হজের খুতবায় মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের আহ্বান

দেড়শর বেশি দেশের ২০ লাখের বেশি মানুষের লাব্বায়েক ধ্বনিতে মুখর মক্কার আরাফাতের ময়দান; তাদের সামনে দেওয়া খুতবায় এল মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের আহ্বান।

মঙ্গলবার ছিল হজের মূল অনুষ্ঠান, ইহরাম বাঁধা হজ পালনরতরা সেখানে খুতবা শোনেন এবং জুমা ও আসরের নামাজ পড়েন।

এবার হজের খুতবা পড়েন সৌদি আরবের ধর্মীয় পণ্ডিত শেখ ইউসুফ বিন মুহাম্মদ বিন সাঈদ।

খুতবায় তিনি বিশ্বের মুসলমানদের এক থাকার আহ্বান জানান বলে সৌদি গেজেট জানিয়েছে।

নামিরা মসজিদ থেকে দেওয়া খুতবায় তিনি বলেন, বিশ্বের মুসলমানদের সংঘাত এড়িয়ে এক থাকতে হবে। সেই সঙ্গে অপপ্রচার ও গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্যও সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

এ খুতবা ২০টির বেশি ভাষায় রেডিও ও টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হবে বিশ্বময়। এই ২০ ভাষার মধ্যে বাংলাও রয়েছে।

খুতবার পর শেখ ইউসুফের ইমামতিতে জোহর ও আসর নামাজ পড়েন হজ পালনরতরা।

মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সবাই আরাফাতের ময়দানে ছিলেন।

নাইজেরিয়া থেকে হজ করতে আসা মোহাম্মেদ হামাদ আরব নিউজকে বলেন, “স্রষ্টার কাছাকাছি আসার এ অনুভূতি অসাধারণ। তিনি সর্বশক্তিমান, কল্যাণ, শান্তি আর সমৃদ্ধির জন্য তার কাছে সরাসরি ফরিয়াদ জানানোর এ এক অনন্য সুযোগ।”

আফগানিস্তান থেকে মক্কায় হাজির হওয়া মোহাম্মদ নুমান বলেন, “আমাকে এবার হবে আসার তৌফিক দিয়েছেন, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। আমার কেমন লাগছে বলে বোঝাতে পারব না। আমাদের সবার হজ আল্লাহ কবুল করে নিন।”

সন্ধ্যায় তারা পুনরায় মিনার পথে রওনা হন। ফেরার পথে সন্ধ্যায় মুযদালিফায় মাগরিব ও এশার নামাজ পড়বেন। সেখানে রাতে থাকার সময় তারা পাথর সংগ্রহ করবেন, যা মিনার জামারায় শয়তানের উদ্দেশে ছোড়া হবে।

বুধবার সকালে মিনায় ফিরে সেই পাথর তারা প্রতীকী শয়তানকে লক্ষ্য করে ছুড়বেন। এরপর কোরবানি দিয়ে ইহরাম ত্যাগ করবেন এবং সবশেষে কাবা শরিফকে বিদায়ী তাওয়াফের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে হজের আনুষ্ঠানিকতা। তারা পরিচিত হবেন হাজি হিসেবে।

এ বছর হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে রোববার। পবিত্র নগরী মক্কায় কাবা শরিফ তাওয়াফ করে রাতে এশার নামাজের পর সবাই জড়ো হতে শুরু করেন ১০ কিলোমিটার দূরে তাঁবুনগরী মিনায়।

সোমবার সারা দিন ও রাত তারা সেখানে কাটান ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে। আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় তারা জিকির করেন, নামাজ পড়েন জামাতে।

এরপর আসে আরাফাত ময়দানে সমবেত হওয়ার দিন। ইসলামের রীতি অনুযায়ী, জিলহজ মাসের নবম দিনটি আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে ইবাদতে কাটানোই হল হজ।

চার বর্গমাইল আয়তনের এই বিশাল সমতল মাঠের দক্ষিণ দিকে মক্কা হাদা তায়েফ রিং রোড, উত্তরে সাদ পাহাড়। সেখান থেকে আরাফাত সীমান্ত পশ্চিমে আরও প্রায় পৌনে এক মাইল বিস্তৃত।

মুসলমানদের বিশ্বাস অনুযায়ী, আদি পিতা আদম ও আদি মাতা হাওয়া পৃথিবীতে পুনর্মিলনের পর এই আরাফাতের ময়দানে এসে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন। ১৪০০ বছরের বেশি সময় আগে এখানেই ইসলামের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) দিয়েছিলেন তার বিদায় হজের ভাষণ।

এই আরাফাতে উপস্থিত না হলে হজের আনুষ্ঠানিকতা পূর্ণাঙ্গ হয় না। তাই হজে এসে যারা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাদেরও অ্যাম্বুলেন্সে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হয় স্বল্প সময়ের জন্য।

হজের মৌসুম এবার পড়েছে গরমের মধ্যে। সোমবার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছিল।

সৌদি গেজেট জানিয়েছে, হিটস্ট্রোক ও পানিশূন্যতা এড়াতে সবাইকে ছাতা ব্যবহার করতে এবং পর্যাপ্ত পানি পানের পরামর্শ দেওয়া হয়। বিপুল সংখ্যক মানুষের স্বাস্থ্যসেবার দায়িত্বে ছিলেন ৩২ হাজারের বেশি স্বাস্থ্যকর্মী।

কোভিড মহামারীর ভয়বহতা কাটিয়ে দুবছর পর কিছুটা বড় পরিসরে হজ হয়েছিল ২০২২ সালে। তাতে অংশ নিয়েছিলেন বিভিন্ন দেশের ১০ লাখ মুসলমান। এবার হজ ফিরে গেছে মহামারীর আগের রূপে।

সৌদি গেজেট জানিয়েছে, ২০১৯ সালের হজে অংশ নিয়েছিলেন ২৫ লাখ মুসলমান। এরপর এবারই সবচেয়ে বেশি মানুষ হজে অংশ নিচ্ছেন।

এবার যারা হজ করছেন, তারা ১৬০টি দেশের বাসিন্দা। ১ লাখ ২২ হাজার বাংলাদেশিও আছেন তাদের মধ্যে