বাঁশের বেড়ায় মুক্তিযোদ্ধাসহ বন্দি অর্ধশত পরিবার

গোপালঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় বাঁশের বেড়া দিয়ে অর্ধশত পরিবারের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে এলাকার এক প্রভাশালী ব্যক্তি। এই বাঁশের বেড়া দেওয়ার কারণে একটি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারসহ প্রায় অর্ধশত পরিবারের লোকজন এখন ঘর বন্দি হয়ে পড়েছে। পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে এই বন্দি দশা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।
আজ রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে উপজেলার রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের নারিকেল বাড়ি গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে এ ঘটনা দেখা যায়।
জানাগেছে, গত ৫বছর আগে রাধাগঞ্জ-পিড়ারবাড়ি সড়কের ২নং ব্রিজের পূর্ব পাশ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. অনিল দত্তের বাড়ি পর্যন্ত রাধাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মাটি দ্বারা একটি রাস্তা নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে এই রাস্তাটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে এইচবিবি (ইটের রাস্তা) করা হয়েছে।
এই রাস্তা দিয়ে নারিকেল বাড়ি গ্রামের দত্তবাড়ি, মহুরী বাড়ি, হালদার বাড়ির প্রায় অর্ধশত পরিবারের লোকজন যাতায়েত করতো।
নারিকেল বাড়ি গ্রামের মৃত সুনীল ঘরজার ছেলে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি মোশী বাবুল ঘরজা লোকজন নিয়ে বাঁশের বেড়া দিয়ে অর্ধশত পরিবারের যাতায়াতের এই রাস্তাটি বন্ধ করে দেয়।
রাধাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অমৃত হালদার বলেন, এই রাস্তাটি ৫বছর আগে আমি চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় প্রথমে পরিষদের পক্ষ থেকে মাটি দ্বারা নির্মাণ করে দিয়ে ছিলাম। পরবর্তীতে এলজিইডি থেকে এই মাটির রাস্তাটি ইট দিয়ে নির্মাণ করা হয়। এই রাস্তার যখন কাজ চলে তখন মোশী বাবুল ঘরজা কোন প্রকার বাঁধা প্রদান করেনি। এখন তিনি রাস্তাটির কিছু অংশের জায়গা নিজের দাবি করে রাস্তায় বাঁশের বেড়া দিয়েছে। তার এই কাজটি কোন ভাবেই ঠিক হয়নি।
নারিকেল বাড়ি গ্রামের ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বলেন, সরকারি জায়গার উপর দিয়ে এই রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছে। রাস্তাটি দিয়ে আমরা এলাকার অর্ধশত পরিবারের লোকজন যাতায়াত করি। রাস্তায় বেড়া দেওয়ার কারণে আমরা এখন ঘর বন্দি হয়ে পড়েছি। এই বন্দি দশা থেকে মুক্তির জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
একই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. অনিল দত্ত আক্ষেপ করে বলেন, জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে এই দেশকে স্বাধীন করেছি। স্বাধীনতার পরে ৪০ বছর চিকিৎসা পেশায় থেকে মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখে ছিলাম। বরিশালের সিভিল সার্জন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর খুলনা বিভাগের পরিচালকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকুরী করে মানুষের উপকার করেছি। এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছি। আজ স্বাধীনতার ৫২ বছর পরে আমার বাড়ি যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে  দেওয়া হয়েছে। আমি এর সঠিক সমাধান চাই।
এ বিষয়ে মোশী বাবুল ঘরজার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, যেখান থেকে রাস্তা শুরু হয়েছে সেই জায়গাটি আমার। আমি আমার জায়গায় বাঁশের বেড়া দিয়েছি। এর জন্য যদি কারো ভোগান্তির শিকার হতে হয় তাহলে আমার কিছু করার নেই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, সরকারি অর্থায়ণে নির্মিত রাস্তায় বেড়া দিয়ে মানুষের যাতায়াতের পথ বন্ধ করা গুরুতর অপরাধ। বিষয়টি যদি সঠিক হয়ে থাকে তাহলে মোশী বাবুল ঘরজার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দেশদর্পণ/সুআ/দুবি/ইর