ভুট্টা থেকে তৈরি পলিব্যাগে বাজিমাত ইফতেখারের

ছবি- সংগৃহীত।

ভুট্টা থেকে তৈরি হওয়া পলিব্যাগ পচনশীল হওয়ায় কাজ শেষে হচ্ছে জৈব সার। এমন পরিবেশবান্ধব পলিব্যাগ তৈরি করছেন রাজশাহীর তরুণ উদ্যোক্তা ইফতেখারুল হক। তবে ইফতেখারুলের তৈরি করা পলিব্যাগের চাহিদা দেশে না থাকলেও বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। দেশে এই ধরনের পলিব্যাগের ব্যবহার বাড়াতে সরকারি ও বেসরকারিভাবে নানা উদ্যোগের প্রয়োজন বলে মনে করেন এই তিনি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পলিব্যাগটি দ্রুত পচনশীল ও জৈব উপাদানে তৈরি। ইতোমধ্যে স্থানীয় বাজারে পলিব্যাগগুলো ব্যাপক সাড়া ফেলতে শুরু করেছে। তবে সাধারণ পলিব্যাগের তুলনায় কিছুটা দাম বেশি হওয়ায় পরিবেশবান্ধব এই পণ্যটি হোঁচট খাচ্ছে। তবে বিদেশে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ইতোমধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতে এই পলিব্যাগের রপ্তানি শুরু হয়েছে। তবে পরিবহন খরচের সীমাবদ্ধতার কারণে রপ্তানির লক্ষ্যে ঠিকমতো এগুতে পারেনি গোদাগাড়ী উপজেলার চাপাল গ্রামে ২০২২ সালে যাত্রা শুরু করা ‘ক্রিস্টাল বায়োটেক’ নামের এই কারখানাটি।

ইফতেখারুল হক  বলেন, আমি মূলত সফটওয়্যার ডেভেলপার ছিলাম। তারপর জুট ও সুতা তৈরি সংশ্লিষ্ট একটি কোম্পানিতে কাজ করেছি। ২০১৭ সালের দিক থেকে মূলত আমার চিন্তা-ভাবনা ছিল পলিথিনের বিকল্প কিছুর ব্যবস্থা করা। তারপরে এই আইডিয়াটা খুঁজে বের করি। কিন্তু করোনার কারণে আমি ঠিকঠাক সময়ে শুরু করতে পারিনি। আমার মাথায় সব সময়ের জন্য ছিল ব্যবসার পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা।

তিনি আরও বলেন, এই কারখানায় পলিথিনের বিকল্প যে ব্যাগগুলো তৈরি হয় তার কাঁচামাল ভুট্টা। ভুট্টার স্টাচ থেকে একটা দানা তৈরি হয়। সেটি থেকে ব্যাগ তৈরি করা হয়। এই উপাদান প্রতিবেশি দেশ ভারত ছাড়াও অন্য দেশে কিনতে পাওয়া যায়। আমি মূলত ভারত থেকে এটি আমদানি করে থাকি। কারখানায় বিভিন্ন আকারের পলিব্যাগ তৈরি করা হয়। প্রতিটির আকারের উপরে নির্ভর করে দাম নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে সাড়ে ৪ টাকা থেকে শুরু করে ১০ টাকা মূল্যোর ব্যাগ রয়েছে।

ইফতেখারুল হক বলেন, রাজশাহীতে প্রাথমিকভাবে স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ীদের পলিব্যাগ সম্পর্কে জানানো হয়। এর উপকারিতা সম্পর্কে বলা হয়েছে। যারা পরিবেশ নিয়ে চিন্তা করে ও সচেতন তারা সহজেই বিষয়টি বুঝে এই পণ্য সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা নিয়ে ব্যাগগুলো নিচ্ছেন। বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতে এই পলিথিন পাঠিয়েছি। সেখানে ভালো সাড়া পেয়েছি। আরও কয়েকটি দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারাও নিতে আগ্রহী। এর মধ্যে রয়েছে ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডস, কানাডা ও ইউএসএ। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে অর্ডার পাব। আর অর্ডার পেলে পরিবেশবান্ধব এই পলিথিন রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এটি বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে বলেও মনে করেন এই উদ্যোক্ত।

এই পলিব্যাগগুলো ব্যবহার করছে রাজশাহী মাস্টার শেফ রেস্টুরেন্ট। রেস্টুরেন্টির মালিক সিহাব উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মানুষ তো পণ্যের সাথে ফ্রি পলিথিন পান। তাহলে কেন কিনে নেবেন। তবে আমরা নেটের ব্যাগ ও টিস্যু ব্যাগগুলো ব্যবহার করি। সেগুলোর চেয়ে কিছু হলেও সাশ্রয়ী ও দেখতে স্মার্ট লাগে।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটি অনেক ভালো উদ্যোগ। পরিবেশ বান্ধব জিনিস। যেটি কিছু দিন পরে পচে যাবে এবং সার তৈরি হবে। আমাদের এই ধরনের পরিবশবান্ধব পলিব্যাগ ব্যবহার করা দরকার। পরিবেশ রক্ষায় এই ধরনের কারখানা তৈরিতে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে।

মে  ১৯, ২০২৩ at ১৯:৩০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর