কচুরীপানায় নাব্যতা সংকটে ঐতিহ্য হারাচ্ছে বলুগা খাল

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে বলুগা খালে কচুরীপানায় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। কচুরীপানায় নাব্যতা সংকটে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে এ খালের ঐতিহ্য। দীর্ঘদিন ধরে এ দুর্ভোগ সৃষ্টি হলেও কচুরীপানা অপসারণ ও সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

উপজেলার তালতলা থেকে কুমুরিয়া পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কচুরীপানার এ জট সৃষ্টি হয়েছে। এতে নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপণ্য হাট-বাজারে পরিবহনে নেয়া যাচ্ছে না। দুষণ হচ্ছে পরিবেশ, বাড়ছে মশার প্রজননক্ষেত্র। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বলুগা খালের তীরবর্তী তালতলা, নিজামকান্দি, নড়াইল, ধীরাইল, রামদিয়া, সাফলীডাঙ্গা, আড়ুয়াকান্দি, খাগড়াবাড়িয়া, সোনাডাঙ্গা, লক্ষ্মীপুর, কুমুরিয়া এলাকায় কচুরীপানায় জটলা বেঁধে আছে।

আরো পড়ুন :

> তিন দিনের ছুটি ঘোষণা, বন্ধ থাকবে ব্যাংক-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
> শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে জবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি বহিষ্কার

জানা গেছে, গোপালগঞ্জের মধুমতি নদীর সঙ্গে টেকেরহাট বন্দরের কুমার নদীর সংযোগ খাল মাদারীপুর বিলরুট ক্যানেল (এমবিআর) নামে পরিচিত। আর একই সঙ্গে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ভেড়ারহাট থেকে উৎপত্তি হয়ে রামদিয়ার মধ্যদিয়ে ফরিদপুরের চন্দনা বারাশিয়া নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে বলুগা খাল নাম ধারণ করে। যা ওয়াপদা খাল নামেও পরিচিত। আর এ খালের কারণে রামদিয়ার সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। ফলে এ খালের তীরে রামদিয়ায় গড়ে ওঠে জেলার অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক কেন্দ্র এবং নৌবন্দর। এ বন্দর থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার পণ্যদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হয়ে থাকে। ফলে বাণিজ্যিক কেন্দ্রটি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।

এমনকি নৌপথে ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকায় রামদিয়ায় দুটি সরকারি খাদ্যগুদাম নির্মিত হয়। নাব্য সংকট ও কচুরীপানার কারণে আজ সে খাদ্য গুদাম দুটোও অকার্যকর হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ঢাকা, খুলনা, টেকেরহাট, বরিশাল, ঝালকাঠি প্রভৃতি স্থানের ব্যবসায়ীরা এ নৌপথ দিয়ে পণ্য পরিবহন করে এলাকার মানুষের চাহিদা মেটাতেন। বড় বড় মহাজনী নৌকায় ধানের কেনাবেচা হতো খালেরপাড় ঘেঁষে। এখন আর সেই ঐতিহ্য নেই। রামদিয়া বাণিজ্য কেন্দ্রের ব্যবসায়ী মো. সাঈদ মোল্যা বলেন, এ খাল দিয়ে নৌপথে কৃষকরা বাজারে ধান, পাটসহ কৃষিপণ্য বিক্রির জন্য নিয়ে আসতেন। এখান থেকে লঞ্চে নৌপথে গোপালগঞ্জ জেলা শহরসহ বিভিন্ন স্থানে যেতাম আমরা। কচুনীপানা আর নাব্য সংকটের কারণে এখন তা সম্ভব হচ্ছে না।

খাগড়াবাড়িয়া গ্রামের রাসেল মিয়া বলেন, বলুগা খালে কচুরীপানার জট থাকায় নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। খালের তীরবর্তী হাট-বাজারের ব্যবসায়ীদের মালামাল পরিবহনে সমস্যা হচ্ছে। বালু ভর্তি বাল্কহেড আসতে না পারায় বালু ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। অচিরেই এ কচুরীপানা অপসারণ করে খালের স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনতে হবে। কাশিয়ানী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুব্রত ঠাকুর বলেন, এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।

আগস্ট ২৪, ২০২৩ at ১৬:২৪:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর