থানচিতে আর্থিক সহায়তা বিতরণে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ

বলিপাড়া নারী কল্যাণ সমিতি (বিএনকেএস) এনজিও সংস্থার স্টার ফান্ড বাংলাদেশ প্রজেক্টের জরুরি মানবিক সহায়তা সাড়াপ্রদানে বান্দরবানে থানচিতে বন্যা ও পাহাড় ধ্বসের ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা তালিকাতে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের বঞ্চিত রেখে যাদের ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি তাদের অর্ন্তভুক্ত করার অভিযোগ করছে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা। ওই এনজিও সংস্থার সহায়তা প্রদানে টাকা নিয়ে চলছে কর্মীদের স্বজন-প্রীতি এমন অভিযোগের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও এলাকাবাসী। এতে করে চলতি বর্ষার মৌসুমে ভয়াবহ বন্যা ও পাহাড় ধ্বসের ভুক্তভোগী অসহায় প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের কপালে মিলছে না জরুরি মানবিক সহায়তা বিতরণে টাকার।

এদিকে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের বঞ্চিত এমন অভিযোগ করে ছান্দাক পাড়া বাসিন্দা প্রুসিংঅং মারমা, থুইঅং ছাই মারমা’সহ বেশ কয়েকজন বলেন, এবারের বন্যা ও পাহাড় ধ্বসের ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাজারে নতুন পাড়া, মগক পাড়া, ছান্দাক পাড়া, আপ্রুমং পাড়া, বয়ক হেডম্যান পাড়া, যোসেফ পাড়া, মেকহা পাড়া, ক্যাথলিক মিশন’সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের সাধারণ মানুষেরা। যারা বন্যায় প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদের অতিআংশিক তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এমন স্বজনপ্রীতিদের নাম দেওয়া হয়েছে।

আরো পড়ুন:

> অভয়নগরে মার আত্মহত্যার পর মেয়ের আত্মহত্যা, থানায় অপমৃত্যু মামলা
> কাজী শাহেদ আহমেদের মৃত্যুতে, যবিপ্রবি উপাচার্যের শোক

নতুন পাড়া বাসিন্দা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মো. নেয়াজুর রহমান ও জসিম বলেন, এবছরের বর্ষার বন্যায় সাঙ্গু নদী থেকে পানির উঠে ঘর-বাড়ি আসবাবপত্র নষ্ট ও হাঁস-মুরগি মারা গেছে, প্রথমে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার হলেও আর্থিক সহায়তা প্রদানে লিষ্টের নাম আসেনি। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা সহায়তার সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, যা ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ভুক্তভোগী আমরাই।

থানচি সদরে ২নং ওয়ার্ডে ছান্দাক পাড়া কারবারি উবামং মারমা বলেন, ছান্দাক পাড়াতে ৪-৫ পরিবারের প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে কর্মীর স্বজনপ্রীতি নাম দেওয়া হয়েছে বলে আমার কাছে এমন অভিযোগ করছে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত পাড়ার লোকজনরা। বন্যা ও পাহাড় ধ্বসের ক্ষতিগ্রস্তদের বঞ্চিত করার উচিত না। এব্যাপারে সঠিক তদন্ত পূর্বক যথাযথ ব্যবস্থার গ্রহনে অনুরোধ সংশ্লিষ্টদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেসরকারি এনজিও সংস্থার বিএনকেএস থেকে থানচি উপজেলায় বন্যার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ৩৩ লক্ষ টাকা আর্থিক অনুদান বরাদ্ধ দেওয়া হয়। তারমধ্যে ৪টি ইউনিয়নের বলিপাড়া ২৮৮ পরিবার, উপজেলা সদরে ২০০ পরিবার, রেমাক্রী ৫০ পরিবার ও তিন্দু ইউনিয়নের ৫০ পরিবার’সহ মোট ৫শত ৮৮ ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার পাবে ৫ হাজার ৫শত টাকা আর্থিক সহায়তা। শুধু অর্থ নয় বন্যার কবলিত ক্ষতিগ্রস্তদের সুস্থতা নিশ্চিত করতে ৫০টি করে পানি বিশুদ্ধকরন ট্যাবলেট ও প্রতি পরিবারের মাঝে ২টি লিফলেট বিতরণ করা কথাও রয়েছে। তাছাড়া বন্যার কবলিত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরি করতে বিএনকেএস সংস্থা থেকে গ্রামগুলোতে মাঠে কাজ করছেন ৫ জন ভলেন্টিয়ার।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সোমবার (২৮ আগষ্ট) দুপুরে থানচি সদর ইউপি পরিষদের মিলনায়তন হলরুমে ২শত পরিবারের মাঝে বন্যায় ও পাহাড় ধ্বসে ক্ষতিগ্রস্থদের প্রতি বিএনকেএস এনজিও বাস্তবায়নে বান্দরবান জেলায় বন্যা ক্ষতিগ্রস্থ অসহায় জনগোষ্ঠীকে জরুরী মানবিক সাড়াপ্রদান প্রকল্পের মাধ্যমে স্টারট ফাউন্ড বাংলাদেশ অর্থায়নে একশন এইড সহযোগিতায় নগদ আর্থিক সহায়তা বিতরণ করছে। ভুক্তভোগী ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা খোলা আকাশে রোদের বসে ও হলরুমে কিছু ভুক্তভোগী বসে থাকার দেখা গেছে। এরপরেই শুরু হয় সমালোচনা ঝড়। আর্থিক অনুদান না পাওয়াই একের পর এক অভিযোগ করতে থাকে বন্যার কবলিত সাধারণ মানুষ। তালিকা সাথে সামঞ্জস্য একেবারে নেই, তাদের তালিকা দেখা গেছে অন্যরকম চিত্র। অনেকেই এই বন্যাতে বাড়িঘর প্লাবিত না হয়েও পাচ্ছেন আর্থিক অনুদান। এতে দুঃখ প্রকাশ ও এনজিও প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া করেছেন প্রকৃত বন্যার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো।

এব্যাপারে জানতে চাইলে সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অংপ্রু ম্রো বলেন, বিএনকেএস এনজিও বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি অভিযোগ পাওয়ার পর, খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, আসলেই যারা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তারা কিছুই পায়না। বিএনকেএস এনজিও তাদের কর্মীদের গাফিলতি কারণেই এর আসল কারণ। উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা মিটিংয়ের এবিষয়ে উস্থাপনে পদক্ষেপ হিসেবে সিন্ধান্ত নিয়েছি।

এই অভিযোগ বিষয়ে সত্যতার কতটুকু প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলিপাড়া নারী কল্যাণ সমিতি (বিএনকেএস) নির্বাহী পরিচালক হ্লাসিংনু মারমা বলেন, আমি ও আমার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বন্যা ও পাহাড় ধ্বসে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে সামর্থ অনুযায়ী মানবিক আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছি। বিতরণে আমার কর্মীদের অনিয়ম কিংবা দুর্নীতি অভিযোগ থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ আমার পক্ষে করার কিছু নেই। কারন সীমাবদ্ধতা মধ্যে থানচিতে মাত্র ৫শত ৮৮ জনকে মানবিক আর্থিক সহায়তা আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে। উপজেলার ক্ষতিগ্রস্তদের প্রত্যক জনকে তো আর সহায়তা প্রদানে বিএনকেএস এনজিও পক্ষে সম্ভব নয়।

তিনি আরো বলেন, থানচিতে ভয়াবহ বন্যায়ের জনসাধারণের মানুষের ব্যাপক আকারে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থেকে সহায়তা প্রদান করতে এমন কোনো সংস্থার, জনপ্রতিনিধি, হেডম্যান ও ধনীদের দেখছি না। অভিযোগটি মিথ্যাও হতে পারে, আবার সত্যও হতে পারে। অভিযোগ না করে বরংচ্চ ৫৮৮ পরিবার ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করছি তা সাধুবাদ জানানো উচিত।

থানচি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহা. মুনসুর বলেন, কয়েকদিন আগের বিএনকেএস লোকজন এসে শুধু জানিয়েছে তারা মাঠে মাঠে গিয়ে জরিপ করবে। আর তিনদিন আগে স্কুলের সামনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা দেখেছি। তবে প্রকৃতরা আর্থিক সহায়তা পাইনি কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি তারা পেয়েছে, সেই ব্যাপারে আমার কাছে এখনো কেউ অভিযোগ করতে আসেনি। যদি অভিযোগ আসে তাহলে সেটি নিয়ে তদারকি করা হবে।

আগষ্ট ০৫,২০২৩ at ১৬:৩৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর