অস্ত্র তৈরীর সরঞ্জামাদি’সহ বিপুল আগ্নেয়াস্ত্র’সহ ডাকাত প্রধান ফয়সাল আটক

কক্সবাজার টেকনাফ থানাধীন রঙ্গীখালি এলাকার দূর্গম পাহাড়ে অস্ত্র তৈরীর কারখানা ও ডাকাত দলের আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করে মূলহোতা ফয়সাল’সহ ডাকাত চক্রের ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১৫; বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও অস্ত্র তৈরীর সরঞ্জামাদি উদ্ধার।

১৮ আগস্ট সন্ধ্যা থেকে গোপন সংবাদে র‌্যাব-১৫ এর একটি আভিধানিক দল কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানাধীন হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গীখালি এলাকার গহীন পাহাড়ে অবস্থানরত একটি ডাকাত চক্র ধরার জন্য অভিযানে ডাকাত দলের আস্তানায় একটি অস্ত্র তৈরীর কারখানা আবিষ্কার করে। র‌্যাবের অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে ডাকাত দলের সদস্যরা র‌্যাবের উপরে গুলি বর্ষনের মাধ্যমে এদিক-ওদিক দৌড়ে পলায়নকালে ধাওয়া করে ফয়সাল বাহিনীর মূলহোতা ফয়সালকে আটক করে।

আরো পড়ুন :

> শার্শায় ওয়ান শুটার গান ও গুলিসহ গ্রেফতার সন্ত্রাসী গ্রেফতার
> পাঁচবিবিতে অন্যের জমিতে জোড়পূর্বক ঘর নির্মানের চেষ্টা

জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত ফয়সাল,ডাকাত দল চক্রের অন্যান্য সহযোগীদের নাম প্রকাশ করে। তার দেয়া তথ্যে টেকনাফের রঙ্গীখালির বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকায় অভিযানে বদি, কবির, সৈয়দ হোসেন, দেলোয়ার এবং মিজানুর’কে গ্রেফতার করে।

এলাকায় অভিযানে ডাকাত দলের তৈরীকৃত অস্ত্রের কারখানা হতে ২টি একনলা বড় বন্দুক, ৪টি এলজি, ১টি অর্ধনির্মিত এলজি, ৭ রাউন্ড শর্টগানের কার্তুজ, ১০রাউন্ড রাইফেলের তাজা কার্তুজ, ১টি ড্রিল মেশিন, ১টি আগুন জ্বালানো মেশিন, ২টি লেদ মেশিন, ২টি বাটাল, ১টি শান দেয়ার রেত, ২টি লোহার পাইপ, ২টি প্লাস, ১টি কুপি বাতি এবং ৩টি স্মার্ট মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

আটক ৬জন সবাই টেকনাফ থানার কক্সবাজারের ফয়সাল উদ্দিন প্রকাশ ফয়সাল (৪০), রঙ্গীখালী গ্রামের পিতা-গুরা মিয়া (২) মো. বদি আলম (বদাইয়া)(৩৫), পশ্চিম সাতঘরিয়াপাড়া গ্রামের পিতা-নজির আহম্মদ। (৩) মো. কবির আহাম্মদ (৪৩), পিতা-জানে আলম, গ্রাম দক্ষিণ আলীখালী, (৪) মো. সৈয়দ হোসেন (৩২), পিতা-বাছা মিয়া, গ্রাম-পশ্চিম সাতঘরিয়াপাড়া, (৫) মো দেলোয়ার হোসন(৩৫) পিতা-মৃত বনি আমিন, গ্রাম-পূর্ব সাতঘরিয়াপাড়া, টেকনাফ, কক্সবাজার। (৬) মো. মিজানুর রহমান (২৬) পিতা-জাহিদ হোসেন, সাং-উলুছামারি কুনারপাড়ার বাসিন্দা।

বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও অস্ত্র তৈরীর সরঞ্জামাদি উদ্ধার।

জিজ্ঞাসাবাদে চক্রটি টেকনাফের দূর্গম পাহাড়ে অবস্থানে ফয়সাল ডাকাতের সরাসরি নেতৃত্বে ডাকাতি, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, ধর্ষণ, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা এবং হত্যা’সহ নানাবিধ অপরাধ কার্যক্রম’সহ দূর্গম পাহাড়ী এলাকা হওয়ার সুবাদে সেখানে গড়ে তুলে অস্ত্র তৈরীর কারখানা।

ডাকাত ফয়সাল বিভিন্ন সময়ে তার অন্যান্য সহযোগীদের মাধ্যমে ভিবিন্ন সন্ত্রাসী চক্রের নিকট অস্ত্র সরবরাহ’সহ নিজেদের তৈরীকৃত আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা তাদের অপরাধ কর্মকান্ড’সহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে সন্ত্রাসী কার্যক্রম শেষে তারা পুনরায় গহীন পাহাড়ে তৈরীকৃত আস্তানায় আত্মগোপনে চলে যেত।

আটক ডাকাত চক্রটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপরে সশস্ত্র হামলার তথ্য পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদে নানাবিধ অপরাধের পাশাপাশি ডাকাত দলটি টেকনাফের বিভিন্ন স্থান হতে অপহরণ করে রঙ্গীখালির গহীন পাহাড়ে অপহৃত ভিকটিমদের নিয়ে তাদের আস্তানায় বন্ধি করে রাখতো এবং ভিকটিমের পরিবারের নিকট মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবী করত। মুক্তিপণের টাকা আদায় করতে অপহৃত ভিকটিমের উপর চালানো হত পৈশাচিক নির্যাতন, মুক্তিপণের আদায়,চাহিদা মতে মুক্তিপণ না পেয়ে ইতোপূর্বে কয়েকজন ভিকটিমকে হত্যা পর্যন্ত করেছে বলে অপরাধীরা জানায়।

ডাকাত ফয়সাল একজন কুখ্যাত অস্ত্রাধারী ডাকাত দলের মূলহোতা। সে ফয়সাল প্রধান বাহিনীর নেতৃত্বে রয়েছে টেকনাফের রঙ্গীখালি এলাকার দুর্গম পাহাড় গড়ে উঠে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরীর কারখানা ও ডাকাত দলের আস্তানা।দলের সহযোগীদের নিয়ে সেখান থেকে টেকনাফ,উখিয়া ইত্যাদি এলাকায় বিভিন্ন সময়ে খুন,অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, ধর্ষণ, ডাকাতি ও দুস্যতা, চাঁদাবাজি,অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা ও মাদক ব্যবসাসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সক্রিয় ছিল। তার বিরুদ্ধে হত্যা,ধর্ষণ ও অন্যান্য অপরাধে টেকনাফ থানায় ৩টির অধিক মামলা রয়েছে।

গ্রেফতারকৃত মো. বদি আলম ওরফে বদাইয়া এর বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক, অস্ত্র, ডাকাতি ও অন্যান্য অপরাধে টেকনাফ থানায় ১৪টি, মো. কবির আহাম্মদ এর বিরুদ্ধে ২টি, মো. সৈয়দ হোসেনের বিরুদ্ধে ৩টি, মো. দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ৩টি এবং মোঃ মিজানুর রহমান এর বিরুদ্ধে ১টি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। তথ্য নিশ্চিত করেছেন, মো. আবু সালাম চৌধুরী অতিঃ পুলিশ সুপার, সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল’ এন্ড মিডিয়া) ।

আগস্ট ১৯, ২০২৩ at ১৬:৪৪:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর