আজ বিশ্ব বাঘ দিবস, সুন্দরবনকে রক্ষা করতে হলে বাঘকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে

“বাঘ করি সংরক্ষণ সমৃদ্ধ হবে সুন্দরবন” এ প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে প্রতি বছর ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস পালিত হয়। ২০১০ সালের সেন্ট পিটারবার্গে অনুষ্ঠিত বাঘ অভিবর্তনে এই দিবসটির সূচনা হয়।

পুরো বিশ্ব জুড়ে দিবসটি পালন করা হলেও বাংলাদেশ, ভারত, নেপালসহ ১৩ টি দেশে বাঘের ঘনত্ব বেশি থাকায় এসব দেশে গুরুত্ব সহকারে দিবসটি পালন করা হয়। বনের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বাঘের ভ’মিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বন বিভাগের তথ্য মতে স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালে জরিপে সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৩৫০ টি। এর পর ১৯৮২ সালের জরিপে ৪২৫ টি ।

আরো পড়ুন :

> ঘোড়াঘাটে আম বাগান থেকে অজ্ঞাত নারীর মরদেহ উদ্ধার
> ঘোড়াঘাট ভর্নাপাড়া টু মগলিশপুর ৩ মাথা মোড় সলিং রাস্তার বেহাল দশা পাকা করনের দাবী

এর ২ বছর পর ১৯৮৪ সালে সুন্দরবন দক্ষিণ বণ্য প্রাণী অভয়ারণ্যে ১১০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জরিপ চালিয়ে ৪৩০ থেকে ৪৫০ টি বাঘ থাকার কথা জানা গেছে। ১৯৯২ সালে ৩৫৯ টি বাঘ থাকার তথ্য জানায় বন বিভাগ। ১৯৯৩ সালে সুন্দরবনের ৩৫০ বর্গ কিলেঅমিটার এলাকায় প্যাগমার্ক পদ্ধতিতে জরিপ চালিয়ে ধনবাহাদুর তামাং ৩৬২ টি বাঘ রয়েছে বলে জানায়। ২০০৪ সালের জরিপে বাঘের সংখ্যা পাওয়া যায় ৪৪০ টি যা বাঘের পায়ের ছাপ পদ্ধতিতে গণণা করা হয়।

বীরত্বের প্রতীক, জাতীয় প্রাণী ও প্রকৃতিক প্রহরী রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল বিশ্বখ্যাত সুন্দরবন। বাঘ বনের জীববৈচিত্র, খাদ্য শৃঙ্খল ও প্রতিবেশ চক্রের প্রধান নিয়ন্ত্রক। বন বিভাগ সূত্রে জানা যায় ২০১৮ সালে সর্বশেষ জরিপে বাঘের সংখ্যা ১১৪ টি। কিন্তু পূর্ব সুন্দরবনে ২০১৯ সালের ২১ আগস্ট থেকে ২০২২সালের ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় আড়াই বছরের ব্যবধানে ৪ টি বাঘের মৃত দেহ উদ্ধার করে বনবিভাগ। অপরদিকে ২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি পাচারকালে ১ টি বাঘের চামড়া সহ এক পাচারকারীকে আটক করে র‌্যাব-৮ ও বনবিভাগ। খুলনা বিভাগীয় বন সংরক্ষকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়। ২০২৩ সালে পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকে বাঘের একটি মৃতদেহ উদ্ধার করে বন বিভাগ এবং একই রেঞ্জ থেকে চলতি বছরে একটি বাঘের চামড়া উদ্ধার করে র‌্যাব-৬।

খুলনা বিভাগীয় বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, এ মুহুর্তে সুন্দরবনে কয়টি বাঘ আছে তার সঠিক হিসাব নেই বনবিভাগের কাছে। কারন গত চার বছর পর চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে ক্যামেরা ট্রাকিং পদ্ধতিতে বাঘ গণনার কাজ শুরু হয়েছে। ২০১৮ সালের পর আর বাঘ সঠিক ভাবে গণণা করা হয়নি। তবে বাঘ গণণার কাজ চলছে ২০২৪ সালে জানা যাবে সুন্দরবনে এখন কতটি বাঘ রয়েছে।

বন বিভাগের একটি সূত্র জানায়, পর্যটক ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার যে সব মানুষ বনে গেছে তারা ডিমেরচর, সুকপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় মাঝে মাঝে বাচ্চা সহ বাঘ দেখেছে। এছাড়া গত মাসের প্রথম দিকে বিকালে বেলা কচিখালি অফিস চত্তরে বাঘ এসে অবস্থান নেয়। দীর্ঘ সময় বাঘ না সড়লে এক পর্যায়ে রাইফেলের ফাাঁকা গুলি করে তাড়ানো হয়। তাতে মনে হচ্ছে সুন্দরবনে বাঘ বেড়েছে। সুন্দরবনের বাঘসহ বন্য প্রাণীর আবাসস্থল বৃদ্ধি করা হয়েছে। ৬ লাখ ১ হাজার ৭ শত হক্টর বনের মধ্যে বর্তমানে ৩ লাখ ১৭ হাজার ৯৫০ হেক্টর অভয়ারণ্য বন রয়েছে। যা ১৯৯৬ সালে মোট বনের ২৩%, এবং পরে সম্প্রসার করায় বর্তমানে ৫৩% অভয়ারন্য এলাকা রয়েছে। যার আয়তন ৩ লাখ ১৭ হাজার ৯৫০ হেক্টর।

একটি নির্ভর যোগ্য সূত্র জানায় ২০১৮ সালের জরিপ অনুযায়ী সুন্দরবনের ১১৪ টি বাঘের মধ্যে ২০টি প্রাপ্ত বয়স্ক স্ত্রী বাঘও থাকে তাদের থেকে প্রতিবছর কমপক্ষে ২০ থেকে ৪০টি বাঘ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। কিন্তু সেখানে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে না। এর কারণ হতে পারে বাঘের জিনগত বৈচিত্রের অভাব। অল্প বাঘ থাকায় তাদের মধ্যে ইনবিডিং তথা নিকট সম্পর্কের মধ্যে প্রজনন হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এতে বাঘ শাবকের মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পায়। তাই বাঘ সংরক্ষণে মানুষ ও প্রাকৃতিক কারণগুলো ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি জিনগত বিষয়টির দিকে নজর দিতে হবে। এজন্য বাঘের জিনগত বৈচিত্র আনা প্রায়োজন।

হেটারোজেনোসিটি বৃদ্ধি করতে পারলে বাঘের বংশ যেমন বৃদ্ধি পাবে সেই সঙ্গে বাঘের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও যে কোন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর মাধ্যমে বাঘকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করবে। তার ভাষ্যমতে ভারতে ২০১৯ সালের জরিপ অনুসারে বাঘ আছে ৯৬ টি। কিন্তু এ সংখ্যা ২০১৭ সালে ছিল ৮৭ টি। মাত্র ৩ বছরের ব্যবধানে বাঘ বেড়েছে ৯ টি।

বাংলাদেশের তুলনায় ভারতীয় সুন্দরবন অংশে বাঘ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সেখানকার বনবিভাগ অনেকদিন ধরেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। ফলে ভারতে বাঘের সংখ্যা বাংলাদেশের তুলনায় দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ দ্রুততার সঙ্গে দক্ষিণ অঞ্চলে যে হারে জলবায়ু পরিবর্তন শুরু হয়েছে তাতে সুন্দরবনের বাঘ রক্ষায় মানুষ ও প্রাকৃতিক কারণগুলো ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি জিনগত বিষয়টির দিকেও নজর দিতে হবে। এত অল্প সংখ্যক বাঘের প্রবল জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করে টিকে থাকা ভবিষ্যতে খুবই কষ্ট সাধ্য হবে। তাই অন্যান্য ব্যবস্থার পাশাপাশি পুনঃপ্রবর্তনের মাধ্যমে বাঘের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি করার বিষয় কাজ শুরু করা উচিত।

সুন্দরবন খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো আরও জানায়, “বাঘ করি সংরক্ষণ সমৃদ্ধ হবে সুন্দরবন” এই প্রতিপদ্য বিষয়কে সামনে রেখে এবারে সুন্দরবন দিবস চারটি রেঞ্জে পালিত হচ্ছে। খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার পশ্চিম সুন্দরবনের ক্যামেরা ট্রাপিং পদ্ধতিতে বাঘ গননার কাজ শেষ হলেও কিছু কাজ বাকি আছে। পশ্চিম সুন্দরবনে বিভিন্ন জায়গায় ৪৬৮ টি ক্যামেরা বসিয়ে গননার কাজ চলছে।

জুলাই ২৮, ২০২৩ at ১৮:১৩:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/আমারে/ইর