নোয়াখালীর একজন সৎ সাংবাদিক আবদুল কাদের

মো. আবদুল কাদের একাধারে একজন মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং সাংবাদিক। তিনি ১৯৫২ সালের ১৫ জুন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) নোয়াখালী জেলার সদর উপজেলার উত্তর ফকিরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আবদুর রব ডিলার। আবদুর রব ডিলার ছিলেন ব্রিটিশ শাসন আমল থেকেই বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার একমাত্র খাদ্য বিতরণকারী ডিলার। স্বাধীনতার পূর্বে এবং পরে তিনি বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণের মাধ্যমে অনেক মানুষকে সহায়তা করেছিলেন।

শিক্ষা জীবন:

আবদুল কাদের নোয়াখালী সদর উপজেলার পৌর কল্যাণ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাস করেন। চৌমুহনী ছালেহ আহমেদ কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট সম্পন্ন করেন। ১৯৭২ সালে তিনি চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ডিগ্রী অর্জন করেন। তারপর তিনি ল কলেজে ভর্তি হন কিন্তু এলএলবি প্রথম পার্ট সম্পন্ন করার পর তিনি তার শিক্ষা জীবনের ইতি টানেন। শিক্ষা জীবনে তিনি নোয়াখালীর লোকাল বয়স্কাউট এসোসিয়েশনের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বয়স্কাউট এসোসিয়েশনের প্যাট্রোল লিডারদের বিশেষ ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণ করেন এবং কৃতিত্বের সাথে তা শেষ করেন।

মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ:

সাংবাদিক আবদুল কাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর খুব কাছের মানুষজনের মধ্যে একজন ছিলেন। ৭ই মার্চের ভাষণে যোগদানের জন্য তিনি কয়লার ট্রাকের উপর চড়ে ঢাকায় গিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে দেশ স্বাধীনের সংগ্রামে তিনি যোগদান করেন। নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনীর জেলা প্রধান ও আওয়ামীলীগ নেতা মাহমুদুর রহমান বেলায়েতের সহিত তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

রাজনৈতিক জীবন:

কলেজ জীবন থেকেই আবদুল কাদের দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। কলেজ জীবন থেকেই তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ (বর্তমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) এর রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।

তিনি নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ- সভাপতি ও শহর আওয়ামীলীগের সাবেক সহ-সভাপতির (১৯৬৯-১৯৭৩) দায়িত্ব পালন করেছেন সফলভাবে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধু নিহত হবার ঠিক দুই দিন আগে ১৩ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর সাথে তিনি দেখা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাকে খুব স্নেহ করতেন। বঙ্গবন্ধু নিহত হবার পর তিনি ভেঙে পড়েন এবং সক্রিয় রাজনৈতিক জীবনের ইতি টানেন।

কর্ম জীবন:

রাজনীতির পাশাপাশি কর্ম জীবনেও সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন আবদুল কাদের। তিনি তার বাবার ব্যবসায়ে নিয়োজিত হয়ে ব্যবসায় আরো সম্প্রসারণ করেন। ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত তিনি নোয়াখালীর কাঁচাবাজারের (বর্তমানে পৌরবাজারের) সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ে তার পিতা আবদুর রব ডিলার ছিলেন বাজারের সভাপতি।

১৯৮৩ সালে তিনি গড়ে তোলেন নোয়াখালী জেলা শহরের প্রথম চকোলেট ফ্যাক্টরির। উক্ত ফ্যাক্টরিতে চকোলেট তৈরির কাঁচামাল ভারত থেকে আনা হতো। ১৯৮৮ সালের বন্যার কারণে উক্ত ফ্যাক্টরির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন হয় এবং এক পর্যায়ে ১৯৮৯ সালের প্রথম দিকে উক্ত চকলেট ফ্যাক্টরি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

১৯৮৯ সালে নোয়াখালীর জেলা শহরের দ্বিতীয় ট্যানারি হিসেবে তিনি গড়ে তোলেন লিজা ট্যানারি। ১৯৯১ সালের শতাব্দীর প্রচণ্ডতম ঘূর্ণিঝড়ে ট্যানারির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তারপরও তিনি হাল ছাড়েন নি। পুরো উদ্যম দিয়ে তিনি পুনরায় শুরু করেন তার ট্যানারি ব্যবসা।

সাংবাদিকতা:

তবে সাংবাদিকতার পেশাকে হাল ছাড়েন নি। এত ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন দেশের নামকরা পত্রিকাগুলোতে। ঢাকার প্রথম দৈনিক পত্রিকা দৈনিক আজাদে লেখালেখির মাধ্যমে তিনি সাংবাদিকতার জগতে প্রবেশ করেন। তারপর একে একে দেশের প্রায় অধিকাংশ জাতীয় দৈনিক পত্রিকা – দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক জনতা, দৈনিক বাংলা, দৈনিক ইনকিলাব, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা, ডেইলি অবজারভার ইত্যাদির সাথে তিনি জড়িত ছিলেন। এছাড়াও তিনি বিটিভি এবং এটিএন বাংলার সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি বাংলা এবং ইংরেজি দুটো ভাষায়ই পত্রিকায় লেখালেখি করেছেন।

২০০৫ সাল থেকে তিনি স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকা দৈনিক নোয়াখালী বার্তা শুরু করেন। তার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি ছিলেন পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। পত্রিকাটি নোয়াখালীর সচেতন মহলে আজও অনেক সমাদৃত। বর্তমানে আবদুল কাদেরের পরিবারের পক্ষ থেকে পত্রিকাটি পরিচালনার করা হয়।

আবদুল কাদের নোয়াখালী প্রেস ক্লাবের সাবেক সেক্রেটারি ছিলেন প্রায় তিন যুগেরও বেশি সময়। এই সময়ে নোয়াখালী প্রেস ক্লাবের অভূতপূর্ণ উন্নয়ন সাধন করেন। তার সময়ে নোয়াখালী প্রেস ক্লাব তার বর্তমানের রূপ খুঁজে পায়। নোয়াখালী প্রেস ক্লাবের একতলা ভবনকে তিনি দ্বিতীয় তলা বিশিষ্ট ভবনে রূপান্তর করেন। প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সেক্রেটারির জন্য আলাদা কক্ষ এবং প্রেস ক্লাবের মধ্যে সভা করার জন্য সভা কক্ষ তিনিই তৈরী করেন দ্বিতীয় তলায়। তার প্রচেষ্টায়ই সর্বপ্রথম নোয়াখালী প্রেস ক্লাব তার সাময়িকী প্রকাশ করে।

সাংবাদিকতার পাশাপাশি নানাবিধ সমাজসেবামূলক কাজের সাথে জড়িত ছিলেন আবদুল কাদের। তিনি ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত নোয়াখালী জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে তাকে নোয়াখালী সদর উপজেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়। এছাড়াও তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত নোয়াখালী জেলা কারাগারের কারা পরিদর্শক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পর পর দুই বার তিনি নোয়াখালী সমবায় ব্যাংকের ভোটে নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন।

২০০৯ সালে বৃহত্তর নোয়াখালী সদর উপজেলার সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কথা বলার স্বার্থে তিনি গড়ে তোলেন নোয়াখালী জেলা প্রেসক্লাব। এই প্রেসক্লাবই সর্বপ্রথম প্রেসক্লাব যা বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার সব সাংবাদিকদের নিয়ে গঠন করা হয়। তিনি ছিলেন এই প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং সভাপতি। তার প্রচেষ্টায় মাত্র এক বছরের মধ্যে এই প্রেসক্লাবটি তাদের সর্বপ্রথম সাময়িকী বের করে যা পুরো নোয়াখালীতে বিরল রেকর্ড।

সাদা মনের ব্যক্তিগত জীবন:

ব্যক্তিগত জীবনে আবদুল কাদের ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত নোয়াখালী ট্যানারির সায়েদ মিয়ার বড় মেয়ে ফেরদাউস আরা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ফেরদাউস আরা বেগম ছিলেন নোয়াখালী পৌরসভার ওয়ার্ড নং ২ (বর্তমানে ওয়ার্ড নং ৪ এর) সংরক্ষিত মহিলা আসনের প্রথম মহিলা কমিশনার। কাদের-ফেরদাউস দম্পত্তির পাঁচ সন্তান – চার মেয়ে এবং এক ছেলে। তাদের প্রতিটি সন্তানই উচ্চশিক্ষিত। তাদের এক মাত্র ছেলে এবং দম্পত্তির সবচাইতে ছোট সন্তান নূর আল আহাদ একজন গবেষক ও লেখক।

উল্লেখযোগ্য বদান্যতা:

সমাজের নানা স্তরের লোকজনকে আজীবন নানাভাবে সাহায্য করে গিয়েছেন সাংবাদিক আবদুল কাদের। তিনি মানুষকে সাহায্য করতে এবং দান করতে ভালোবাসতেন। তার হাত ধরে প্রায় একশোরও বেশি পরিবারে সচ্ছলতা এসেছে। এই পরিবারগুলোর কর্মক্ষম শিক্ষিত সন্তানদের চাকরির ব্যবস্থা করার মাধ্যমে তিনি পরিবারগুলোর সাহায্য করেছিলেন।

তার বাড়ির আশেপাশে এবং এলাকার উন্নয়নেও তিনি ব্যাপক অবদান রেখেছিলেন। নোয়াখালীর মাইজদী শহরের অনেক জানাশোনা লোকদের তিনি সাহায্য করেছেন।

২০০৭ সালে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে খবর প্রকাশের কারণে এক স্থানীয় সাংবাদিক আলমকে জেলে দেয়া প্রাণনাশের হুমকি দেন তৎকালীন নোয়াখালী ৪ আসনের বিএনপি সমর্থিত এমপি শাহজাহান। আবদুল কাদের সাহেব ওই সাংবাদিক এবং তার পরিবারকে তার নিজ বাসায় কয়েক মাস রেখে পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

২০০৯ সালে নোয়াখালী মাইজদীর একজন স্থানীয় সাংবাদিক লিয়াকত আলী খানের মেয়েকে ঢাকার একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য ব্যাপক পরিমান অর্থ চাওয়া হয় ডোনেশন হিসেবে। উক্ত অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার কারণে মেয়েটির পড়াশোনা বন্ধের উপক্রম হয়। আবদুল কাদের সাহেব নিজের পরিচিতির মাধ্যমে ডোনেশন ছাড়াই মেয়েটিকে উক্ত বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়াশোনার সুযোগ করে দেন।

২০১০ সালে নোয়াখালীর একটি স্থানীয় দৈনিক দৈনিক জনতার অধিকার নামক পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ ফারুক এডভোকেটের চেম্বারে হামলা ও ভাংচুর করে কতিপয় দুর্বৃত্ত। উক্ত হামলার সুষ্ঠ ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন সাংবাদিক আবদুল কাদের। পুলিশের ডিজির সাথে সরাসরি কথা বলার মাধ্যমে ঘটনাটির সমাধান করেন তিনি।

সততার দৃষ্টান্ত:

সাংবাদিক আবদুল কাদের সাহেব নোয়াখালী জেলার ইতিহাসে সততার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গিয়েছেন। ২০০২ সালে তার এক মাত্র ছেলে অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ে। ঢাকায় বড় বড় ডাক্তার দেখানোর পরও সে ভালো হয় নি। পরিচিতদের মধ্যে অনেকেই বলেছিলেন ভারতে নিয়ে চিকিৎসা করতে। কিন্তু সেই পরিমান অর্থ তার কাছে ছিল না।

এমন সময়ে নোয়াখালী প্রেস ক্লাবের একটি গ্রুপের পক্ষ থেকে তাকে একটি প্রস্তাব দেয়া হয়। উক্ত প্রস্তাবে বলা হয় যে, জনৈক সাংবাদিককে সভাপতি এবং আবদুল কাদেরকে সেক্রেটারি ঘোষণা করে নোয়াখালী প্রেস ক্লাবের কমিটি গঠন করা হবে যারা আজীবন উক্ত পদে আসীন থাকবেন। সবই ঠিক আছে কেবল সাংবাদিক আবদুল কাদের রাজি থাকলেই হলো।

আবদুল কাদের রাজি হলে তার ছেলেকে ভারতে নিয়ে চিকিৎসা করানোর যাবতীয় ব্যয় তারাই বহন করবেন বলে জানানো হয়। কিন্তু নীতিতে আবদুল কাদের ছিলেন অবিচল। তিনি সাথে সাথেই বলে দিলেন আমার ছেলে বিনা চিৎকিসায় মারা যাবে কিন্তু তারপরও আমি এই নীতি বিবর্জিত কাজ করবো না।

স্থানীয় বিএনপি সমর্থিত এমপির সাথে দ্বন্দ্ব:

নোয়াখালী জেলা শহরের চার আসনের বিএনপি সমর্থিত এমপির সাথে সাংবাদিক আবদুল কাদের সাহেবের দ্বন্দ্ব ছিল বলে জানা যায়। এই দ্বন্ধের সূত্রপাত হয়েছিল ২০০৩ সালে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়ে নোয়াখালী জেলার সাংবাদিক, সরকারি কর্মচারী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কলোনি তৈরির জন্য জমি বরাদ্ধ করা হয়।

প্রথমে এই প্রকল্পে কেবল সরকারি কর্মচারী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য জমি বরাদ্দ ছিল। পরবর্তীতে সাংবাদিক আবদুল কাদের তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করে নোয়াখালীর মাইজদীর সাংবাদিকদের জন্যও উক্ত কলোনিতে জমি বরাদ্দের জন্য অনুরোধ করেন।

তারপর ওই প্রকল্পে নোয়াখালীর সাংবাদিকদের জন্যও জমি বরাদ্দ করা হয়। জমিগুলো বরাদ্দ করা হয় মাইজদী পৌরবাজারের পেছনে দীঘির সংলগ্ন জায়গায়। কয়েক বছর পর এই জমিগুলোতে নিজেদের বাড়িঘর স্থাপন করা শুরু করেন সাংবাদিক, সরকারি কর্মচারী এবং মুক্তিযোদ্ধারা।

কিন্তু ২০০২ সাল থেকেই উক্ত জমিতে নিজেদের দখল স্থাপনের চেষ্টা শুরু করেন বিএনপি সমর্থিত এমপি শাহজাহান। ফলে দ্বন্দ্ব শুরু হয় উক্ত কলোনির সাংবাদিক, সরকারি কর্মচারী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে।

২০০৩ সালের এপ্রিল মাসে স্থানীয় প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে কতিপয় সন্ত্রাসী ও পুলিশ দিয়ে কলোনিতে বসবাসরত সাংবাদিক, সরকারি কর্মচারী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারবর্গকে জোরপূর্বক তাদের বাসাগুলো থেকে বের করে দেয়া হয় এবং বুলডোজার দিয়ে তাদের স্বপ্নের নিবাসগুলোকে ভেঙে ফেলা হয়। উক্ত ঘটনার পর থেকেই সাংবাদিক আবদুল কাদের এবং এমপি শাহজাহানের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম পর্যায়ে আসে।

এমপি শাহজাহানের দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে তিনি লেখালেখি শুরু করেন এবং উক্ত লেখালেখির কারণে তাকে বেশ কয়েকবার হুমকি দেয়া হয়েছিল। কিন্ত তিনি এগুলোর তোয়াক্কা না করেই তার লেখালেখি চালিয়ে যান।

আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার কয়েক মাসের মধ্যেই স্থানীয় বিএনপির বেশ কিছু নেতা-কর্মী আওয়ামীলীগে যোগদান করে।

যোগদানের পর তারা পূর্বের শত্রুতার জোর সাংবাদিক আবদুল কাদেরের বিরুদ্ধে নানা ধরণের সমালোচনা শুরু করেন। তারা নানা ধরণের কথা বলে বঙ্গবন্ধুর সানিধ্য পাওয়া আবদুল কাদেরকে অসম্মান করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা এতে পুরোপুরি অসফল হয়।

অসুস্থতা ও মৃত্যু কাল:

২০০০ সালের দিকে হটাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন সাংবাদিক আবদুল কাদের। পরবর্তীতে ঢাকায় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে তার চিকিৎসা করানো হয়। ২০১০ সালে উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি ভারতের বিখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেবী শেঠীর কাছে যান।

পরবর্তীতে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে আসার পথে হটাৎ করেই স্ট্রোক করে ২০১০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান। তার জানাজায় নোয়াখালীর চারটি আসনের এমপি, আওয়ামীলীগের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, নোয়াখালীর প্রশাসনের লোকজন, সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা সহ সর্ব স্তরের মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজারের উপর মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

নোয়াখালী জিলা স্কুলের মাঠে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। পরে সর্বস্তরের মানুষের পক্ষ থেকে তাকে ফুল দিয়ে সম্মান জানানো হয়। নোয়াখালী জেলার মাইজদী শহরের উত্তর ফকিরপুরে তার নিজের বাসভবনের সামনে অবস্থিত প্রধান সড়ক সংলগ্ন পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।

নোয়াখালীর একজন গন্যমান্য ব্যাক্তি হওয়া সর্তেও সাংবাদিক আবদুল কাদেরকে তার প্রাপ্য সম্মানটুকু সঠিকভাবে দেয়া হয় নি। এই বিষয়ে তার একমাত্র ছেলে আহাদ বলেন, আমার বাবার জানাজায় মাননীয় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাহেব একটি স্মরণ সভা আয়োজনের কথা বলেছিলেন।

কিন্তু কোনো এক কারণে সভাটি আয়োজন করা হয় নি। নোয়াখালী প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকেও তাকে কোনো প্রকার মরোনোত্তর সম্মাননা দেয়া হয় নি।

অন্যদিকে, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেও অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় বেশ কিছু কাগজপত্র জমা দেয়ার পরও আজও বিষয়টির কোনো সুরাহা হয় নি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধা চিঠিও রয়েছে আমার বাবার।

এই কাগজপত্রগুলো নিয়ে অনেক জায়গায় গিয়েছি এমনকি টাকাও খরচ করেছি কিন্তু আজও একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার বাবার নাম বেসামরিক গেজেটে প্রকাশের কোনো রকম ব্যবস্থা নেয়া হয় নি।

এমন অবস্থায়, বিষয়টি নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক সাহায্য কামনা করেন তার এক মাত্র ছেলে নূর আল আহাদ।

জুন ২৬, ২০২৩ at ১১:০৪:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/নাউ/ইর