রেকর্ডের বরপুত্র সাকিব

ছবি- সংগৃহীত।

বাংলাদেশ জাতীয় দলের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ক্যারিয়ারে অসংখ্য রেকর্ডের মালিক। মাঠে নামলেই যেন নতুন রেকর্ড গড়েন তিনি। গতকাল আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ ওয়ানডে ম্যাচে মাঠে নেমে আরেকটি নতুন রেকর্ড গড়েছেন এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।

আফগান ব্যাটার নাজিবুল্লাহ জাদরানকে আউট করে বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে নিউজিল্যান্ডের ড্যানিয়েল ভেট্টোরির সঙ্গে ওয়ানডেতে যুগ্মভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক হন সাকিব। পাশাপাশি ব্যাট হাতে গতকাল চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে ৩৯ বলে ৩৯ রান করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৪ হাজার রানের মাইলফলকও স্পর্শ করেন তিনি। ওয়ানডে ইতিহাসে সাকিবের চেয়ে বেশি উইকেট আছে আর কেবল লঙ্কান কিংবদন্তি সনাৎ জয়সুরিয়ার। আর মাত্র ১৮ উইকেট সংগ্রহ করলেই জয়সুরিয়াকে স্পর্শ করবেন সাকিব। অপরদিকে গতকাল নিজের ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করেন পেসার শরিফুল ইসলাম। আফগানদের বিপক্ষে ৯ ওভার বোলিং করে ১টি মেডেন দিয়ে ২১ রান খরচায় ৪ উইকেট নেন তিনি।

আরো পড়ুন :

> একই ২৩ শর্তে ঢাকায় সমাবেশের অনুমতি পেল আ. লীগ ও বিএনপি
> ডেঙ্গুতে রেকর্ড ৭ জনের মৃত্যু, শনাক্ত হাজার ছাড়াল

গতকাল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে টসে হেরে আগে ফিল্ডিংয়ে নামে বাংলাদেশ। যেখানে ১২তম ওভারে বোলিংয়ে আসেন সাকিব। প্রথম ওভারে দেন ২ রান। নিজের দ্বিতীয় ওভারেও ২ রান খরচা করেন তিনি। এরপর দলীয় ১৬তম ও নিজের তৃতীয় ওভারে আক্রমণে এসে সফলতার দেখা পান সাকিব। এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন নজিবুল্লাহ জাদরানকে। আগের ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজকে চার মেরে কিছুটা আক্রমণাত্মক হন নাজিবুল্লাহ। তবে সাকিবকে সুইপ করতে গিয়ে মিস করেন বল। কিছুটা সময় নিয়ে এলবিডব্লিউ দেন আড্রিয়ান হোল্ডস্টক। রিভিউ নেন নজিবুল্লাহ, ততটা আত্মবিশ্বাসী অবশ্য ছিলেন না। রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে করা বল পড়ে স্টাম্পের লাইনেই। নজিবুল্লাহ হাঁটা শুরু করেন আল্ট্রাএজ দেখার পরই। বলও গিয়ে আঘাত করত স্টাম্পে। স্পিনে দিনে প্রথম উইকেট তুলে নেয় টাইগাররা। পঞ্চম উইকেট হারায় আফগানিস্তান। রেকর্ড বইয়ে নাম লেখান সাকিব। ওয়ানডেতে বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে নিউজিল্যান্ডের ড্যানিয়েল ভেট্টোরির সঙ্গে যৌথভাবে ৩০৫ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েন তিনি। তবে কিউই এই স্পিনারের থেকে ৬০ ম্যাচ কম খেলেই এই রেকর্ড গড়েন সাকিব। আর এক উইকেট নিলেই ভেট্টোরিকে ছাড়িয়ে যাবেন তিনি। আর এই তালিকার শীর্ষে উঠতে সাকিবের লাগবে ১৯ উইকেট। ৩২৩ উইকেট নিয়ে এই তালিকার প্রথমে আছেন শ্রীলঙ্কার সাবেক কিংবদন্তি ক্রিকেটার সনাৎ জয়সুরিয়া। তাকে ছুঁতে আর মাত্র ১৮ উইকেট লাগবে সাকিবের। এর আগের ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বের নবম বোলার হিসেবে ঘরের মাঠে ৪০০ আন্তর্জাতিক উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন সাকিব। এই কীর্তি গড়ার দিক থেকে তিনি প্রথম বাঁহাতি বোলার এবং পঞ্চম স্পিনার। ৪০০ উইকেট নেয়া ৯ বোলারের মধ্যে সেরা স্ট্রাইকরেট সাকিবেরই। এমনকি প্রতি ৪২.৬ বলের পর তিনি একটি করে উইকেট নিয়েছেন। যেখানে তিনিই সবার শীর্ষে। আফগানদের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে ওপেনার রাহমানুল্লাহ গুরবাজকে আউট করে ৪০০তম উইকেটটি নেন সাকিব। এই কীর্তিতে সবার ওপরে আছেন শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি স্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরন। সবমিলিয়ে ঘরের মাঠে ৬৪৭ উইকেট নিয়েছেন তিনি। অপরদিকে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে আর মাত্র ২৪ উইকেট সংগ্রহ করলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৭০০ উইকেটের মালিক হবেন সাকিব।

রেকর্ড ভাঙাগড়া সাকিব আল হাসানের কাছে বাঁহাতের খেল। প্রায় সময়ই রেকর্ড গড়েন বলে ভক্তরা অনেকেই তাকে ডাকেন রেকর্ড আল হাসান নামে। সাকিবের এমন কিছু রেকর্ড আছে যা নেই অন্য কোন ক্রিকেটারের। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১২ হাজার রান ও ৬০০ উইকেটের ডাবলের একমাত্র কীর্তি সাকিবের। ৪৫৬ ম্যাচে করেছেন ১৪ হাজার ১০ রান এবং নিয়েছেন ৬৭৪ উইকেট। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক ভেন্যুতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড সাকিবের। মিরপুরের শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন সংস্করণ মিলে এই রেকর্ড গড়েছেন সাকিব। এমনকি এই মিরপুরেই সর্বোচ্চ উইকেট নেয়ার কীর্তিও সাকিবের। বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সে টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব। ২০০৯-এর ১৭ জুলাই গ্রেনাদার সেন্ট জর্জেস গ্রাউন্ডে ২২ বছর ১১৫ দিন বয়সে টেস্টে অধিনায়ক সাকিবের অভিষেক হয়। এই রেকর্ড গড়ার পথে সাকিব ভেঙেছেন মোহাম্মদ আশরাফুলের রেকর্ড। ২০০৭-এর ২৫ জুন কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২২ বছর ৩৫৩ দিন বয়সে টেস্টে অধিনায়ক হয়েছেন আশরাফুল। বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি ম্যান অব দ্য সিরিজ হওয়ার কীর্তি সাকিবের। ২৩৫টি ওয়ানডে খেলে বাংলাদেশের এই অলরাউন্ডার সিরিজসেরা হয়েছেন ৭ বার।

এর পাশাপাশি বিশ্বকাপের এক আসরে ৬০০ রান করা পাঁচজনের একজন সাকিব। এদের মধ্যে একই বিশ্বকাপে ১১টি উইকেটও আছে সাকিবের। বিশ্বকাপ ইতিহাসে ৫০০ রান ও ১০ উইকেট আর কারো নেই। বিশ্বকাপের এক আসরে সবচেয়ে বেশি সাতবার ৫০ প্লাস রানের ইনিংস খেলেছেন মাত্র দুজন। একজন সাকিব আল হাসান, অপরজন শচীন টেন্ডুলকার।

বিশ্বকাপে এক ম্যাচে ফিফটি ও ৫ উইকেট নিয়েছেন মাত্র দুজন, এর মধ্যে সাকিব একজন। বিশ্বকাপের এক আসরে সবগুলো ইনিংসেই ৪০ প্লাস রান করা একমাত্র ক্রিকেটার সাকিব। ২০১৯ বিশ্বকাপে খেলা আট ইনিংসে সর্বনিম্ন স্কোর ছিল ৪১ রান।

জুলাই ১২, ২০২৩ at ১০:২৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর