জলাবদ্ধতার কারণে ৪৫ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ; কপোতাক্ষের নাব্যতা রক্ষার্থে টিআরএম চালুর দাবী

কপোতাক্ষ অববাহিকার নাব্যতা রক্ষার্থে সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার পাখিমারা বিলে পুনরায় টিআরএম চালু করার দাবী জানিয়েছে শিবসা-কপোতাক্ষ অববাহিকার জনপ্রতিনিধি ও পানি কমিটির নেতৃবৃন্দ।

রোববার সকালে তালার উত্তরণ কার্যালয়ে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা উত্তরণ ও পানি কমিটি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবী জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয় যশোর, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত কপোতাক্ষ অববাহিকা অঞ্চল ১৯৯০ দশক থেকে জলাবদ্ধ কবলিত। প্রত্যক্ষ ভাবে অত্র এলাকার ১৫ লক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ৪০-৪৫ লক্ষ অধিবাসী প্রতিবছর জলাবদ্ধতা দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। উল্লেখ্য, সম্প্রতি জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে অত্র অ লের কয়েকজন সংসদ সদস্য টিআরএম চালু করার জন্য সংসদে দাবী জানিয়েছেন।

আরো পড়ুন :

> ২০ দিন পর জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে পায়রার বিদ্যুৎ
> মদন পৌরসভার বাজেট ঘোষণা

বক্তারা বলেন, কপোতাক্ষ নদ বাংলাদেশের বহুল পরিচিত একটি নদী, এ নদীর নিষ্কাশন এলাকা সুদূর চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা থেকে শুরু করে খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার সুন্দরবন পর্যন্ত বিস্তৃত। নদীটির দৈর্ঘ্য ৩৭০ কিলোমিটার, নিষ্কাশন এলাকার পরিমাণ ১ লক্ষ ৬০ হাজার হেক্টর এবং বসবাসরত অধিবাসীর সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। ৯০ দশক থেকে কপোতাক্ষ অববাহিকা জলাবদ্ধতার শিকার। এ অ লের জনগণের জোরালো দাবীর প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে “কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প” নামে প্রায় ২৬২ কোটি টাকা বরাদ্দের ৪ বছর মেয়াদী একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পটি শুর হয় ২০১১-১২ অর্থবছরে। প্রকল্পটির মূল লক্ষ ছিল তালা উপজেলার পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়ন।

২০১৫ সালের জুলাই মাস থেকে শুরু করে ২০২১ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ৬ বৎসর পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়ন করা হয়। যার ফলে কপোতাক্ষ অববাহিকা জলাবদ্ধ মুক্ত হয়েছে, নদী ফিরে পেয়েছে নাব্যতা, বিল উঁচু হয়েছে, এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। কিন্তু ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়া পেরিফেরিয়াল বাঁধ সংস্কারের নামে বিলে টিআরএম কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিগত ২ বছর যাবৎ বিলে টিআরএম কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে নদীতে পলি জমে এলাকায় আবারও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ার উপক্রম হয়েছে এবং টিআরএম বিলের সংযোগ খালটি ভরাট হয়ে যাওয়ার ফলে বিল এলাকার নিষ্কাশন ব্যবস্থায় সংকট তৈরী হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উল্লেখ করা হয় কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্পের ২য় পর্যায়ের ৫৩১ কোটি ৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দের অনুক‚লে প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয় ২০২০ সালের জুন মাস থেকে। ৪ বছর মেয়াদী এ প্রকল্পটি শেষ হবে ২০২৪ সালের জুন মাসে। প্রকল্পে পাখিমারা বিলে টিআরএম কার্যক্রম অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু ইতোমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ ৩ বছর অতিক্রম হলেও এখনো পর্যন্ত টিআরএম কার্যক্রম চালু করা হয়নি। পাশাপাশি ক্ষতিপূরণের অর্থ বিতরণ করা হয়নি। ভুক্তভোগী এলাকার জনপ্রতিনিধিদের অভিমত ক্ষতিপূরণের বকেয়া পরিশোধ ও বাঁধ সংস্কার অতিব জরুরী হলেও এ দুটো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রকল্পের বরাদ্দের মধ্যে নাই।

এ কারণে টিআরএম চালু করার বিষয়টি অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এ জটিলতা দ্রæত নিরসন না হলে প্রথম পর্যায়ের প্রকল্পের অর্জন ও সফলতা কোন ভাবেই ধরে রাখা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষের আশুহস্তক্ষেপ কামনা করেছেন শিবসা-কপোতাক্ষ অববাহিকার ভুক্তভোগী মানুষ।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, উত্তরণ পরিচালক শহিদুল ইসলাম, তালা উপজেলা পানি কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ময়নুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান, হাশেম আলী ফকির ও দীলিপ কুমার।

জুন ২৫, ২০২৩ at ১৭:২২:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/ইহ/ইর