বৃক্ষমেলায় ক্যান্সারের মহাওষুধ ‘করোসল’

ছবি- সংগৃহীত।

দেখতে অনেকটা আনারসের মতো। সবুজ ফলটির বাইরের অংশে কাঁটা কাঁটা। নাম তার ‘টক আতা’। আকারে কাঁঠালের চেয়ে ছোট। কোষগুলো কাঁঠালের মতো। টক-মিষ্টি স্বাদের এই ফলটি খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি উপকারীও। তবে এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি ক্যান্সার প্রতিরোধী।

ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়াতে কার্যকরী বিস্ময়কর ‘করোসল’ গাছ চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছে, করোসল ফল কেমোথেরাপির চেয়ে ১০ হাজার গুণ শক্তিশালী। আর এই শক্তিশালী মহাওষুধি করোসল গাছ এখন পাওয়া যাচ্ছে খুলনার বৃক্ষমেলায়।

আরো পড়ুন :

> সাতক্ষীরায় ৫ স্বর্ণের বারসহ চোরা কারবারি আটক
> যশোরে সিআইডির জালে জ্বীনের বাদশার তিন প্রতারক আটক

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ফল ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। এই ফল খেলে ক্যান্সার রোগীর কেমোথেরাপির প্রয়োজন হয় না। এ ফল ক্যান্সার সেলের মৃত্যু ঘটাতে কেমোথেরাপির চেয়ে এটি ১০ হাজার গুণ বেশি শক্তিশালী। করোসল বা টক আতা গাছে রয়েছে অ্যানোনাসিয়াস অ্যাস্টোজেনিন নামে এক ধরনের যৌগ।
এই যৌগ ক্যান্সারের কোষের বৃদ্ধি রুখে দেয়, যা কেমোথেরাপি করে।

ফলে ক্যান্সার কোষ আর বাড়তে পারে না। বিশেষ করে স্তন ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সার, প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার, প্রসটেট ক্যান্সারে এটি বেশি কার্যকর। এছাড়া নিয়মিত এই ফল খেতে পারলে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটা বেড়ে যায়। শরীরও চাঙ্গা থাকে এবং দুর্বল ভাব আসে না। রক্তকে শোধিত করতেও এই ফলের গুণ অনস্বীকার্য। শুধু ফলই নয়, এই গাছের ছাল ও পাতায় লিভার সমস্যা, আর্থরাইটিস ও প্রস্টেটের সমস্যা ও নিরাময় হয়ে যায়।

জানা যায়, কাঁঠালের মত কাঁটা যুক্ত সবুজ রঙের হয় করোসল ফল। করোসল গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে হলুদ রঙের ফুল ধরে। ফুল ফোঁটার পর লাভ আকৃতির তিনটি খোসা ফেটে গিয়ে ভেতর থেকে করোসল ফল বের হয়। প্রতিটি ফলের ওজন হয় চারশ গ্রাম থেকে এক কেজি। করোসল ফল এবং গাছের পাতা পানিতে চুবিয়ে খাওয়ার পর ক্যানসার আক্রান্ত রোগী ভালো হয়ে যায়। ফলটির মূল্য ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। এর গাছের পাতাও অনেক উপকারী। ভেষজ করোসল ওষধি গাছটি দেশ-বিদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

ক্যান্সার প্রতিরোধী করোসল ফল

করোসল ফল ক্যানসার, কিডনি, হার্ট লিভার পরিষ্কার এর জন্য বিশেষ উপকারী। আমেরিকাতে এই গাছের পাতা ও ফল ভালো দামে বিক্রি করা হয়। ফল ও পাতা খেলে ক্যানসারের মতো কঠিন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। মূলত, আমাজন নদীর উপত্যকা দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে করোসল প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। এছাড়া চায়না, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা, ব্রাজিল এইসব দেশেও করোসল ফল জন্মায়। বাংলাদেশে এই ফলের চাষ শুরু হয়ে গেছে। ময়মনসিংহের ত্রিশালে ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে পরিচিত করোসল ফলের গাছ পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু হয়েছে। করোসল ফল চাষ কৃষকদের আয়ের এই নতুন দিশা দেখাচ্ছে।

খুলনা সাকির্ট হাউজ ময়দানে চলছে বৃক্ষমেলা। এই মেলায় ঢুকতেই ডান পাশে রয়েছে নিজাম নার্সারী। এই নার্সারীটি অন্য সময়ে নগরীর আহসান আহমেদ রোড এলাকায় গাছ বিক্রি করে থাকে।

কথা এই নার্সারীর স্বত্বাধীকারী আব্দুল্লাহ শেখের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার সংগ্রহে বেশ কয়েকটি করোসল গাছ রয়েছে। এই গাছের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে যাদের বাড়িতে ক্যান্সারের রোগী রয়েছে, তারা বেশি কেনেন। আমার কাছে ১ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা দামের করোসল গাছ রয়েছে। মেলায় এসে অনেকেই এই গাছের খোঁজ করে। আশা করছি, আমার কাছে যে করোসল গাছগুলো রয়েছে তা আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বিক্রি হয়ে যাবে।

খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (পিপি) এসএম মিজান মাহমুদ জানান, করোসল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম অ্যানোনা মিউরিকাটা। করোসল ফল কেমোথেরাপির চেয়ে ১০ হাজার গুণ শক্তিশালী। অথচ কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই। করোসল অ্যানোনা মিউরিকাটা গোত্রের একটি ফল। অনেক দেশেই এ ফলটি ক্যান্সার প্রতিরোধক ফল হিসেবে পরিচিত।

শুধু ফলই নয়, এই গাছের ছাল ও পাতায় লিভার সমস্যা, আর্থরাইটিস ও প্রস্টেটের সমস্যায়ও নিরাময় হয়ে যায়। শরীরও সতেজ থাকে, দুর্বল ভাব আসে না। করোসল ফলের গাছটি ২৫-৩০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট এবং স্বল্প শাখা-প্রশাখাযুক্ত হয়ে থাকে। এই ফলটি আতা ফলের মতো খাওয়া ছাড়াও পানীয় এবং শরবত হিসেবে গ্রহণ করা যায়। করোসল ফলের জন্যে ৫-৬ দশমিক ৫ মাত্রার মাটি সবচেয়ে উপযোগী। বেলে মাটি এই ফলের জন্যে সবচেয়ে উপযুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

খুলনা নার্সারী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু মাসুদ জানান, মেলা মানেই নতুন কিছু। আমরা চেষ্টা করি প্রতিবছরই বৃক্ষমেলায় নতুন নতুন গাছ মানুষের সামনে আনতে। এবছর বৃক্ষমেলায় অনেক ধরণের গাছ এসেছে। ক্রেতা এবং দর্শনার্থীরা মেলায় এলে তাদের মনে খোরাক মিটবে এবং কিনতেও পারবে।

আগস্ট ০৪, ২০২৩ at ২১:০৬:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর