বাজারে দিনাজপুরের ‘অপরিপক্ব’ লিচু

ছবি- সংগৃহীত।

টানা তাপপ্রবাহের কারণে ফলনে বিপর্যয় ঢেকাতে ‘অপরিপক্ব’ অবস্থায় লিচু বাজারজাত শুরু করেছে ব্যবসায়ীরা। বেশি দামের আশায় পাকার আগেই লিচু বাজারে এনেছেন বিক্রেতারা।

অপরিপক্ব লিচুতে স্বাদ নেই, বরং টক। এ লিচু স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, কোনোভাবেই এ লিচু শিশুদের হাতে দেওয়া যাবে না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মে মাসের ২৫ তারিখের পর বাজারে আসবে মাদ্রাজি লিচু। জুন মাসের ১৫ তারিখের পর বাজারে আসবে বেদানা জাতের লিচু, ২৫ জুনের পর বোম্বে এবং এর পরের সপ্তাহে চায়না থ্রি লিচু বাজারে আসবে। সবশেষে বাজারে আসবে কাঁঠালি ও মোজাফ্ফর লিচু।

গত সপ্তাহ থেকেই দিনাজপুরের বাজারে উঠেছে লিচু। জেলার কালিতলা, বাহাদুরবাজার ও হকার্স মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় লিচু বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। মাদ্রাজি জাত বলে একশ পিস লিচু ২২০-২৫০ টাকায় বিক্রি করছেন তারা। এসব লিচুর স্বাদ যারা নিয়েছেন কিংবা খেয়েছেন তারা বলছেন, এখনো টক, মিষ্টি হয়নি। আঁটি ভরপুর হয়নি। তবু নতুন ফল হিসেবে অনেকে কিনছে।

হকার্স মার্কেটের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, সবুজ ও লালচে লিচু নিয়ে বসেছেন কয়েকজন ফল বিক্রেতা। হাঁকডাক ছেড়ে তাদের বলতে শোনা যায়, ভালো খেতে চাইলে আসেন, লিচু নিয়ে যান। দিনাজপুরের লিচু মিষ্টতায় ভরপুর, দাম মাত্র ২৫০ টাকা। এভাবেই ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন তারা।

বাগান থেকে লিচু এনেছেন দাবি করে বাহাদুরবাজার এলাকার লিচু বিক্রেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, এবার বাগানে ফল কম। তবে চাহিদা আছে। সামনে আরও দাম বাড়বে। আবহাওয়ার কারণে এবার আগেভাগেই লিচু পেকেছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোপুরি পাকবে। লিচুতে ফরমালিন কিংবা কীটনাশক দেওয়া হয় না। তবে বাজারে আসা লিচুতে মিষ্টতা কম, একটু টক। কয়েকদিন পর আর টক লাগবে না, পাকলে পুরোপুরি মিষ্টি হবে।

লিচু বিক্রেতা রহিম উদ্দিন বলেন, এবার এক সপ্তাহ আগে লিচু পেকেছে, বৃষ্টি নেই, প্রচণ্ড রোদ। এই তাপে লিচু পেকেছে। ১০০ লিচু ২২০-২৫০ টাকা বিক্রি করছি। তিন ঝুড়ি ঢাকায় পাঠিয়েছি। সেখান থেকে বিক্রি হবে। এছাড়া অনেকে লিচু কিনে ঢাকা, সিলেট, রংপুর ও গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছেন।

ক্রেতা রেজাউল করিম বলেন, নতুন ফল বাজারে উঠেছে, তাই ৫০টি কিনলাম ১২৫ টাকায়। খেয়ে দেখেছি, টক। টক হলেও সমস্যা নেই, ভিটামিন সি। পরিবারের সবাই খাবে, খুশি হবে।

জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি অপরিপক্ব কি না তা আমার জানা নেই। দাম একটু বেশি, তবু নতুন ফল দেখে কিনলাম।

বাহাদুর বাজার এলাকার রিপন ফল ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী মো. রিপন বলেন, এখনো স্থানীয় লিচু পাকেনি। তবে বাজারে উঠেছে। দাম বেশি। আমরা ১৯০ টাকায় কিনে একশ লিচু বিক্রি করছি ২২০-২৫০ টাকায়।

জানতে চাইলে জেলা সিভিল সার্জন ডা. এ এইচ এম বোরহান-উল-ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, অপরিপক্ব লিচু স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অপরিপক্ব লিচুতে এক প্রকার এনজাইম থাকে। এনজাইমের কারণে পেটে ব্যথা, মাথা ব্যথা ও যে কেউ অসুস্থ হতে পারে। খালি পেটে বেশি খেলে মৃত্যুও হতে পারে। তাই অপরিপক্ব লিচু না খাওয়াই ভালো। বিশেষ করে শিশুদের কাছ থেকে দূরে রাখতে হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নূরুজ্জামান বলেন, দিনাজপুরে এ বছর প্রায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে লিচু আবাদ হয়েছে। আরও এক সপ্তাহ পর লিচু পাকবে। তাপমাত্রা বেশি থাকায় সেচ দিতে বলা হচ্ছে চাষিদের।

তিনি বলেন, অতিরিক্ত তাপের কারণে গাছেই লিচুর চামড়া পুড়ে ও ফেটে যাচ্ছে। আবার কোথাও লিচু শুকিয়ে মাটিতে ঝরে পড়ছে। লিচুর দানা বড় ও পরিপক্ব হতে আরও ১০ থেকে ১২ দিন সময় প্রয়োজন। কিন্তু প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে পরিপক্ব হওয়ার আগেই পাকতে শুরু করেছে লিচু। লিচু আকারে এখনো ছোট। বৃষ্টি দেরিতে হওয়ায় লিচুর দানাও ছোট হয়েছে।

মে  ১৯, ২০২৩ at ১৮:২৬:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর