জাপায় ভাঙনের আভাস

ছবি- সংগৃহীত।

সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা দেবর-ভাবির শীতলযুদ্ধ এবার প্রকাশ্যে চলে এসেছে। ঢাকা-১৭ (গুলশান-বনানী) আসনের উপনির্বাচনে দলীয় প্রতীক লাঙ্গল নিয়ে এ লড়াই প্রকাশ্যে রূপ নেয়। এই আসনে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ও পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের দুজনই আলাদাভাবে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। রওশন এরশাদ নির্বাচন কমিশনের কাছে তার দেয়া মনোনীত প্রার্থী কাজী মামুনুর রশিদের জন্য নির্বাচনী প্রতীক লাঙ্গল চেয়েছেন। জি এম কাদেরও অবসরপ্রাপ্ত মেজর আনিসের জন্য লাঙ্গল প্রতীক চেয়েছেন। পার্টির শীর্ষ দুই নেতার এই দ্বন্দ্বের জেরে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই পার্টিতে ভাঙনের আশঙ্কা করছেন দলটির নেতারা।

জানা যায়, নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন আগামী ১৭ জুলাই। আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া আসনটিতে জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ দলের ও লাঙ্গলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন জাতীয় পার্টির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মামুনুর রশিদকে। আর দলীয় গঠনতন্ত্র মোতাবেক মনোনয়ন বোর্ডে সাক্ষাৎকার শেষে গত বুধবার জাপা দলীয় প্রার্থী হিসেবে মেজর (অব.) সিকদার আনিসুর রহমানের নাম ঘোষণা করেন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।

আরো পড়ুন :

> পাঁচবিবির ধরঞ্জী গ্রামীণ ব্যাংকের কেন্দ্র প্রধানদের বৈঠক ও গাছ বিতরণ
> যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সখ্য বাড়াচ্ছে বিএনপি

ঢাকা-১৭ আসনের এই উপনির্বাচনে যখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য দলগুলো বা সম্ভাব্য প্রার্থীরা জয়ী হওয়ার নকশা আঁকছেন, তখন জাতীয় পার্টিতে (জাপা) চলছে ভিন্ন খেলা। এই উপনির্বাচনকে উপলক্ষ করে জাপার নির্বাচনী প্রতীক ‘লাঙ্গল’-এর মালিকানার বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। ২০০০ সালের ৯ মার্চ হাইকোর্টের দেয়া একটি আদেশের বিষয় উল্লেখ করে রওশনপন্থিরা দাবি করছেন- ওই রায় অনুযায়ী লাঙ্গলের যৌথ মালিক প্রয়াত এইচএম এরশাদ ও রওশন এরশাদ। তবে জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাপার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিষয়টি বর্তমানে অপ্রাসঙ্গিক।

ইসিতে জমা দেয়া রওশন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়- আমি জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক। সংসদীয় দলের নেতা এবং বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টির দলীয় প্রার্থীর অনুকূলে দলীয় প্রতীক লাঙ্গল বরাদ্দের একমাত্র অধিকারী। এখানে উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর কাউন্সিলে গৃহীত ও তৎকালীন মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা স্বাক্ষরিত গঠনতন্ত্রের ধারা-২০-এর উপধারা ১ অনুযায়ী আমি রওশন এরশাদ দলের পতাকা বহন ও সর্বময় ক্ষমতা সংরক্ষণ করি।

এদিকে হঠাৎ ‘লাঙ্গল’ নিয়ে টানাটানির এই খেলার সূচনাটা রওশনের অনুসারীরা করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন জি এম কাদেরপন্থিরা। তারা বলেন, দলের কোনো পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা ছাড়াই গত ৫ জুন রওশনের পক্ষে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে জানানো হয়, ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে কাজী মো. মামুনুর রশিদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন বিরোধীদলীয় নেতা। রওশনের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ্ স্বাক্ষরিত ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যা অবিলম্বে দলীয় সিদ্ধান্ত হিসেবে কার্যকরের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। দলীয় ফোরামে আলোচনা ছাড়া এ ধরনের প্রার্থী ঘোষণা করা দলের গঠনতন্ত্রের লঙ্ঘন। যা কোনোভাবেই রওশন এরশাদের কাছে দল প্রত্যাশা করে না।

অন্যদিকে, রওশনপন্থিরা বলছেন- সম্প্রতি খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনে রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির দলীয় প্রার্থী দেয়ার কথা থাকলেও তিনি দেননি। এ দুটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে রওশন এরশাদ জি এম কাদেরের সঙ্গে সমঝোতা করে প্রার্থী দেয়া থেকে বিরত থাকেন। রওশন এরশাদ জি এম কাদেরকে আগেই জানিয়ে দেন যে, ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী দেবেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত জি এম কাদের রওশন এরশাদের কথা রাখেননি।

এ বিষয়ে জি এম কাদেরপন্থি এক নেতা বলেন, নির্বাচনী কৌশলের অংশ হিসেবে জি এম কাদের ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছেন। তিনি প্রার্থী না দিলে, দলীয় প্রতীক লাঙ্গলের দাবি এবং দলে তার নেতৃত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হবে। সে কারণেই জি এম কাদের বিদিশাপন্থি নেতা অবসরপ্রাপ্ত মেজর আনিসুর রহমানকে মনোনয়ন দিয়েছেন। এই মনোনয়ন চূড়ান্তের আগে বিদিশার সঙ্গে জি এম কাদেরের বৈঠক হয় বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

এর আগেও বেশ কয়েকবার ভাঙন ধরে সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদের প্রতিষ্ঠিত এই দলে। এর মধ্যে ৩টি ভাঙন ছিল বড় ধরনের। তারা দল থেকে বেরিয়ে একই নামে আবার দল করেছেন। বড় ভাঙনগুলো হয়েছিল মূলত বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে। কখনো আওয়ামী লীগ-বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে যাওয়া না-যাওয়া নিয়ে, আবার কখনো ভেঙেছে মন্ত্রিত্ব নিয়ে। ঘুরেফিরে এবারো সেই বিষয়টিই সামনে এসেছে।

জুন ১৮, ২০২৩ at ১১:১৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর