রাশিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ওয়াগনার প্রধান প্রিগোজিন নিহত

ছবি- সংগৃহীত।

রাশিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদসংস্থা আরআইএ নভোস্তি। বুধবার (২৩ আগস্ট) রাশিয়ার বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে তিনিসহ আরও ১০ জনের সবাই এই দুর্ঘটনায় মারা গেছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানায় সংস্থাটি।

নভোস্তির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার (২৩ আগস্ট) বিধ্বস্ত বিমানে যাত্রী হিসেবে প্রিগোজিনসহ আরও ১০ জন ছিলেন। বিমান বিধ্বস্ত হয়ে তাদের সবাই নিহত হয়েছেন । মস্কো থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক ড্যানিয়েল হকিন্স বলেছেন, রাশিয়ান বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষের মতে, তারা প্রিগোজিনের ওই বিমানে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

আরো পড়ুন :

> নাটকীয় জয়! ফাইনালে মেসির ইন্টার মায়ামি
> আইভি রহমানের সমাধিতে আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধা

এছাড়া ওয়াগনার গ্রুপের সংগে সম্পৃক্ত গ্রে জোন নামে একটি টেলিগ্রাম চ্যানেলেও প্রিগোজিনের নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। জরুরি পরিষেবার বরাত দিয়ে সংবাদসংস্থা ইন্টারফ্যাক্স বলছে, ঘটনাস্থল থেকে বিধ্বস্ত বিমানের ১০ আরোহীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে এবং উদ্ধার অভিযান সম্পন্ন হয়েছে।

এর আগে ওয়াগনার ঘনিষ্ঠ টেলিগ্রাম চ্যানেল গ্রে জোন জানিয়েছে, যে মস্কোর উত্তরে তেভর অঞ্চলে বিমানটিকে গুলি করে নামানো হয়।

গেল জুনে প্রিগোজিন রুশ সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে একটি বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন; যা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। এরপর আড়ালে চলে যান ওয়াগনার বাহিনীর প্রধান ইয়েভগিনি প্রিগোজিন। তার প্রায় এক মাস পর জুলাইয়ের ২০ তারিখে প্রথমবারের মতো তার জনসম্মুখে আসার খবর পাওয়া যায়। তার এক মাস যেতে না যেতেই এবার তার মৃত্যুর খবর এলো। গ্রে জোন জানিয়েছে, স্থানীয় বাসিন্দারা দুর্ঘটনার আগে দুটি বিস্ফোরণের মতো শব্দ পান, এরপর ধোঁয়ার দুটি রেখা দেখতে পান তারা।

তাস নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে যে বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর এতে আগুন ধরে যায়। এরইমধ্যে বিমানটি থেকে চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। উড্ডয়নের পর বিমানটি আধা ঘণ্টারও কম সময় আকাশে ছিল বলেও উল্লেখ করেছে তাস নিউজ।

৬২ বছর বয়সী এই ভাড়াটে সেনাপ্রধান ২৩-২৪ জুন বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। প্রিগোজিন ইউক্রেন থেকে তার সেনাদের সরিয়ে নিয়েছিলেন, ডনের দক্ষিণ রুশ শহর রোস্তভ দখল করেছিলেন এবং মস্কোর দিকে অগ্রসর হওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।

ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে রাশিয়ার সামরিক কমান্ডারদের সঙ্গে কয়েক মাস ধরে চলা টানাপোড়েনের পর এই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ওয়াগনার সৈন্যদের বেলারুশে যেতে বা রাশিয়ান সেনাবাহিনীতে যোগদানের অনুমতির মধ্যে দিয়ে এর সমাপ্তি হয়।

প্রিগোজিন নিজে বেলারুশে যেতে রাজি হয়েছিলেন। অবাধে চলাফেরাও করছিলেন তিনি। বিদ্রোহের পর তাকে রাশিয়া ও আফ্রিকাতে দেখা গেছে। তবে রাশিয়ার বেশ কয়েকজন পর্যবেক্ষক বিদ্রোহের পর তাকে ‘কাঠের পুতুল’ বলে বর্ণনা করেছিলেন।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষার প্রতি প্রিগোজিনের চ্যালেঞ্জের পর প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল বেশ শক্ত। ২৪ জুন একটি ভিডিও বার্তায় এ ঘটনাকে বিশ্বাসঘাতকতা এবং পেছন থেকে ছুরিকাঘাত বলে অভিহিত করেছিলেন ভ্লাদিমির পুতিন।

তবে বিদ্রোহের পর একটি চুক্তি যদিও হয়েছিল, তার অর্থ এটা ছিল না যে তিনি নিরাপদ ছিলেন। বিমান বিধ্বস্তের বিষয়ে সিআইএ পরিচালক উইলিয়াম বার্নস বলেছেন পুতিন ঠান্ডা মাথায় প্রতিশোধ নিতেই পছন্দ করেন। এর কোনটিই অবশ্যই প্রমাণ করে না যে প্রিগোজিন এবং তার সহযাত্রীদের ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল।

কিন্তু পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে এটা বলা যায় যে, তার এ মৃত্যুকে কেউ যদি স্রেফ দুর্ঘটনা বলেন সেটি অনেকের কাছেই বিশ্বাসযোগ্য হবে না।

আগস্ট ২৪, ২০২৩ at ১১:৫৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/সিভ২৪/ইর