬

সেগুলো যাচাই-বাছাই করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এদিকে নির্বাচন কমিশন বলছে, চলতি জানুয়ারি মাসের মধ্যে একনেকে অনুমোদন না পেলে ইভিএম প্রকল্প বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, নির্বাচন কমিশন সব কাজ শেষ করেছে। এখন পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্ব তারা কীভাবে অনুমোদন দেবে।

জানুয়ারি ১৭.২০২৩ at ১০:০৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এসআর